ভি এস নাইপল কেন বই পড়তেন?

ভি এস নাইপলের লেখালেখির সময়কাল ৫০ বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি লিখেছেন ৩০ টি ফিকশন এবং নন-ফিকশন বই। পেয়েছেন সাহিত্যে সর্বোচ্চ সম্মাননা পুরস্কার নোবেল। ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে জন্ম নেয়া এই ব্রিটিশ লেখক বিশ্ব সাহিত্যের একজন বড় লেখক হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন তার জীবনকালেই, ৮৫ বছর বয়েসে গত ১১ আগস্ট ২০১৮ তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, অসামান্য সব সৃষ্টিশীল কর্ম রেখে।

নাইপলের এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় দ্য নিউ রিপাবলিকে, ডিসেম্বর ৭, ২০১২ তারিখে। সাক্ষাৎকারটি নেন আইজাক চটিনার। কথাবার্তায় সাথে ছিলেন নাইপলের স্ত্রী নাদিরা নাইপল।

এই সাইটে বই পড়া ও তার উদ্দেশ্য নিয়ে একটি দীর্ঘ লেখা আছে। বই পড়া বা কেন বই পড়ব এটি এই সাইটে  লেখালেখির একটি মূল থিম। ভি এস নাইপলের সাক্ষাৎকার থেকে তিনি কেন বই পড়তেন বা কী উদ্দেশ্য নিয়ে বই পড়তেন, সেই অংশটাই মূলত এখানে বাংলা অনুবাদ করে দিয়েছি। পুরো সাক্ষাৎকারের লিংক নিচে সংযুক্ত রয়েছে।

ছবিঃ ভি এস নাইপল, ছবি কপিরাইটঃ মাইকেল লুতজকি।

 

আই সিঃ আমার জানতে ইচ্ছা হচ্ছে আপনি এখন কী পড়েন।

 

নাইপলঃ  আমি অনেক কিছুই পড়ি। আমি পড়ি দুনিয়া সম্পর্কে আমার জ্ঞান বাড়াতে। এখন আমি এই লেখককে পড়তেছি, (থমাস) ডি কুইন্সি, এই যে বই (বইটি দেখিয়ে)। আর অন্য যে জিনিসটা পড়তেছি, তা আমার জন্য কিছুটা ব্যতিক্রমীই, থমাস মানের উপন্যাস, বাডেনব্রুকস। এটাতে আমি টাল খেয়ে গেছি।

 

আই সিঃ কেন এটি আপনাকে টাল মাটাল করে তুললো?

 

নাইপলঃ এটা দারুণ প্রজ্ঞাপূর্ন। অসাধারণ বর্ননা। তার ভাষা অসাধারণ। যখন তিনি বলছেন, এক মুড থেকে আরেক মুডে যেতে যেতে ক্তহার ভঙ্গির বদল হচ্ছে। সব সময়ই অবিশ্বাস্য রকম ভালো। তাকে টাইফয়েডের সাথে লড়তে হয়েছিল, এটি চরিত্রের দৃঢ়তা নষ্ট করে দেয়, কিন্তু লড়েছেন এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে যেন সরিয়ে দিতে পেরেছেন। তিনি যে সাফার করছে তার ভেতরে প্রবেশ করেছেন, এবং বলছেন এই এই হয় একজন ক্যান্সার রোগীর সাথে, এই এই হয় একজন টাইফয়েড রোগীর সাথে। এক পর্যায়ে জীবন তার ভেতর থেকে চিৎকার করে উঠেছে। খুবই সুন্দর লেখার ধরণ। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। খুবই , খুবই আলোড়ন তৈরী করা। আমি এর দ্বারা ঝলসে গেছি।

 

আই সিঃ জর্জ এলিয়ট সম্পর্কে কী বলবেন?

 

নাইপলঃ বাচ্চাকালে তার কিছু লেখা পড়েছিলাম। ঐ সময় ভালো লেগেছিল। কিন্তু যখন বড় হতে থাকবেন তখন রুচি ও চাহিদার বদল হয়। আমি তার লেখা পছন্দ করি না। আর বিগ ইংলিশ রাইটার, যেমন ডিকেন্সের লেখাও পছন্দ করি না।

 

আই সিঃ আমি জ্যান অস্টেন সম্পর্কে আপনার মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইছিলাম।

 

নাদিরাঃ ওহ গড, সবাই জ্যান অস্টেনকে অপছন্দ করে। কিন্তু বলার মত সাহস ওদের নেই। বিশ্বাস করুন। আমাদের সেদিন একজনের সাথে দেখা হয়েছিল, বিখ্যাত একাডেমিশিয়ান, তিনি বললেন, জ্যান অস্টেন আবর্জনা। আমি বললাম, তাহলে আপনি দাঁড়িয়ে তা বলছেন না কেন। তিনি বললেন, আমি পাগল নাকি? তারা সবাই তাকে পুনর্মূল্যায়ণ করেছে, কিন্তু বলতে চায় না।

 

আই সিