মুরাদুল ইসলাম » বই রিভিউ » সাইকোলজিস্ট হেইদি গ্র্যান্টের রেইনফোর্সমেন্টসঃ হাউ টু গেট পিপল টু হেল্প ইউ

সাইকোলজিস্ট হেইদি গ্র্যান্টের রেইনফোর্সমেন্টসঃ হাউ টু গেট পিপল টু হেল্প ইউ

১। আমরা মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে ভয় পাই কারণ আমরা ভয় পাই সে প্রত্যাখান করবে। আমরা অন্যদের কাছে বিরক্তির কারণ হতে চাই না। আমরা যে সাহায্যটি চাচ্ছি তার কথা ভেবে মনে করতে থাকি যে এই কাজটি করতে গিয়ে তার খারাপ লাগতে পারে, সে ব্যস্ত থাকতে পারে। ইত্যাদি কারণে আমরা সাহায্য চাই না বা চাইতে ভয় পাই।

২। কিন্তু মানুষেরা সবাই নিজেদের ভালো মনে করে। আর আমরা জানি ভাল মানুষেরা অন্যদের সাহায্য করে। তাই সাহায্য চাইলে “না” বলা মানুষের পক্ষে সহজ হয় না। কারণ এতে সে তার মূল বিশ্বাস, সে যে একজন ভালো ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে হয় তাকে।

৩। রিসার্চে দেখা গেছে সাহায্য চাইলে সাধারণত মানুষেরা সাহায্য করে। এমনকি সম্পূর্ন অপরিচিত ব্যক্তিও আশাতীত ভালো কোয়ালিটির সাহায্য করে।

৪। কোন মানুষ একবার আমাদের কোন সাহায্য চাওয়াতে ‘না’ বলে দিলে আমরা মনে করতে থাকি সে আমাকে লাইক করে না বা সাহায্য করতে চায় না। কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে। [ পড়তে পারেন – হ্যানলনের রেজর বিষয়ে] হতে পারে ঐ অবস্থায় সে অসুবিধায় ছিল। রিসার্চে দেখা গেছে, একবার যারা না করেছে পরবর্তীতে অন্য বিষয়ে তাদের কাছে সাহায্য চাইলে তারা হ্যা বলে। কারণ এক্ষেত্রে তারা আগের না বলাটাকে পুষিয়ে দিতে চায়। তার ভালো হবার সুযোগ আবার আসে। এখানে সে সম্পর্ক পুননির্মানও করতে চায়।

৫। আমরা ভাবি যে সাহায্য চাইলে তারা আমাদের খারাপ ভাবতে পারে বা আমাদের ব্যাপারে না ভাবতে পারে। কিন্তু ঘটনা এমন নয়। সাহায্য করা মানে সে আপনাকে পছন্দ করল। এবং সাইন্টিফিক প্রমাণ যা আছে তা বলে, সাহায্য চাইলে মানুষ আমাদের বেশি পছন্দ করে, মনে রাখে।

৬। মানুষ চায় না আপনি তাকে ম্যানিপুলেট করুন। তাই সাহায্য চাইতে স্পষ্ট হোন। একটা বলে আপনি অন্য সাহায্য নিচ্ছেন এমন হলে মানুষ তা পছন্দ করবে না। যিনি সাহায্য করছেন তিনি যেন তার স্ব ইচ্ছাতেই করেন।

৭। অনেকে সাহায্য চাওয়ার পর দুঃখিত বা সরি বলেন। এটা হলো নিজের অনুভূতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া। নিজের ইগোকে স্বান্তনা দেয়া। এতে যিনি সাহায্য করেছেন তার খারাপ লাগে। বা সাহায্য চাওয়ার সময় সরি উল্লেখ থাকলে সাহায্য তিনি না করতে পারেন।

৮। সাহায্য পেতে হলে আপনাকে সাহায্য চাইতে হবে। আপনি মনে রেখে দিলে চাওয়াটি কেউ আপনার চোখ দেখে মনের কথা বুঝে সাহায্য করতে আসবে না। মানুষ স্বভাবতই তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সুতরাং, আপনাকে সাহায্য চাইতে হবে। এবং যা চাচ্ছেন তার ব্যাপারে স্পষ্ট হতে হবে।

