যেভাবে ধনী হবেন (ভাগ্যবান না হয়েও)
একটা দেশের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন রিসোর্স হল তার দক্ষ ইয়াং জনশক্তি। এটি থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়। বাংলাদেশে এই জিনিসের অভাব, এবং আমাদের দেশে এখনো দারিদ্রতা বিদ্যমান। দারিদ্রতার নিরসন কল্পে অনেক ধরনের প্রস্তাব আছে। কোনটা রোমান্টিক বিপ্লবী, কোনটা হতাশাবাদী, কোনটা বেশি মাত্রায় রাজনৈতিক আন্দোলন নির্ভর। বাস্তবিক একটি সমাধান হল ওয়েলথ ক্রিয়েট করতে হবে।
ওয়েলথ ক্রিয়েশনের ব্যাপারটিকে কেউ কেউ ভাবেন জিরো সাম গেইম। অর্থাৎ, একজন পাবেন ও একজন হারাবেন। কিন্তু আধুনিক সময়ে এটি হয় না।
যেমন, আপনি একটি সফটওয়ার কোম্পানি বানালেন। আপনারা ওয়ার্ডপ্রেসের প্লাগিন বানান। সারা বিশ্বে বিক্রি করেন। এতে দেশের মানুষের কোন ক্ষতি হল কী? না, উপরন্তু অনেক মানুষের কর্মসংস্থান আপনি করতে পারবেন।
শূন্য থেকে ওয়েলথ ক্রিয়েট আপনি করতে পারবেন কোডিং এর মাধ্যমে, ক্রিয়েটিভ লেখালেখি করে, ভিডিও বা পডকাস্ট বানিয়ে, এবং আরো নানা ভাবে।
এই লেখাটি ওয়েলথ ক্রিয়েশন নিয়ে। এটির পয়েন্টগুলি লিখেছেন এঞ্জেল লিস্টের সিইও নাভাল রবিকান্ত। তবে এগুলি অবশ্যই তার মৌলিক আইডিয়া না। বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি এগুলি পেয়েছেন। কিছু আছে তার আইডিয়া, এবং তিনি এর সম্মিলিত রূপ দিয়েছেন ও একেবারে সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। অল্প কথায় এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে অনেক বিজনেস বুকের প্রজ্ঞাংশ।
আমি এখানে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করছি। আইডিয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখবেন এটি আপনার কাজে লাগল কি না সেটাই বিষয়। আপনাকে বসে বসে মৌলিক চিন্তা বানাতে হবে, এমন চিন্তা যারা করেন তারা চিরশিশু।
ভাগ্যবান না হয়ে কীভাবে ধনী হবেন। এখানে ধনী বলতে ওয়েলথের মালিক।
১। আপনি ওয়েলথ খুঁজবেন। টাকা বা স্ট্যাটাস না। ওয়েলথ হলো সেইসব এসেট যা আপনি ঘুমিয়ে থাকলে আপনার হয়ে আয় করবে। যেমন কোন বিজনেস, বা ধরা যাক ইউটিউবে আপনার বিখ্যাত চ্যানেলটি, বা আপনার বিখ্যাত বই।
টাকা কী? টাকা হলো সময় এবং ওয়েলথ ট্রান্সফার করার একটা পদ্বতি, যা আমরা বের করেছি। টাকা সেই কাগজ যা দিয়ে আমরা ফ্রিডম কিনি। আপনার সম্পদ আছে, আপনি বললেন আমাকে এটি দিবেন বিনিময়ে আমি যদি আপনাকে একশো টাকা দেই। আমি আপনাকে একশো টাকা দিলাম, আপনি আমাকে সম্পদটি দিলেন। এভাবে আমরা হস্তান্তর করলাম। হস্তান্তরের মাধ্যম হল টাকা। বা, আপনি বললেন আমার হয়ে দৈনিক দুই ঘন্টা কাজ করবেন একশো টাকার বিনিময়ে। এখানে আমি আপনার সময় কিনলাম টাকা দিয়ে।
এখন স্ট্যাটাস কী?
স্ট্যাটাস হল সমাজের কাল্পনিক স্তরবিণ্যাসে আপনার অবস্থান কী। সামাজিক স্ট্যাটাস।
২। আপনাকে বুঝতে হবে যে নৈতিকভাবে ওয়েলথ তৈরি করা সম্ভব। আপনি যদি মনে মনে ওয়েলথ ঘৃণা করেন তাহলে ওয়েলথ ধরা দিবে না।
সৎভাবে ওয়েলথ তৈরি করা সম্ভব, এই উদাহরণ আমাদের সমাজে কম থাকলেও সামনে এটি বাড়বে। কারণ এখন আপনি আপনার ঘরে বসেই গ্লোবাল মার্কেটে চলে যেতে পারছেন। আপনার ইউটিউবে যারা ইংরেজি ভিডিওটি গ্লোবাল মার্কেটে চলে যাচ্ছে।
আমাদের সমাজে সম্পদকে ঘৃণা করার প্রবণতা আছে। এটি বিশেষত ঈর্ষা থেকে। বাম অনেক বুদ্ধিজীবীদের প্রভাব আছে এতে, যারা নিজেরাই দেখা যাবে বিদেশী এনজিওর সাথে যুক্ত!
৩। যেসব লোকেরা স্ট্যাটাস গেইম খেলছে তাদের ইগনোর করুন। তারা স্ট্যাটাস অর্জন করে যারা ওয়েলথ ক্রিয়েশনের গেইম খেলছে তাদের আক্রমণ করে।
স্ট্যাটাস গেইম হলো, আমি বুদ্ধিজীবী, আমি সমাজের এই সেই, ইত্যাদি বলে নিজের সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর পদ্বতি। এরা ওয়েলথ ক্রিয়েশন করতে থাকা লোক, বা যারা কাজ করছে তাদের আক্রমণ করে নিজেদের স্ট্যাটাস অর্জন করে।
আপনি ওয়েলথ ক্রিয়েশন করতে লাগলে এরা আপনাকে এটাক করবে।
স্ট্যাটাস গেইম ইজি। এজন্য দেখবেন সবাই ফেইসবুকে সমালোচনা করে বুদ্ধিজীবী হতে চায়। কিন্তু কন্সট্রাকটিভ কাজ কয়জন করে?
এই ইজি মর্যাদার গেইম আপনাকে প্রলুব্ধ করতে পারে। এতে পড়ে গেলে, এই ফেইক মর্যাদার বোধ কাটতে কাটতে অনেক দেরী হয়ে যেতে পারে।
নিজের অবস্থান বুঝুন ও সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। স্ট্যাটাস গেইম অন্তঃসারশূন্য। গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার কাজ।
৪। সময় ভাড়া দিয়ে আপনি সম্পদশালী হতে পারবেন না। আপনাকে কোন বিজনেসের মালিক হতে হবে আপনার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের জন্য।
এই কথা আমি আমার অফিসে, ভরা মজলিশে, সিওও কে পাশে রেখে বলেছিলাম। যে চাকরি করে আপনারা কেউ ধনী হতে পারবেন না। কারণ এটি সত্যি, ও আমি বিশ্বাস করি।
কিন্তু চাকরি হয়ত আপনাকে করতে হবে স্কিলের জন্য বা প্রাথমিক টাকার জন্য। তাও, সব সময় মাথায় রাখতে হবে ইকুইটি বা বিজনেস অংশের মালিক হবার কথা।
৫। এমন জিনিস যা সমাজ চায়, যা কীভাবে পাবে সে জানেনা – তা আপনি সমাজকে দিয়ে ধনী হতে পারবেন।
যেমন, আলফ্রেড নোবেল দিয়েছিলেন ডিনামাইট। তখন সমাজের চাহিদা ছিল ডিনামাইট। আপনি এরকম চাহিদা আছে এমন কিছু দিয়ে ধনী হতে পারবেন।
৬। এমন একটি ইন্ডাস্ট্রি চয়েজ করুন যেখানে লং টার্ম আপনি খেলতে পারবেন, লং টার্ম পিপলদের সাথে।
আমি লং টার্মে বিশ্বাসী। ধরেন, আপনার কাছ থেকে আমি আলু কিনি। আগামী দশ বছর আপনার কাছ থেকে আলু কিনব। সেক্ষেত্রে আপনি আমাকে পচা আলু দিবেন না। কারণ আমাদের বিজনেস একদিনের না, লং টার্মের।
লং টার্মে চিন্তা করলেই মানুষ নৈতিক আচরণ করে।
আপনি এক কোম্পানিতে কাজ করেন, সেখানকার কোন ক্ষতি সাধারণত আপনি করবেন না যদি তাদের সাথে আপনার লং টার্মে সম্পর্ক তৈরির সুযোগ থাকে।
মানুষের সাথে আচার ব্যবহার ও সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এজন্য হয় লং টার্ম সম্পর্ক, নয়ত কোন সম্পর্কই নয়।
ইন্ডাস্ট্রি চয়েজ করার ক্ষেত্রেও সেটি চয়েজ করুন যেখানে আপনি দীর্ঘদিন কাজ করতে পারবেন।
৭। ইন্টারনেট ম্যাসিভলি প্রশস্ত করে দিয়েছে কেরিয়ার সম্ভাবনা। বেশিরভাগ মানুষ এখনো তা বুঝতে পারে নি।
এটি আমি অনেক বছর আগেই বুঝতে পারি। তাই আমার কেরিয়ার একাডেমিক পড়ালেখা অনুযায়ী হয় নি। পড়েছি সিভিল এঞ্জিনিয়ারিং, কাজ করেছি বিজনেস এনালিস্ট- গ্রোথ হ্যাকার হিসেবে। এর কারণ ইন্টারনেট।
এই যে আমার সাইট, এই সাইট কাজ করেছে আমার সিভি হিসেবে। আর এখানেও আমার যা লেখালেখি ও ইনসাইট আছে তা আমি পড়েছি ইন্টারনেটের সাহায্যে।
আমি গ্রোথ হ্যাকার, এসইও স্পেশালিস্ট, কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি বিস্তারিত সেক্টরে অনায়াসে কাজ করতে পারব, কারণ এগুলি আমি শিখেছি দীর্ঘদিন ধরে। যেহেতু কেউ আমাকে এগুলি শিখতে বলে নি, কেবল নিজের আগ্রহে শিখেছি তাই এর ডেপথ হয়েছে ভালো।
এইরকম অনেক কেরিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সবার জন্য। আপনাকে ঠিকমত ইন্টারনেটকে কাজে লাগাতে হবে। কেবল ফেইসবুকে বুদ্ধিজীবী সাজা, বইপোকা হওয়া বা রেস্টুরেন্টে খেয়ে ছবি দেয়ার স্ট্যাটাস গেইমে আটকে থাকলে হবে না। ইন্টারনেট- সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা ইউজড হওয়া খারাপ, কিন্তু নিজের প্রয়োজনে ইউজ করা ভালো।
৮। প্লে ইটারেটেড গেইমস। জীবনে সব ভালো জিনিস, তা সুস্বাস্থ্য বলেন, জ্ঞান বলেন আর সু সম্পর্কই বলেন, সব কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট।
ইটারেট মানে পুনরুক্তি বা বার বার। আপনি জ্ঞানি হতে চান বই পড়ে? তা একদিন এক ঘন্টা পড়লেই হবে না। আট বছর ধরে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে পড়ে যান। আট বছর পরে পরিবর্তন দেখে বিস্মিত হয়ে যাবেন।
ভালো বডি বানাতে চান? একদিন জিমে গিয়ে তিন ঘন্টা ডাম্বেল মারলে হবে না। নিয়ম করে প্রতিদিন চল্লিশ মিনিট জিমে ব্যয় করেন। খাবার খান ভালো, রেস্ট নেন। কয়েক বছর পর দেখবেন পরিবর্তন।
সম্পর্কও এমন। আপনি আপনার বউ বা গার্লফ্রেন্ডকে একদিন লাভ ইউ বললে হবে না। মায়ের খবর একদিন নিলে হবে না। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ভাবে নিয়ে যেতে হবে। তখন দেখবেন সম্পর্ক কেমন বেটার অবস্থায় চলে যাচ্ছে।
এগুলি কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টের মত বাড়ে। আইনস্টাইন কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টকে বলেছিলেন দুনিয়ার অষ্টম আশ্চর্য।
একটা কথিত গল্প দিয়ে কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট বুঝানো যায়।
দাবা খেলা যিনি আবিষ্কার করলেন, রাজা ঘোষনা দিলেন তাকে পুরস্কৃত করবেন। এই লোককে ডেকে আনা হলো। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী চাও?
