মেটাভার্স ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। সেখানে আপনি ক্যারেক্টার হয়ে ঘুরবেন, ফিরবেন, জমি কিনবেন, বিয়ে করবেন, খুন করবেন, সেক্স করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। যেমন ডিসেন্ট্র্যাল্যান্ড গেইম। এমন একটা গেইম বানানো যায় বাংলাদেশ নামে। বিভিন্ন জেলায় উপজেলায় ভাগ থাকবে। ঐ গেইমের নির্দিষ্ট কারেন্সিতে খেলায় অংশগ্রহণকারীরা জায়গা কিনবেন। পরস্পর সম্পর্ক তৈরি করবেন। বিয়া শাদী করবেন।
অগমেন্টেড রিয়ালিটিতে আরও একধাপ এগিয়ে, দুনিয়ার কারো মুখ অন্য কারো উপর বসিয়ে কোন একটিভিটি করা সম্ভব হবে, অথবা যখন ওইরকম চশমা সবার পরা থাকবে তখন আপনি নিজের পছন্দের ছবি নিজের ইমেজ হিসেবে সেট করে রাখতে পারবেন, যেটা অন্যরা দেখতে পাবে।
ধরা যাক সব মানুষ চোখে ওই ধরণের গ্লাস পরছে, এবং রিয়ালিটিকে বদলে দেখছে। সেটাই তখন স্বাভাবিক অবস্থা, এখন যেমন মোবাইল ডিভাইস। ধরা যাক, তখন সালমান খানের ফেইস হচ্ছে পুরুষদের জন্য সবচাইতে আকাঙ্ক্ষিত অত্র অঞ্চলে। তখন রাস্তায় বের হলে আপনি খালি সালমান খানের চেহারার মত লোক দেখতে পারেন। তারা ওইরকম চেহারা সেট করতে রাখতে পারে তাদের প্রোফাইলে, আপনার গ্লাসে ঐটাই দেখা দিবে।
বা নির্দিষ্ট ধরণের নাক, নির্দিষ্ট ধরণের চোখ। যখন যা ট্রেন্ড, সব একরকম। আধুনিক সমাজে যখন ম্যাস প্রডাকশন হয় জিনিসপত্রের, বাজার থেকে একই ধরণের কাপড় কিনেন লোকজন, তখন আইডেন্টিটির একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়। এর মধ্যে ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে যখন একইরকম চোখ মুখ চেহারা করাও সম্ভব হবে, তখন অবস্থা আরেক দেখার মত বিষয়ে পরিণত হবে। ট্রেন্ড ফলো করা এবং মিমেটিক ডেজায়ার মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
বা ধরেন রাজনৈতিক সমাবেশে উপস্থিত সবাই ওই দলের প্রধান নেতার ছবি সেট করে বসলো আনুগত্য প্রকাশে। কোন অথরিটারিয়ান সরকার এমন ঘোষণাও দিতে পারে, প্রধান নেতার জন্ম বা মৃত্যুদিনে তার ছবি সেট করে রাখতে হবে দেশের মানুষকে।
ধরা যাক কেউ সেক্স করবেন তার পার্টনারের সাথে। তিনি তার এক্সকে ভুলতে পারেন না। এমতাবস্থায় সেক্সের সময় তিনি তার এক্সের ছবি ফিক্স করে রাখতে পারেন। তিনি তারেই দেখবেন।
অর্থাৎ, পার্টনারেরা নিজেদের ইচ্ছামত পার্টনারের চেহারা বদলাতে পারবেন। আমার মনে হয় তখন এই কাজে পার্টনারের অনুমতি লাগবে। অনুমতি নিয়েই তারা পরস্পরের চেহারা বদলাবেন। তা না হলে, এটা ঝামেলার তৈরি করবে।
তখন এই ধরণের স্টার্ট আপ আসবে, যাতে পার্টনার অন্তত ইন্টিমেট টাইমে এটা চেক করতে পারে যে, অন্যজন কার ছবি দেখতেছে। মান্থলি সাবস্ক্রিপশন বেসিসে পার্টনারেরা এই স্যাস ব্যবহার করবেন। তখনকার বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়ার হবে এটি।
বা ধরেন কেউ হিউমেনয়েড রোবটের সাথে সেক্স করছেন ঘরে। তিনি যে কারো মুখ এর উপর বসিয়ে নিতে পারবেন। তখন এটার এথিকস কী হবে? মনে হয় তখন সব মানুষের ছবির কপিরাইট থাকবে, এবং অনুমতি না নিয়ে এরকম ব্যবহার বে-আইনি ঘোষিত হবে কোন কোন দেশে। পর্নস্টারেরা এবং আরও অনেকে এমন ব্যবহারের জন্য তাদের ছবি বা শরির/মুখের ফিচার বিক্রি করবেন। এই বিক্রিকে কি প্রস্টিটিউশনের মত দেখা হবে?
ভার্চুয়াল এবং অগমেন্টের রিয়ালিটি নিয়ে কাজ চলছে। গুগল নিয়ে এসেছিল গুগল গ্লাস, সেটি সফল হয় নি। স্ন্যাপচ্যাট ফিল্টারে অগমেন্টেড রিয়ালিটি নিয়ে এসেছে।
সৌদি আরব সম্প্রতি মুসলমানদের পবিত্র বস্তু হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে নিয়ে এসেছে। চোখে ভিআর গ্লাস লাগিয়ে যে কেউ তার বাসায় বসে কালো পাথর ছোঁয়ার অনুভূতি নিতে পারেন।
এটি প্রথম ব্যবহার করেন মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম শেখ আবদুল রহমান আল সুদাইস। তার কথায়, সৌদি আরবে থাকা মহান সব ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের ডিজিটাইজ করে সবার সামনে নিয়ে যাওয়া উচিত।
শুরু থেকে মানুষের রিয়ালিটি পরিবর্তন করার প্রযুক্তিগুলির তালিকা করলে হয়ত এমন হবে,
১। ছবি বা চিত্রশিল্প।
২। লেখা বা আরও স্পষ্টভাবে গল্প উপন্যাসের উৎপত্তি। এগুলি ব্যক্তিকে অন্য এক রিয়ালিটিতে নিয়ে যায়।
৩। ভিডিও প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে গল্পকে অভিনয়ের মাধ্যমে দেখানো যায়। সেটি আরও সহজে মানুষকে অন্য রিয়ালিটিতে নিতে পারে।
৪। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি। যেখানে মানুষ ভিআর সেট মাথায় লাগিয়ে ভিন্ন রিয়ালিটি আরও সরাসরি এক্সপেরিয়েন্স করতে পারে।
৫। অগমেন্টেড রিয়ালিটি। যেখানে মানুষ তার রিয়ালিটির উপর অন্য রিয়ালিটি স্থাপন করে ভিন্ন রিয়ালিটি এক্সপেরিয়েন্স করতে পারে।
এই সবগুলার মধ্যে একটা প্রবণতা খেয়াল করা যায়, এরা মানুষকে ফিজিক্যাল অবস্থা থেকে সাইকোলজিক্যাল অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। মানুষকে আরও বেশি মাইন্ড বা তার সাইকোলজি কেন্দ্রিক অস্তিত্বে পরিণত করতে চায়।