স্কোপোলামিনঃ আসল ডেবিল’স ব্রেথ কী?

সাম্প্রতিক কালে ডেভিল’স ব্রেথ নামে এক ড্রাগের কথা শোনা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে এটা হাতে ঘষে দিলে বা মুখে ফুঁ মাইরা দিলে ভিক্টিম ঐ ব্যক্তির কথামতো চলতে শুরু করেন। গল্পে বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে অনেকে টাকা পয়সা হারাইছেন, অনেকে রেপ হইছেন এমন ভয়ংকর অবস্থার কথাও বলা হচ্ছে। 

বলা হচ্ছে স্কোপোলামিন নামক এক ড্রাগ ব্যবহার করে ক্রিমিনালরা এসব করছে। ভিক্টিম পরে কিছুই মনে করতে পারেন না। ফলে তাদের এই ক্রাইম করা ইজি হয়। 

এই ডেভিলস ব্রেথের কাহিনী বেশ পুরান। উৎপত্তি কলম্বিয়ায়। সেইখানে বেসরকারি হিশাবে, প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার লোক এই ড্রাগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যান বলে খবর। 

বগোতার কাছাকাছি জায়গায় এক ধরণের ফুল থেকে এই ড্রাগ তৈরি হয়, এই ফুল আমাদের ধুতরা ফুলের আত্মীয় লাগেন। পুষ্প আপনার জন্য ফুটেন না আমরা বলে থাকি, এই ফুলও কিছু ভালো কাজে লাগেন। 

বিশ শতকের শুরুর দিকে এই ফুলের রস সন্তান জন্মদানের সময়কার পেইন কমাইতে দেয়া হইত। আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন, খ্রিস্টানিটিতে আদমেরে গন্ধম ফল খাওয়ানোর আদিপাপের অপরাধে একসময় নারীদের সন্তান জন্মদানের কালে কোনরূপ ব্যথানাশক দেয়া হইত না। 

যখন সন্তান প্রসবকালে মহিলাদের এই ড্রাগ দেয়া হইত, তখন ডাক্তরেরা দেখলেন যে, এই সময়ে নাকি মহিলারা সত্য উত্তর দেন। এই উদঘাটন প্রভাবে উক্ত ফুলরে সত্য সিরাম বা প্রাচীন সত্য বলা ফ্রুটিকা বানানোর কাঁচামাল ধরা হইল, এবং চেষ্টা চালানো হইল এর মাধ্যমে সত্য সিরাম বানানোর। যা খাইয়া মানুষ খালি সত্য বলবে। এটা কাজ করে নাই কমনসেন্স বলে, করলে আর এত উপায় নিত না আদালত পুলিস সত্য উদঘাটনে। শার্লক হোমসেরা এই সত্য সিরাম খাওয়াই মরিয়ার্টিদের ভেতরকার সত্য বের করে আনতে পারতেন। 

তবে, সি সিকনেস কাটাইতে এই স্কোপোলামিন কার্যকর ওষুধ। পারকিনসন ডিজিজেও নাকি ব্যবহৃত, বাকিটা ডাক্তরেরা বলবেন। 

এই ড্রাগ মুখে ফুঁ দিয়া দিলে, বা হাতে ঘষলে একজন ব্যক্তি কথামতো চলা জোম্বী হয়ে যাবেন, বিশেষজ্ঞরা এইটা বলেন না। 

তাদের কথায়, কেউ যদি কোন ড্রিংকে মিশাইয়া খাইয়া ফেলেন তাহলে তার সাইকোসিস হইতে পারে। হ্যালোসিনেশন হইতে পারে। তিনি আপাত দিশাহারা মুডে চলে যাইতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি অচেতনও থাকতে পারেন। বেশি নিলে তার মরণও হইতে পারে। 

কিন্তু এই জিনিশ কাউরে জোম্বির মত বানাইয়া ফেলবে এমন মনে করেন না এক্সপার্টেরা। তাদের কথা হইল, এটা নিয়া  অনেক বছর ধরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গবেষণা করতেছে, এটা খাওয়াইয়া সত্য বলানি যায় কি না। কিন্তু কার্যকর হয় নাই। কথামত চলতে থাকা জম্বি লাইক অবস্থাও হয় নাই। 

