একটা অথোরিটারিয়ান স্টেট কেন প্রোপাগান্ডা চালায়?
সাধারণত আমরা জানি প্রোপাগান্ডা চালানো হয় ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে কনভিন্স করতে, ব্রেইন ওয়াশ করতে এবং পারসুয়েড করতে।
বার বার একই মেসেজ যখন ব্যানারে পোস্টারে বিজ্ঞাপনে নানাভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়, তখন তা মানুষ বিশ্বাস করে ফেলে। প্রোপাগান্ডার এটা এক মেকানিজম।
কিন্তু দেখা যায় অথোরিটারিয়ান স্টেট প্রায়ই খুবই হাস্যকর কিছু প্রোপাগান্ডা চালায়। ধরেন, বিটিভির সংবাদের কথা। দেশে হয়ত কোন আন্দোলন চলছে, অবরোধ করে রেখেছে মানুষ রাস্তা, তখনো হাস্যকর ভাবে তারা অন্য নিউজ পরিবেশন করে।
বা উন্নয়ন কেন্দ্রিক যেসব কথাবার্তা, অনেকগুলাই হাস্যকর। দেখা যায় বাস্তবে মানুষ চিকিৎসা নিতে পারছে না, কিন্তু তারা বলছে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সিংগাপুরের মত, আবার তারা অসুস্থ হলে দেশে চিকিৎসা নিচ্ছে না। প্রকাশ্যেই বিদেশে যাচ্ছে। অর্থাৎ, তাদের প্রোপাগান্ডা বাস্তবের সাথে মিলছে না, এবং সবচাইতে ইন্টারেস্টিং বিষয়, তারা মেলাতেও চাচ্ছে না।
কাউকে পারসুয়েড করতে হলে, মেসেজটা তো কনভিন্সিং হবার কথা। বিশেষত রাষ্ট্রের তো এটা বুঝার কথা। তাহলে, তারা কেন এই হাস্যকর ভাবে প্রোপাগান্ডা চালায়? তারা কেন এমন কথা বলে যেগুলি যে মিথ্যা তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে?
হেইফেং হোয়াং নামের একজন থিংকার এটি নিয়ে ভেবেছেন। প্রোপাগান্ডা এজ সিগনালিং তার গবেষণা প্রবন্ধ।
অথোরিটারিয়ান ষ্টেটের প্রোপাগান্ডার এক উদ্দেশ্য থাকে ব্রেইনওয়াশ করা। কিন্তু আরেক উদ্দেশ্য মানুষদের ক্ষমতা দেখানো। যখন মানুষ দেখতে পারবে এই সরকার হাস্যকর মেসেজও অবলীলায় প্রচার করতে পারে, মন্ত্রীরা যা ইচ্ছা তাই বলে যেতে পারে, এটা পাওয়ারের সিগনাল হিসেবে কাজ করে।
প্রোপাগান্ডার ক্লাসিক ভেতরের মেসেজ হিসেবে আমাদের ধারণাঃ তোমরা বিশ্বাস করো এটা সত্যি, আমরা এভাবেই তোমাদের জন্য কাজ করছি।
প্রোপাগান্ডার আসল ভেতরের মেসেজঃ তোমরা আমাদের মেসেজ বিশ্বাস করলে করো না করলে নাই, কিন্তু আমাদের পাওয়ার দেখো, বিরুদ্ধে যাবার সাহস কইর না।
চাইনিজ সরকারের একটা প্রাইমটাইম সংবাদ আছে। বিটিভির ৮ তার সংবাদের মত। তারা ৭ টায় এটি সব চ্যানেলে প্রচার করে। এর উপস্থাপন হাস্যকর। ফলে সাধারণ মানুষেরা এই নিউজ নিয়ে নিত্য হাসাহাসি করেন।
এই হাস্যকর সংবাদ, যা মানুষ বুঝতেই পারছে মিথ্যা, এটা প্রচার করা হয় চাইনিজ কম্যনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দেখাতে। আর প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্য যখন হবে ক্ষমতা দেখানো, তখন ইচ্ছাকৃত ভাবেই প্রোপাগান্ডাকে হাস্যকর রাখা হবে।
চীনে মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখা গেছে, যারা বলছে এই সংবাদ মিথ্যা, তারা এটাও বলছে সরকার শক্তিশালী। সরকারের বিরুদ্ধে যেতে তারা ভয় পাচ্ছে।
নির্বাচনের সময় যে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হয়, কত পোস্টার ব্যানার। প্রচুর টাকা খরচ হয়। আপনি কি মনে করেন বিজ্ঞাপনের ভাষা মানুষকে কনভিন্স করে?
এই বিজ্ঞাপনগুলির মূল মেসেজ, নিজেদের শক্তিমত্তা দেখানো। এটা হচ্ছে পাবলিকলি, জনগণের সামনে টাকা খরচ, তাদেরকে দেখানো, দেখো আমাদের ক্ষমতা কত।
ইভলুশনারি পয়েন্ট অভ ভিউ থেকে কস্টলি সিগন্যাল, যা অনেক প্রাণী করে থাকে।
কোন কোম্পানি শহরের খুব দামী জায়গায় বিরাট ব্যানার বসাল। এটা তার ফাইনানশিয়াল শক্তিমত্তা দেখাতে।
যখন কোন রাষ্ট্র একই সংবাদ সব চ্যানেলে প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখে, এবং সেই সংবাদ হাস্যকর হয়, তখন, এটাও মেসেজ যায় মিডিয়ার উপর এদের নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান।
এছাড়া সরকার অহেতুক কর্মকাণ্ড, রিচুয়াল আয়োজন করবে। মানুষকে তা করতে বাধ্য করবে। কোন সরকার যদি এবসার্ড ও হাস্যকর কর্মকান্ডে মানুষকে যুক্ত হতে বাধ্য করতে পারে, মানুষ দেখে সবাই যুক্ত হচ্ছে, এটাও সরকারের পাওয়ারের সিগন্যাল দেয়।