লোক বলল, মহারাজ দাবার বোর্ডে এক ঘরে একটা, তার পরের ঘরে এর দ্বিগুণ এভাবে আমাকে শষ্য দিন।
অবাক হলেন রাজা। এই লোক কেবল মাত্র শষ্য চায়!
কিন্তু দেয়ার সময় দেখা গেল বোর্ডের মাঝামাঝি যেতেই রাজার ফতুর হবার জোগাড়।
কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টে জ্ঞান এভাবে বাড়ে। স্কিল এভাবে বাড়ে। আগের জ্ঞান ও স্কিলের সাথে এড হয়।
সাঁতার শেখা টাফ। কিন্তু সাঁতার শেখার পর উলটা হয়ে সাঁতরে আসার প্রক্রিয়াটা শেখা অত টাফ হয় না। কারণ আগের স্কিল এতে সাহায্য করে।
৯। উচ্চ বুদ্ধিমত্তা, এনার্জি ও সর্বোপরি ইন্টেগ্রিটি ওয়ালা লোককে বিজনেস পার্টনার হিসেবে চয়েজ করুন।
আমার যখন প্রথম চাকরি দিবস সেদিন দুই ফাউন্ডার বসের সাথে বসেছিলাম। তারা আমাকে বলছিলেন যে আমার পজিশনে সততার দরকার আছে কারণ অনেক গোপন ডেটা থাকবে আমার কাছে, ও তারা আমাকে সৎ মনে করেন।
আমি তখন বললাম, আমি সৎ নই, ন্যায়পরায়ণ।
তারা অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন সততার সাথে এর পার্থক্য কী?
বললাম সততা হলো সৎ থাকা, সদা সত্য কথা বলা টাইপের। এটা সহজ। আর ইন্টেগ্রিটি হলো, সৎ থাকা, এবং অসততা দেখলে এর প্রতিবাদ করা। যেমন আমি সৎ থাকব ঠিক আছে, কিন্তু আপনাদের মধ্যেও যদি কোন অসততা দেখি বা অন্যায় দেখি তাইলেও প্রতিবাদ করব।
ইন্টেগ্রিটিকে আমি এভাবে দেখি, ও বুঝি।
বুঝানোর জন্য ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
১০। সিনিক ও পেসিমিস্টদের পার্টনার বানাবেন না। তাদের কথা সেলফ ফুলফিলিং।
সিনিক তথা ঈর্ষক বা ঈর্ষাকাতর এবং হতাশ লোকদের কথাবার্তা সেলফ ফুলফিলিং।
অর্থাৎ, একজন বলল, আমি ব্যর্থ হব, আমি পারি না।
এতে তার মানসিক শক্তি কমে গেল।
ফলে সে ব্যর্থই হলো।
এটা এক ধরণের সেলফ ফুলফিলিং কথা।
অর্থাৎ তার প্রথম অবস্থানের কারণেই, এই অবস্থানটি সত্যি হয়ে উঠে। এমন মানুষ খুবই ক্ষতিকর।
আপনার ভেতরেও এগুলি সে সংক্রমিত করে দিতে পারে।
১১। বিক্রি করতে শিখুন। তৈরি করতে শিখুন। এই দুইটি পারলে আপনাকে থামানো অসম্ভব।
সবচাইতে বড় স্কিল আধুনিক যুগে হলো সেলিং এর স্কিল। পারসুয়েশনের জন্য আপনাকে হিউম্যান সাইকোলজি বুঝতে হবে। আমরা উইডেভসে কন্টেন্ট মার্কেটিং করতাম। প্রতি সপ্তাহে পাঁচ দশটা করে আর্টিকেল পাবলিশ হয়। এগুলি কেন? অন্যদের পড়ানোর জন্য? না, মূল কারণ সেলিং, আমরা প্রোডাক্ট সেল করতে চাইতাম। এরকম সকল কোম্পানি করে। প্রোডাক্ট সেল বা সেলের ক্ষেত্র তৈরি করা তথা ব্র্যান্ডিং।
তৈরি করা বা করানো এবং সেলিং এই দুই জিনিস জানলে আপনি ধনী হয়ে উঠবেন।
১২। আপনার অস্ত্র হবে স্পেসিফিক নলেজ, একাউন্টিবিলিটি ও লেভারেজ।
স্পেসিফিক নলেজ হল নির্দিষ্ট জ্ঞান। এটা হতে পারে কন্টেন্ট মার্কেটিং, হিউম্যান সাইকোলজি বা কোডিং ইত্যাদি যেকোন কিছু নিয়ে।
একাউন্টিবিলিটি মানে দায় নেয়া। এই যে আমি লেখি, এর জন্য অনেকে সমালোচনা করে মাস্টারি বলে, অনেকে আরো কিছু বলবে। আমি না করলে কিছুই এরা বলত না। একাউন্টিবিলিটি মানে এর দায় নেয়া, তাদের এই সুযোগ দেয়া। দাঁড়ানো, সমালোচিত হতে ভয় না পাওয়া।
লেভারেজ মানে সুবিধা নেয়া। এখানে ইন্টারনেট প্রযুক্তি বা জ্ঞানের সুবিধা নেয়া।
১৩। স্পেসিফিক নলেজ অর্জিত হয় আপনার জেনুইন কিওরিওসিটি অনুসরণ করে। যা এখন হট তা অনুসরণ করে নয়।
স্পেসিফিক নলেজ অর্জনের জন্য ঐ বিষয়ে জেনুইন কৌতুহল থাকতে হবে। কারণ তখনই আপনি এটি নিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে পারবেন কিন্তু আপনার মনে হবে খুবই অল্প সময় ধরে কাজ করছেন।
যা এখন হট, যা ট্রেন্ড তা ফলো করলে ঐ বিষয়ে স্পেসিফিক নলেজ অর্জন সম্ভব নয়।
১৪। স্পেসিফিক নলেজ অর্জন আপনার কাছে খেলার মতো মনে হবে, অন্যেরা দেখে ভাববে কঠিন পরিশ্রম।
আপনার কাছে খেলার মত মনে হবে কারণ এটি আপনার অনেক পছন্দের কাজ। এটি হতে পারে সাইকোলজি বা আপনার জেনুইন আগ্রহের বিষয়ে বই পড়া। অন্যেরা ভাববে আপনি পরিশ্রম করে বই পড়ছেন। কিন্তু আপনার কাছে এটি চমৎকার কোন মুভি দেখার মত উপভোগ্য লাগবে।
১৫। স্পেসিফিক নলেজ শেখানো হলে কখনো স্কুলে হয় না, শিক্ষানবিশ প্রক্রিয়ায় হয়।
স্পেসিফিক নলেজের জন্য গুরুর অধীনে শিক্ষানবিশী প্রক্রিয়ায় কাজ করতে হয়। স্কুল থেকে শেখা যায় না।
১৬। স্পেসিফিক নলেজ প্রায়ই হাইলি টেকনিক্যাল বা ক্রিয়েটিভ। এজন্য এগুলি আউটসোর্স করা যায় না বা মেশিন দ্বারা করা যায় না।
যেমন স্টোরি টেলিং, ডিসিশন মেকিং। পারসুয়েশন। এগুলি মেশিন দ্বারা করা যায় না। হুট করে আউটসোর্স করা টাফ।
১৭। দায় নিন, এবং নিজের নামে বিজনেস রিস্ক নিন। সমাজ আপনাকে রেস্পন্সিবিলিটি, ইকুইটি ও লেভারেজ দিয়ে পুরস্কৃত করবে।
অর্থাৎ, বিজনেস রিস্ক নিবেন ও এর দায়ও নিবেন। ভুল হলে অন্যের উপর চাপানো যাবে না। একে বলে স্কিন ইন দ্য গেইম। সমাজে স্কিন ইন দ্য গেইম ছাড়া আপনি কিছু অর্জন করলে ঘৃণার পাত্র হবেন।
দায় নিয়ে রিস্ক নিলে আপনি ইকুইটি পাবেন, সুবিধা বা লেভারেজ পাবেন এবং পাবেন দায়িত্ব।
১৮। আর্কিমিডিস বলেছিলেন, আমাকে যথেষ্ট লম্বা লিভার দাও এবং দাড়ানোর একটু জায়গা দাও, আমি পৃথিবী নড়িয়ে দেব।
