হতাশা কি আপনে পুরা দূর করতে পারবেন নিজের লাইফ থেকে?
না।
অসম্ভব জিনিশ।
আমাদের হান্টার গেদারার পূর্বপুরুষ দুইজনের কথা ভাবি। তারা দুইজন গেছিলেন শিকার করতে। দুইজন দুইডা বাইসন মাইরা নিয়া আসলেন।
দলবল নিয়া ভাগাভাগি কইরা খাইলেন।
শিকারি দুইজনের সম্মান বাড়ল গ্রুপে।
দুই শিকারির মধ্যে একজন এতো খুশি হইলেন যে, তার খুশি আর কমে না। তিনি আনন্দে থাকলেন।
আর অন্যজন কয়েকদিন পরে হতাশ হইয়া পড়লেন। তার মনে হইতে লাগল কি যেন নাই। তিনি আবার গেলেন শিকার করতে।
গিয়া আরেকটা বাইসন মাইরা নিয়া আসলেন।
দলবল নিয়া খাইলেন।
এখন, দলের কাছে এই দ্বিতীয় শিকারির সম্মান বাইড়া গেল। তিনি বেশি সঙ্গী পাইলেন, বন্ধু পাইলেন।
যদি তার খুশি না কমত, তাহলে তিনি শিকারে যাইতেন না, আর পরবর্তীতে অধিক ক্ষমতার অধিকারীও হইতেন না।
এইটা, বিবর্তনীয় ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখা, কেন কোন এক সফলতার পরে সেই সুখ আমাদের চিরস্থায়ী হয় না।
কারণ, এই সুখ চিরস্থায়ী হইলে, আমাদের টিকে থাকা কঠিন হইত। দীর্ঘসময়ে আমরা মানুষ হিশাবে টিকতে পারতাম না ব্রহ্মাণ্ডে।
মোটিভেশনের যেমন এক কাজ আছে, তেমনি হতাশা বা দুশ্চিন্তাও কোন একটা কাজের জন্য অথবা কাজের ফল। যেমন আপনে শিকারে গেলে, বাইসন পাইবেন কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার ব্যাপার চলে আসে।
যিনি শিকারে যান নাই, ফুল পাখি নিয়া আছেন, তার সেই দুশ্চিন্তার জায়গা নাই।
ফলে, একশভাগ হতাশা থাকবে না, একশভাগ দুশ্চিন্তা থাকবে না, একশভাগ দ্বিধা থাকবে না, এগুলা ভুয়া চিন্তা।
এইসব জিনিশ রোবটে সম্ভব, যদি উনারে ওইভাবে প্রোগ্রাম করা হয়।
সমস্যা হইল, মাত্রাতিরিক্ত হলে। তা মোটিভেশনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মাত্রার অতিরিক্ত মোটিভেশন ভালো হবে না।
কেউ হতাশ হইলে, সেটা যদি এতো বেশি হয় যে, তার স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত হইতেছে, সেইটারে মানসিক সমস্যা ধরতে হবে। মানসিক সমস্যা স্টিগমার কিছু না। আমাদের ঘাড়ের উপর যেহেতু মাথা নামক এক বস্তু আছে, এবং তার ভেতরে ব্রেইন আছেন, তাই সবারই মানসিক সমস্যা হইতে পারে।
হতাশায় স্বাভাবিক জীবন যাপনে ঝামেলা হইলে ঐটারেই আমরা মানসিক রোগ বা সমস্যা বলি। পেট খারাপ হইলে যেমন ওইটারেও শারীরিক রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যা বলি।
রোগরে নিরাময়ের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নানা প্রক্রিয়া আছে।
যেকোন ধরণের রোগে আমরা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের শরণ নেই, মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রেও একই জিনিশ।
অন্য আরেক ধরণের হতাশা, যেইটা মানসিক রোগের পর্যায়ে পড়ার মত তীব্র না, কিন্তু দেখা যায় যে, ব্যক্তির ক্ষতি করতেছে।
এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি তার নিজের লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে দেখতে পারেন, এই হতাশা যায় কি না।
কখনো এইটা হয়, পরিবেশের প্রভাব।
কখনো, জাস্ট অনিশ্চয়তার জন্য, বা নিজের নিয়ন্ত্রণে নাই এমন কিছু জিনিশের প্রভাবে। কখনো হয়ত ভুল চিন্তায়।
লাইফে হতাশ হবার মত প্রচুর জিনিশ আছে। যেমন দেখেন আপনার খাওয়ার টাইমে মনে হইল অনেক লোক খাইতেই পারতেছে না। ঘুমানির টাইমে মনে হইল অনেকে রাস্তায় ঘুমায়। এইগুলা তো সত্যি, ব্রেইন এইসব ভুলাইয়া রাখে যাতে দুঃখ না আসে।
একটা প্রচলিত কথা আছে, লাইফে হ্যাপি থাকতে হইলে ভাবা, আমার তো জুতা নাই, কিন্তু অন্য অনেক লোকের তো পা-ই নাই।
কিন্তু এটা যে মডেলের চিন্তা, তাতে “অন্যরে” ফোকাস করা হয়। অর্থাৎ, আমার হ্যাপি থাকতে অন্যের নাই থাকতে হবে। এটা ভুল চিন্তা।
এবং এই পদ্বতি অকার্যকর হবে। কারণ আরও অনেক “অন্য” থাকবেন ধরায়, যাদের বেশি আছে। যেহেতু আপনি নাই থাকা “অন্যদের” উপর দেখতেছেন, আছে থাকা “অন্যদের” উপরেও চোখ যাবে।
এবং, আরেকটা সমস্যা, আপনে তখন চাইবেন যে, অন্যদের আরও বেশি না থাকুক, আমার জুতা নাই, তাই বের হইলে পা নাই’দের খুঁজতে থাকি।
এইগুলা প্যাথেটিক দশা।
তাহলে বেটার উপায় কী?
কৃতজ্ঞতার বোধ।
নিজের লাইফ নিয়া। এগুলা ‘নিজে‘ সংশ্লিষ্ট হতাশাগুলার সাথে ডিল করতে হেল্প করে। একেবারে নাই করে দেয় না, তার দরকার নাই। স্বাভাবিক হতাশা আসে, কাজ করলে তা আসবেই কারণ সব সময় কাজ মনমত হবে না।
কৃতজ্ঞতার বোধ নিজেরে ফাংশনাল রাখতে হেল্প করে। আর ফাংশনাল থাকলে একসময় স্বাভাবিকভাবেই হতাশা কমে। নানা ধর্ম চিন্তায় এই জিনিশরে গুরুত্ব দেয়া হইছে, সময়রে অভিশাপ দিতে নিষেধ করা হইছে। ভাগ্যের ধারণা আনা, এগুলার মাধ্যমে মানুষরে এক্সট্রিম হতাশার খপ্পর থেকে বাঁচাইয়া ফাংশনাল রাখার উপায় করা হইছে।