যেই কলম্বিয়ায় এই ড্রাগের ব্যবহার বেশি, সেইখানে প্রকৃত সংখ্যা কত এই ড্রাগ ভিক্টিমের তার বের করা কঠিন। কারণ এই জিনিশ নাকি ১২ ঘণ্টা ব্লাডে থাকে। এবং দেখা গেছে ৭০% ভিক্টিমই  বিদেশী পোলা লোক, যাদের ধনী ভাইবা টার্গেট করা হইছে। ৯৫% ক্ষেত্রেই লুট করে নেয়া টার্গেট, খুব কম, প্রায় ২% সেক্সুয়াল ছিল। বেশীরভাগ ঘটনাই ঘটছে নাইটক্লাবে ও বারে। 

কিন্তু এমনও তো হইতে পারে কিছু ড্রাগ মিশাইয়া আরও শক্তিশালী কিছু বানানো হইছে? 

হইতে তো পারেই। ধরায় কত ড্রাগ আছেন, কত কৌশল আছেন, তাদের সবরে কি আমরা জানি। 

কিন্তু স্কোপোলামিন বিষয়ক গল্পের প্যাটার্ন একই, হক্স স্টোরির মত সময়ে সময়ে সামনে আসা,  এবং এই ড্রাগটা এইভাবে কাজ করে এমন নজির নাই।  

সেইফটির জন্য আপনে অন্যের দেয়া বিড়ি সিগ্রেট মদ পানি খাবেন না। পাবলিক প্লেইসে নিজের পানীয়ের গ্লাস রাইখা ঘুইরা আইসা খাবেন না। বন্ধুবান্ধব সাথে নিয়া চলবেন, রাইতের বেলায় মেইনলি। অপরিচিত লোকরে বিশ্বাস করবেন না সহজে, বিশেষত, বিদেশে গেলে। বগোতায় গেলে আরেকটু কেয়ারফুল থাইকা রাস্তায় ফোনে ইংরাজি বা বিদেশী ভাষায় কথা বলবেন না। এইগুলা মাইনা চলার পরামর্শ দেয় দ্য বগোতা পোস্ট পত্রিকা, ড্রাগস ডটকম। 

রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ক আমার পুরান অবস্থান দিয়া শেষ করি। রিস্ক বিচারের ক্ষেত্রে দেখতে হয় ওইখানে ভুল হইলে আমার ক্ষতি কী হবে।দড়িরে সাপ মনে করতে আমার আপত্তি নাই। কারণ আমি যদি ভুল হই, অর্থাৎ পড়ে থাকা দড়ি যদি দড়িই হয়, তাহলে আমার ক্ষতি নাই। কিন্তু ঐ দড়ির মত বস্তু যদি আসলে সাপ হন, আর উনারে দড়ি ভাইবাই বসি এবং লেজে দিয়া দেই পা, এই ভুলে ক্ষতির আশংকা বেশি। 

আবার দড়িরে সাপ ভাইবা সার্বক্ষণিক অতি ভয়ও ক্ষতিকর, সেইটা প্যারানয়ার দিকে নিতে পারে। 

এবং একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হক্স ও কন্সপিরেসির থিওরির ক্ষেত্রে, এরা যখন প্রচারিত হয়, তখন এদের একটা পলিটিক্স থাকে। এবং সমাজ নিয়াও একটা বার্তা দেয়, সেইদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। এই ফিয়ার উৎপাদন কেন? অন্য কোন ক্রাইমে সুবিধার জন্য? কারা করছে?

আর ব্রেইনওয়াশিং এর ক্ষেত্রে, স্কোপোলামিন ছাড়াও মাঞ্চুরিয়ান ক্যান্ডিডেটদের কাতারে কাতার মিলে, আইডোলজিতে ব্রেইনওয়াশড, যেমনি নাচাও তেমনি নাচি অবস্থায়। আইডোলজির স্কোপোলামিন বহুগুণে ভয়ংকর। জীবনের জন্য ফ্রি চিন্তা খাইয়া দেয়।