দার্শনিক সিডনি মরগেনবেসারের উইট

এক

সিডনি মরগেনবেসার ছিলেন একজন আমেরিকান দার্শনিক। তিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াইতেন। তার সম্পর্কে অনেক মজার কাহিনী প্রচলিত আছে, বা তিনি অনেক মজার কাহিনীর জন্ম দিতেন। 

একটা ঘটনা এইরকম। অক্সফোর্ড ভাষাতাত্ত্বিক দার্শনিক যে এল অস্টিন একবার একটা লেকচার দিতেছিলেন।  ডাবল পজেটিভ মিনিং বিষয়ে তিনি বলতেছিলেন, এইরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে ইংরাজি ভাষায় যেইখানে ডাবল নেগেটিভ এর অর্থ পজেটিভ হইতেছে কিন্তু  একটাও উদাহরণ মিলবে না কোন ভাষায় যেইখানে ডাবল পজেটিভের অর্থ নেগেটিভ হয়। 

শ্রোতাদের মধ্যে বইসা ছিলেন অধ্যাপক সিডনি মরগেনবেসার। তিনি জোরে বইলা উঠলেন, ইয়েহ ইয়েহ!

যেইখানে তার ডাবল পজেটিভ, “ইয়েস ইয়েস” আসলে নেগেটিভ অর্থে ব্যবহৃত।

দুই

একবার নিউ ইয়র্কের সাবওয়ে স্টেশন থেকে বের হইয়া যাইতেছেন মরগেনবেসার। মুখে পাইপ দিছেন। এর মাঝে একজন পুলিশ আসলো। আইসা বলল, সাবওয়েতে ধুমপান নিষেধ। 

মরগেনবেসার তারে বললেন, আমি বের হইয়া যাইতেছি আর পাইপটা এখনো ধরানো হয় নাই। 

পুলিশ আবার তারে একই কথা বলল। ধুমপান নিষেধ। 

মরগেনবেসার আবার তাকে আগের উত্তরটাই দিলেন। 

তখন পুলিশ বললো, “দেখেন আপনারে যদি আমি এটা করতে দেই তাইলে সবাইরেই করতে দিতে হবে।“

মরগেনবেসার তখন বলে বসলেন, নিজেরে কী মনে করতেছেন আপনে, কান্ট? 

মরগেনবাস বুঝাইছিলেন দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট। যিনি এথিক্সের দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ, এবং ক্যাটেগোরিক্যাল ইম্পারেটিভ এর ধারণা নিয়া আসছিলেন, যেটি কান্টিয়ান এথিক্সের মূল জায়গা। সহজ ভাষায় এটা হইল, এমন কিছু আপনি করতে পারবেন না নৈতিকভাবে, যেইটা সবাইরে আপনে করতে দিতে পারেন না। যেমন, আপনে গিয়া আরেকজনের পকেট থেকে মানিব্যাগ চুরি করতে পারবেন না, কারণ এইটা ইউনিভার্সাল ল হোক, মানে সবাই এইটা করুক তা আপনে চাইবেন না। তখন আর সামাজিক শৃঙ্খলা থাকে না। 

পুলিশ যখন বলছিল আপনারে দিলে সবাইরে দিতে হবে, এর সাথে কান্টিয়ান এথিক্সের মিল পাইয়াই মরগেনবেসার বলছিলেন, তুমি কান্ট নাকি? 

কিন্তু পুলিশ কে এ এন টি এর কান্ট না ভাইবা ভাবলো সি ইউ এন টি এর কান্ট। যেটার অর্থ হয় শাউয়া। এবং যেটা একটা খারাপ গালি। 

ধুম করে এক লোক পুলিশরে এই গালি দিয়া ফেলবে আর পুলিশ সহ্য করবে এমন হয় না। মরগেনবেসাররে থানায় নিয়ে যাওয়া হইল। 

আর সেখানে বইসা তারে বুঝাইতে হইল কান্টের এথিক্স এবং তিনি কোন কান্ট বুঝাইছেন। এরপর ছাড়া পাইলেন। 

এই জিনিস মজার হইলেও ভাষা নিয়া একটা চিন্তা আনে আমাদের সামনে। কোন শব্দের অর্থ আমরা আমাদের জানাশোনা ও অভিজ্ঞতার আলোকেই বুইঝা নেই। 

এখানে আরেকটা উদাহরণ মনে পড়লো। 

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুমানের নামের মাঝখানের এস এর কোন মিনিং নাই। খালি এস ই। নাম রাখার সময় ট্রুমানের বাপ তার দাদা এন্ড্রু শিপ এর নামানুসারে রাখতে চাইছিলেন, আর মা রাখতে চাইছিলেন তার বাপ সলোমন ইয়ং এর নামানুসারে। তারা একমত হইতে পারেন নাই। ফলে হ্যারি এস ট্রুমানের মাঝখানের এস খালি এস হিসাবেই থাকে। 

শব্দের মিনিং এর ক্ষেত্রে চিন্তা করতে গিয়া, ভাবি যদি, এক পক্ষের কাছে এস এর অর্থ শিপ। আরেক পক্ষের কাছে এস এর  অর্থ সলোমন। অক্ষর কিন্তু একই, বদলায় নাই। কিন্তু তারে কীভাবে কে গ্রহণ করতেছে সেইটার উপর নির্ভর করে অর্থ বদলাইতেছে। 

সিডনি মরগেনবেসার

তিন

একবার এক ছাত্র মরগেনবেসারকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি চেয়ারম্যান মাও এর কথা, ‘কোন বাক্য একইসাথে সত্য ও মিথ্যা হইতে পারে’, এর সাথে একমত?

মরগেনবেসার বললেন, হ্যা একমত, এবং আবার একমত না। 

চার

১৯৬০   ক্যাম্পাসে প্রটেস্ট হইতেছে। সিডনি মরগেনবেসারও সেইখানে আছে। পুলিশের একটা লাটির বাড়ি পড়লো তার মাথায়। 

পরে তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনে কি অন্যায় বা অনায্য আচরণের শিকার হইছেন?

মরগেনবেসার বললেন, অন্যায়ের শিকার হইছি কিন্তু অন্যায্য আচরণের না। আমারে ঐখানে তারা অন্যায়ভাবে মারছে এইটা ঠিক। কিন্তু অনায্য ভাবে না, কারণ তারা সবাইরেই মারতেছিল। কোন হারফর ভেদ করে নাই। 

পাঁচ

একবার তারে জিজ্ঞেস করা হইল, আপনে এতো কম লেখলেন কেন?

তিনি উত্তর দিলেন, মূসা নবীও তো একটা বই লেখছেন, এরপর তিনি কী করছিলেন?

নোটঃ এখানে মরগেনবেসার বুঝাইতে চাইছেন যে, নবী মূসা যা করছিলেন, অর্থাৎ বইয়ের প্রচার, সেইটাই তিনি করতেছেন আর বই না লেইখা। 

নোট দুইঃ তবে মরগেনবেসার মাঝে মাঝে দুঃখ প্রকাশ করতেন কম লেখা প্রকাশ করার জন্য, কিন্তু প্রায়ই বলতেন, লেখার ক্ষেত্রে যদি তোমার দাদী ঐ জিনিস জানেন, তাইলে ওইটা পাবলিশ করার কোন মানে নাই।

ছয়

১৮৭০ সালের দিকে প্র্যাগমেটিজম নামের একটি দার্শনিক চিন্তার ধারা আমেরিকায় শুরু হয়। একেবারে সহজভাবে এটি হলো, কোন থিওরির অর্থ নির্ভর করে বাস্তবে এটি কাজ করে কি না এর উপরে। 

একবার মরগেনবেসারকে জিজ্ঞেস করা হলো, প্র্যাগমেটিজম নিয়া আপনার মত কী?

তিনি বললেন, জিনিসটা থিওরিতে ভালো, কিন্তু বাস্তবে কাজ করে না। 

নোটঃ দার্শনিক ব্রায়ান ম্যাগির সাথে সিডনি মরগেনবেসারের একটা কথোপকথন আছে আমেরিকান প্র্যাগমেটিজম নিয়া, ইউটিউবে। 

https://www.youtube.com/watch?v=NVB1OFavfWw

সাত

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সোশিওলজির অধ্যাপক এল্যান সিলভার একবার গেছেন মরগেনবেসারের বাড়িতে, সেখানে একটা পার্টি চলতেছে। মরগেনবেসার সিলভারের  পরনে থাকা শার্টের প্রশংসা করলেন। 

সিলভার নিজের শার্ট খুলে মরগেনবেসারকে উপহার দিয়া দিলেন। 

মরগেনবেসার নিরবে উপহার গ্রহণ করলেন। এ নিয়ে আর কোন কথা বললেন না। 

সিলভারের এইটা খারাপ লাগলো। তিনি ভাবলেন, এতো বড় একটা স্বার্থহীন কাজ করলাম, কোন হিসাব নিকাশ না রাইখা  আর পার্টিতে শার্ট ছাড়া থাকলাম, আর উনি কিছুই বললেন না এইটা নিয়া। আমি মোরাল ক্রেডিটও পাইলাম না। 

অনেক বছর পরে মরগেনবেসার এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন। তিনি বললেন, উনি যেই বড় কাজটা করছিলেন আমি আমার কৃতজ্ঞতা দিয়া উনারে ছোট করতে চাই নাই, ওইটারে প্রতিদানমূলক জায়গায় নামাইতে চাই নাই। 

আট

মরগেনবেসার একবার বলছিলেন, আম্পায়ার আছে তিন ধরণের। 

এক ধরণ হইল রিয়ালিস্ট। যারা বলে “আমি তারা যেমন, তেমনই বলি।” 

আরেক ধরণ, সাবজেক্টিভিস্ট। যারা বলে, “আমি যেমন দেখি তাদের, তেমনই বলি।”  

আরেক ধরণ হইল কনভেনশনালিস্ট। তারা ঘোষণা দেয়, “আমি প্রথমত বলি তারা কেমন, এরপর তারা ওইমত হয়ে যায়।”