লিডারশীপ বিষয়ে স্যাম মানেকশো

ভারতের সাবেক সেনা প্রধান SAM Hormusji Framji Jamshedji Manekshaw। বাংলাদেশ স্বাধীন হয় যে যুদ্ধে সেই যুদ্ধের সময়ে তিনি ছিলেন ভারতের আর্মি প্রধান। পরে তাকে ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শালের স্থান দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

স্যাম বাহাদুরের দুরদর্শীতা ও বিচক্ষণতা, ফিজিক্যাল সাহস এবং নৈতিক সাহস অসাধারণ পর্যায়ের ছিল। এবং তিনি কথা বলতেন সরাসরি ও সে কথার মধ্যে থাকত উইট। একবার নয়টা গুলি খেয়েছিলেন যুদ্ধে, প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী ছিলেন।

বন্ধু ইয়াহিয়া খান তার মোটরবাইক কিনেছিলেন এক হাজার রুপীতে। কিন্তু পাকিস্তান গিয়ে আর টাকা দেন নি। ১৯৭১ এ যুদ্ধে জেতার পর মানেকশো বলেছিলেন, ইয়াহিয়ার কাছে আমি মোটরবাইকের টাকা পেতাম। সে দেয় নি, কিন্তু এবার সেই কারণে দেশের এক অংশ দিতে বাধ্য হলো।

তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি আজ পাকিস্তানের পক্ষে থাকলে যুদ্ধে কী হতো?

অকপটভাবে তিনি বলেছিলেন, কী আর হতো, পাকিস্তান জিততো।

তবে সবচাইতে মজার কথাটি হয়ত ইন্দিরা গান্ধীকে তার বলা উক্তি। এ সম্পর্কে প্রচলিত গল্পটি নিম্নরূপ।

পাকিস্তান যখন বাংলায় ক্র্যাকডাউন শুরু করল ইন্দিরা ও তার মন্ত্রী পরিষদ চাইছিলেন বাংলাদেশে এটাক করতে। মানেকশোকে ডেকে বলা হলো। মানেকশো বললেন, এখন আমি প্রস্তুত না। সামনে বর্ষা নামবে। তখন পূর্ববাংলায় যুদ্ধ করা, রসদ সরবরাহ অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়া অন্যদিক থেকে চীন আক্রমণ করে বসতে পারে। এই রিস্ক আমি নেব না। এটি নেয়া মানে ১০০ ভাগ পরাজয়।

ইন্দিরা ও মন্ত্রী পরিষদ বিব্রত হলেন। অনেকে বুঝাতে চাইলেন। কিন্তু মানেকশো তার অবস্থানে স্থির থাকলেন।

পরে ডিসেম্বরে যখন আবার ইন্দিরা বলেন, আপনি কি যুদ্ধের জন্য রেডি?

তিনি বলেছিলেন, আই এম অলওয়েজ রেডি, সুইটহার্ট।

পার্সি কানেকশনের জন্য (ফিরোজ গান্ধী পার্সি ছিলেন) স্যাম বাহাদুর ইন্দিরা গান্ধীকে সুইটি বা সুইটহার্ট ডাকতেন।

এই প্রচলিত গল্পটি কিছুটা অসত্য। ইন্দিরা গান্ধী আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন শুরুতে যুদ্ধে জড়াবেন না। তার পরামর্শদাতা এই বুদ্ধি তাকে দিয়েছিলেন। কারণ শুরুতে জড়ালে বিশ্ব সমর্থন বিরুদ্ধে চলে যেত। ইন্দিরার ক্যাবিনেটের অনেকে চাইছিলেন যুদ্ধে জড়াতে। তখন ইন্দিরা তার পলিটিক্যাল গেইম খেলেন, মানেকশোকে ডেকে এনে পরামর্শ নেন। অবস্থা এমনভাবে তৈরি করেন যে, স্যাম মানেকশো নিজেও বিশ্বাস করতেন তার পরামর্শেই ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধে জড়ান নি। 

স্যাম বাহাদুরের ইউটিউব লেকচার আছে লিডারশীপ নিয়ে। চমৎকার কথাবার্তা। বিশেষত এই মোটিভেশন বিজনেসের যুগে এমন একজন মানুষ, যিনি সরাসরি তার স্কিন খেলায় রেখে অর্থাৎ ঝুঁকি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তার কাছ থেকে শেখা মানে সবচাইতে সেরা জিনিস শেখা।

লিডাররা জন্মগত না লিডার তৈরি করা যায়, এই বিষয়ে স্যাম মানেকশো লিডার তৈরি করা যায় এর পক্ষে গিয়েছেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন ভারতে ৭০০ মিলিয়নের উপরে লোক আছে, এবং প্রতি বছর ইন্ডিয়া একটি অস্ট্রেলিয়ার হারে জন্ম দিয়ে লোক বাড়াচ্ছে, লিডার জন্ম থেকে হলে ইন্ডিয়ায় লিডারের ক্রাইসিস কেন?

লিডারের ক্রাইসিস বলতে তিনি আবার কেবল পলিটিক্যাল লিডার বুঝান নি। কর্মক্ষেত্রে, সমাজেসহ সব জায়গাতেই লিডারের ক্রাইসিস চলছে ইন্ডিয়ায়, তিনি বলেছিলেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথাটি আরও বেশি সত্য।

স্যাম বাহাদুরের কথা হলো-

একজন লোক দেন যার রিজেনেবল কমনসেন্স ও ডিসেন্সি আছে, আমি তার ভেতর থেকে লিডার তৈরি করে নেব। 

ডিসেন্সি হলো – behaviour that is good, moral, and acceptable in society. 

তারপরে তিনি লিডারের কার্ডিনাল বৈশিষ্ট্যের দিকে গিয়েছেন। এগুলি হলোঃ

১। প্রফেশনাল নলেজ এবং প্রফেশনাল কম্পিটেন্স। 

তার মতে প্রফেশনাল নলেজ অর্জন করতে হয় কষ্ট করে। এটা হলো কন্টিনিউয়াস পড়ালেখা ও স্টাডি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়। আর প্রফেশনাল নলেজ ছাড়া কখনোই প্রফেশনাল কম্পিটেন্স আসবে না।

২। সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা এবং এর সম্পূর্ন দায় দায়িত্ব নেবার মতো শক্তি ও সাহস। 

৩। মোরাল এবং ফিজিক্যাল সাহস। 

৪। লয়ালটি। এটা টু ওয়ে থিং। আপনি যার কাছ থেকে লয়ালটি আশা করেন তাকেও লয়ালটি দিতে হবে।

৫। লিডারশীপ হলো ম্যান এবং রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। তাই লিডারের একটা হিউম্যান টাচ থাকতে হবে। 

আরও দুইটা জিনিশ না থাকলে কেউই লিডার হতে পারবে না,

১। ডিসিপ্লিন 

২। ক্যারেক্টার 

মানেকশোর এই লেকচারটি লিডারশীপ নিয়ে অন্যতম সেরা একটি লেকচার।

ফন্ট বড় করুন-+=