শরণার্থী সমস্যা বিষয়ে আমরা পৃথিবীবাসী যে সমাধানটি বের করেছি তা হলো, শরণার্থীদের কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় দেয়া ক্যাম্পে, এবং তাদের নিজভূমিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ফেরত পাঠানো।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এই পদ্বতি আসলে কাজ করে না। জাতিসংঘের হিসাবে মোট শরণার্থীদের ৫০ ভাগের অধিক পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরেই নিজভূমে ফিরতে পারছেন না, শরণার্থী হয়ে আছেন।
শরণার্থী হয়ে থাকার নানাবিদ সমস্যা রয়েছে। যেমন, তারা সেখানে কাজ করতে পারেন না, (করলেও খুবই সীমাবদ্ধ), সম্পত্তি কিনতে পারেন না, নাগরিক অন্যান্য সুবিধাদি পান না ইত্যাদি।
এমতাবস্থায়, এইসব শরণার্থী লোকজনের এক অংশ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার আশংকা বেড়ে যায়।
শরণার্থীদের জন্য চার্টার সিটি বানিয়ে দেয়াকে একটি সমাধান হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এই সিটির কিছু আইনগত স্বাধীনতা থাকবে। এটির নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে ভিন্ন কোন উন্নত দেশ, যা এই সিটি নির্মাণ করবে। এখানে শরণার্থীরা কাজ করতে পারবেন। সম্পত্তি করতে পারবেন। অন্য কোন দেশকে না দিতে চাইলে, এটি ব্যবসায়ী কোন কোম্পানিকে দেয়া যেতে পারে। তারা সামগ্রিক সিটি নির্মাণ করবে।
যে দেশে সিটি হবে, অর্থাৎ যারা আশ্রয় দিয়েছে, তারা আইন শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয় দেখতে পারে, যাতে তাদের সার্বভৌমত্বের উপর কোন আঘাত না হয় এই চার্টার সিটি।
শরণার্থীদের নিয়ে এমন সিটি নির্মাণ করা হবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে মূল ফোকাসে রেখে। আশ্রয়দাতা দেশ ও সাহায্যকারী পার্টি (উন্নত দেশ বা ব্যবসায়ী) মিলে কেমন হবে সেই সিটির নিয়ম কানুন ও কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করবে তা ঠিক করবে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরনার্থী আছেন প্রায় ১০ লাখের বেশি। এদের মিয়ানমারে ফেরানো যাচ্ছে না। কারণ মিয়ানমারে যেসব রোহিংগা ছিলেন তারা এখনো ডিটেনশন ক্যাম্পে ও নানাবিদ বৈষম্যের মধ্যে জীবন যাপন করছেন ওখানে। এমতাবস্থায় এই দশ লাখ লোককে ফেরাবেন কীভাবে?
রোহিংগাদের ফেরাতে মিয়ানমারের উপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের দুই মিত্র দেশ ভারত ও চীন এখানে বাংলাদেশের পক্ষে নেই।
মনে হয় না খুব শীঘ্র রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরানো যাবে, এই ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে। আর পরিবর্তন অচিরে হবে এমন কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
রোহিংগারা বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে যত বেশি দিন থাকবেন, ততো বেশি তাদের যুব সম্প্রদায় জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে বা অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কা থাকে। কারণ এখানে শরণার্থী অবস্থায় তাদের কোন ভবিষ্যত নেই। তারা পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে পাড়ি দেবার চেষ্টা করবেন বা বাংলাদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে চাইবেন।
এসব জিনিস স্বাভাবিক, কারণ শরণার্থী ক্যাম্প আরামদায়ক জায়গা না। সেখানে ভবিষ্যত অনিশ্চিত তাদের।
এই অবস্থায় বাংলাদেশ তাদের জন্য নতুন কোন সিটি তৈরির কথা কি ভাববে? যেটি পড়বে স্পেশাল ইকোনমিক জোনের মধ্যে।
বাইরের দেশের সাহায্য নিতে হলে এক্ষেত্রে আমেরিকার সাহায্য নিতে হবে। বা ইউরোপের। অবশ্যই চীনের সাহায্য নেয়া যাবে না। বেল্ট এবং রোড প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া চীনকে চার্টার সিটি পরিচালনার অফার দিলে তারা লুফে নেবে মনে হচ্ছে। সামনে চীন এ প্রস্তাব দিয়ে ফেলতেও পারে।
আর প্রাইভেটলি কোন ব্যবসায়ী বা সাহায্যকারী লোকদের সাহায্য নিতে হলে, এমন লোকও পাওয়া যাবে। যেমন জর্জ সরোজ এরকম কাজে সাহায্য করে থাকেন।
চার্টার সিটি নিয়ে কাজ করেন সেন্টার ফর ইনোভেটিভ গভর্ননেন্স রিসার্চের ফাউন্ডার ও এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ডক্টর মার্ক লাটার। তার কাজ দেখেই আমি চার্টার সিটি সম্পর্কে জানতে পারি, যদিও এরকম সিটির আইডিয়া মূলে সম্ভবত পল রোমার। রোমার ২০১৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। চার্টার সিটি কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর হতে পারে এ নিয়ে তার এই লেকচারটি দেখতে হবে। এবং এই লেখাটিও দেখা যায়।
বাংলাদেশের রোহিংগা ক্রাইসিস মোকাবেলায় চার্টার সিটি ভালো সমাধান হতে পারে কি না এ নিয়ে আমি আজ মার্ক লাটারকে ইমেইল করেছিলাম। তার উত্তর খুবই পজেটিভ।
বাংলাদেশ কি এ নিয়ে ভাবতে পারে?