এই কথাটি লিভারের ক্ষমতা বা লেভারেজ বুঝার জন্য।
১৯। সম্পদের জন্য আপনার দরকার লেভারেজ। বিজনেস লেভারেজ আসে ক্যাপিটাল থেকে, মানুষ এবং এমন সব প্রোডাক্ট থেকে যেগুলি পুনরোতপাদন করতে খরচ হয় না। যেমন কোড বা মিডিয়া।
মানে আপনি বিজনেস করতে চান, এতে আপনাকে সাহায্য করবে আপনার মূলধন, এবং আপনার হায়ার করা মানুষ, এবং এমন কিছু প্রোডাক্ট যেমন সফটওয়ার, বা পডকাস্ট, যেগুলি রেপ্লিকেশন করা সহজ, এবং খরচ নাই বললেই চলে। এই গুলি ভিন্ন ভিন্ন ধরণের লেভারেজ।
২০। ল্যাবর বা শ্রম লেভারেজ হল কত মানুষ আপনার হয়ে কাজ করছে। এটি সবচাইতে প্রাচীন ও বেশি ইউজ হওয়া লেভারেজ। এটি আপনার মা বাবাকে ইম্প্রেস করতে পারে, এতো লোক আপনার কোম্পানিতে কাজ করছে, কিন্তু এই লেভারেজের পিছনে ছুটে জীবন নষ্ট করবেন না।
২১। ক্যাপিটাল এবং ল্যাবর এমন ধরণের লেভারেজ যার জন্য অন্যের অনুমতি লাগে। যেমন আপনি ক্যাপিটাল রাইজ করবেন, যারা ব্যবসায় ইনভেস্ট করবে তাদের মতের উপর নির্ভর করে। ল্যাবর হিসেবে যারা আপনার হয়ে কাজ করবে এটাও তাদের মতের উপর নির্ভর করে।
সবাই ক্যাপিটালের পেছনে ছুটছে, কিন্তু কারো তো আপনাকে ক্যাপিটাল দিতে হবে। সবাই নেতৃত্ব দিতে ছুটছে, কিন্তু কাউকে তো আপনাকে ফলো করতে হবে।
২২। বিশাল সংখ্যক রোবট ফ্রি আছে আপনার জন্য। এগুলি ব্যবহার করুন।
এখানে বিভিন্ন ডেটা ভিত্তিক সফটওয়ার বুঝানো হচ্ছে।
২৩। যদি আপনি কোড করতে জানেন না, বই লিখেন, ব্লগ লিখেন, ভিডিও বানান, পডকাস্ট বানান।
২৪। লেভারেজ হচ্ছে আপনার সিদ্ধান্তকে বহুগুণে শক্তিশালী করার মাধ্যম।
রাইট সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা একটি সুপারপাওয়ার। লেভারেজ হলো আপনার সেই নেয়া সিদ্ধান্তকে বর্ধিত করার মাধ্যম। আপনি একটা বিজনেসে আপনার ১০০ টাকা ইনভেস্ট করলেন, এর চাইতে অন্যদের কাছ থেকে ইনভেস্টমেন্ট সংগ্রহ করে ১০০০০ টাকা ইনভেস্ট করলেন, কোনটার প্রভাব বেশি হবে? দ্বিতীয়টার। এখানে আপনি ক্যাপিটাল লেভারেজ ব্যবহার করলেন আপনার ইনভেস্টমেন্ট সিদ্ধান্তের প্রভাব বা ইম্প্যাক্ট বাড়াতে।
একইভাবে আপনি একা এক বছর কাজ করার চাইতে নিজের কোম্পানি করে দশ জনের সাথে টিম করে করে এক বছর কাজ করলে ইম্প্যাক্ট বাড়ে আপনার সিদ্ধান্তের। এটা ল্যাবর লেভারেজ।
আপনি একজন বন্ধুকে উপদেশ দিলে তার এক ইম্প্যাক্ট। একই উপদেশ ফেইসবুকে, টুইটারে বা আপনার সাইটে দিলে বহু বহু মানুষের কাছে যায়, অর্থাৎ ইম্প্যাক্ট বহুগুণে বর্ধিত হয়ে যায় লেভারেজ ব্যবহারে।
২৫। জাজমেন্টের (ডিসিশন মেকিং) জন্য দরকার অভিজ্ঞতা, কিন্তু ফাউন্ডেশনাল স্কিল শিখে আপনি দ্রুত তৈরি করতে পারবেন।
২৬। ‘ব্যবসা’ নামে কোন স্কিল নেই। বিজনেস ম্যাগাজিন ও বিজনেস ক্লাস এড়িয়ে চলুন।
২৭। মাইক্রোইকোনমিক্স, গেইম থিওরি, সাইকোলজি, পারসুয়েশন, এথিকস, ম্যাথমেটিকস ও কম্পিউটার স্টাডি করুন।
পারসুয়েশনের জন্য প্রথম বই, রবার্ট চিয়ালদিনীর ইনফ্লুয়েন্স। এছাড়া স্কট এডামস এ বিষয়ে লিখেছেন অনেক।
২৮। পড়া শোনার চাইতে দ্রুত। করা দেখার চাইতে দ্রুত।
২৯। ব্যস্ততা যেন আপনার জীবন উপভোগে সমস্যা হয়ে না দাঁড়ায়।
৩০। নিজের জন্য ঘন্টা হিসেবে একটি পারিশ্রমিক ঠিক করুন। যদি দেখা যায় কোন সমস্যা সমাধান করে এই ঘন্টা রেইটের চেয়ে কম লাভ হবে, তাহলে তা এড়িয়ে যান। যদি দেখা যায় আউটসোর্স করলে আপনার ঘন্টা রেইটের চেয়ে কম খরচ হবে তাহলে আউটসোর্স করুন।
এটি প্রায়োরিটি ঠিক করার জন্য। ঠিক করলেন আপনার ঘন্টা রেইট ১০ ডলার। আপনাকে ফেইসবুকে একজন সমালোচনা করছে বেহুদা। তার উত্তরে আপনার এক ঘন্টা সময় ব্যয় করলে ১০ ডলারের বেশি লাভ হলে তা করুন। কম হলে এড়িয়ে যান।
৩১। যতটা পারা যায় কঠোর পরিশ্রম করুন। যদিও আপনি কী কাজ করছেন, কীভাবে করছেন ও কাদের সাথে করছেন তা কত পরিশ্রম করছেন তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৩২। আপনি যা করেন তাতে পৃথিবীতে সবার সেরা হয়ে উঠুন। এইরকম কিছু না পাওয়া পর্যন্ত আপনার কাজ বদলাতে থাকুন।
এই প্রসঙ্গে বলতে লাক এর কথাটি আসে। এর ধারণাটি মূলত চেজ, চান্স ও ক্রিয়েটিভিটির লেখক ডক্টর জেমস অস্টিনের।
চার ধরণের লাক হয়।
একটি হলো ব্লাইন্ড লাক। হঠাত ঘটে যাওয়া কিছু। এর উপর আমাদের কোন হাত নেই। ফালতু লাক।
দ্বিতীয় হচ্ছে পরিশ্রম করা লাক। আপনি পরিশ্রম করে ক্রিয়েটিভ কাজ ফেইসবুকে আপলোড করছেন। হঠাত একদিন কোন পরিচালক দেখলেন। আপনাকে কাজের অফার দিলেন। এমন লাক।
তৃতীয় প্রকারের লাক হচ্ছে, যেখানে আপনি সুযোগ বুঝতে পারেন। ধরা যাক টেক নিয়ে আপনার পড়ালেখা আছে। ভালো ইনসাইট আছে। তাই আপনি একটি স্টার্ট আপের সম্ভাবনা বুঝতে পারলেন। সেখানে ইনভেস্ট করলেন। এটি বড় হলো। অন্যরা বলবে এটি লাক।
চতুর্থ প্রকারের লাক হচ্ছে সবচেয়ে অদ্ভুত। এটি এমন অদ্ভুত যে, এটি আসবে ও আসছে তা নিশ্চিত থাকেন ব্যক্তি। এটি হলো আপনি যা করেন তাতে সবচাইতে বেস্ট হওয়া। ইউনিক ক্যারেক্টারিস্টিক, ইউনিক স্কিল ইত্যাদি ডেভলাপ করা। তাহলে, ঐসব কাজের দরকারে লাকই আসবে আপনার কাছে।
যেমন ধরা যাক, আপনি গভীর সমুদ্রে ডাইভ দিতে খুবই সেরা। এমন গভীরে যেতে পারেন যা ভাবলেই অন্যরা ভয় পায়। এখন একজন লোক একটা মানচিত্র পেল উপকূলের এক জায়গায় ডুবে যাওয়া পুরনো জাহাজে গুপ্তধন আছে। সেই লোকটি জানে আপনি ছাড়া গুপ্তধন তার হস্তগত হবে না। তাই সে আসবেই আপনার কাছে। বিনিময়ে অর্ধেক অফার করল। এটা যেন অন্যের লাককে নিজের করে নেয়া।
বাস্তব উদাহরণ, আপনার ইন্টিগ্রিটি, নেগোসিয়েশন স্কিল, ডিসিশন মেকিং সবচাইতে সেরা এ তল্লাটে। বড় বড় ডিলের জন্য তাই লোকেরা আসবে আপনার কাছে, আপনি যেন মধ্যস্থতা করে দেন। বিনিময়ে আপনাকে অনেক টাকা দিল।
এই লাক অন্যদের কাছে লাক মনে হবে। কিন্তু আপনি যখন নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছিলেন, তখন আপনি জানতেন লাকই আসছে আপনার কাছে।
এই চতুর্থ ধরণের লাকের জন্য নিজেকে তৈরি করুন
৩৩। দ্রুত ধনী হবার কোন নিয়ম নেই। কখনো দেখে থাকলে জেনে নিবেন এটি আপনাকে ব্যবহার করে অন্য কেউ ধনী হতে চাইছে।
৩৪। আপনি আপনার স্পেসিফিক নলেজ লেভারেজের সাথে ব্যবহার করুন। আপনি যার যোগ্য তা একদিন পেয়ে যাবেন।
৩৫। যেদিন আপনি ওয়েলথি হয়ে যাবেন, সেদিন বুঝতে পারবেন এটি আপনি আসলে খুঁজেন নি। তাহলে কী খুঁজেছিলেন? তা আরেকদিন বলব।
এখানে বুঝানো হয়েছে হ্যাপিনেস, লাইফের মিনিং ইত্যাদির কথা। সম্পদশালী হওয়াই মানুষের একমাত্র আকাঙ্খা হয় না। এজন্য সম্পদশালীরাও নানাবিদ কর্মকান্ড করে হ্যাপি হন, বা মিনিং খুজে নিতে চান।
উপসংহারঃ
আমি এখনো সম্পদশালী লোক নই। তাহলে আমার এই উপদেশমূলক মাস্টারিটি কি হাস্যকর হয় না? প্রশ্নটি খুবই যথাযথ।
এর উত্তর হলো, সম্পদ ক্রিয়েশনের মূলনীতি হিসেবে এখন পর্যন্ত আমি এগুলিকে মানি। এইসব মূলনীতি মেনেই কাজ করি ও করতে চাই। নিজের জন্যই ব্যাখ্যা করে বাংলায় এখানে রাখলাম, যাতে এগুলি আমার আরো বেশি মনে থাকে। এই কারণেই এই ব্লগের প্রায় সব লেখা লিখিত হয়েছে।
আমার অনুসরণ করা এই মূলনীতি বিষয়ে যাদের আগ্রহ থাকবে, যারা এগুলিকে যৌক্তিক ও কাজের মনে করে এর মত কাজ করতে পারবেন হয়ত তাদের ভালো হবে। হয়ত এতে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হবে ও তিনি ওয়েলথ ক্রিয়েশন এবং কেরিয়ারকে ভিন্নভাবে দেখতে সক্ষম হবেন। এগুলি হলে ভালো, নাহলেও খারাপ না।
কোন দেশ কেন ধনী হয়, কোন দেশ কেন দরিদ্র হয়, এটা আমার এক চিন্তার জায়গা। এই সাইটের অনেক লেখাতেই এই প্রসঙ্গ এসেছে, যেমন, এই লেখাটি দ্রষ্টব্য, যেখানে বিজ্ঞানী জ্যারেড ডায়মন্ড কীভাবে কোন দেশ ধনী হয় এ নিয়ে বলেছেন। বা বাংলাদেশ কেন গরীব লেখাটি। বা কেন আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না, প্রসঙ্গে।