৯। সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি হোন। মানুষ যদি বুঝতে না পারে আপনি তার কাছ থেকে কী  সাহায্য চাচ্ছেন তাহলে এটি তার জন্য বিরক্তিকর ও বিভ্রান্তিকর। যেমন, আপনি লিংকেডিনে একজন এক্সপার্টকে এড করেছেন, তার কাছে আপনি চাকরি বিষয়ে সাহায্য চান। তাহলে কানেকশন মেসেজে সরাসরি সেটা উল্লেখ করুন। বা কাউকে প্রথমে “আপনি কি আমাকে একটা সাহায্য করতে পারবেন?” জিজ্ঞেস করার চাইতে সরাসরি প্রসঙ্গে চলে যান। এই এই জিনিস আমার দরকার। তারপর বলুন আপনি কি এই ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।

কারণ প্রথমে প্রশ্নটা করলে আপনি আসলে তাকে বললেন না কী সাহায্য চাইবেন। তখন হ্যা বললেও তার সাহায্য না করার সম্ভাবনা বাড়ে। সে ম্যানিপুলেট হয়েছে ভাবতে পারে।

প্রথমে এও বলে নিতে পারেন আপনি নিজে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কী কারণে করতে পারেন নি। যারা নিজেদের সাহায্য করতে চেষ্টা করেছে, সেইসব মানুষদের অন্যরাও সাহায্য করতে চায়।

১০। কোন একটি গ্রুপ মানুষের সামনে সাহায্য চাইলে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা কমে। কারণ এখানে দায়িত্বের ভাগাভাগি হয়ে যায়। সাহায্য চাওয়া সরাসরি একজন মানুষকে লক্ষ্য করে করা হলে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

অন্যকে সাহায্য করা মানুষের আত্মসম্মান বাড়ায় দারুণভাবে। তাই আপনাকে যে সাহায্য করলো তাকে তার আত্মসম্মান বাড়ানোর সুযোগ করে দিলেন আপনি।

এটিই সোশ্যাল সাইকোলজিস্ট হেইদি গ্র্যান্টের রেইনফোর্সমেন্টসঃ হাউ টু গেট পিপল টু হেল্প ইউ এর একটি সারমর্ম।

3 thoughts on “সাইকোলজিস্ট হেইদি গ্র্যান্টের রেইনফোর্সমেন্টসঃ হাউ টু গেট পিপল টু হেল্প ইউ”

  1. লেখাটা ভালো ছিলো। কিন্তু কেউ যখন তার দুঃসময়ে কারো কাছে সাহায্য চায় এবং ঐ ব্যক্তি তার দুঃসময়টার সুযোগ নিয়ে তাকে একদম শেষ করে দেয়, এটা নিয়ে কিছু লেখা আছে? কারণ, ৫-১০% বা ক্ষেত্র বিশেষে এর চেয়েও বেশি এমন ঘটলেও সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা মানুষ ঐ সময়েই খায়, বিশ্বাস হারানোর ধাক্কা, অবিশ্বাসটা তখনই জন্ম নেয়, যার উপর বেইজ করে এই লেখাটা লিখা। কারণ, এ লেখাটার মূলভাবই হলো মানুষ মানুষের কাছে সাহায্য চাইবে এই বিশ্বাসটা অর্জন করতে শিখানো। বিশ্বাস অর্জন করা যখন শিখাতে চাচ্ছে, তাহলে অবিশ্বাসের জন্মটা কোথা থেকে সেটা নিয়েও আলোচনা করতে হবে। না হয় মানুষ দুইটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটের জন্য নিজেকে তৈরী রাখতে পারবে না।

  2. লেখাটি পড়ে স্পষ্ট হলো সাহায্য চাওয়া বিষয়ক ধারণাটা। যখন এক বা একাধিক আপনজন স্বেচ্ছায় একজনকে সাহায্য করতে চায় এবং প্রচার করে বেড়ায় নিজেদের মহত্ত্ব উভয় পক্ষের পরিচিত লোকদের সাথে, তখন সাহায্য গ্রহীতাকে বেশ হীনমন্যতায় ভুগতে হয়। হয়তো এই হীনমন্যতা তার ইগোর সমস্যা। তবু ব্যাপারটা তার জন্য পীড়াদায়ক।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং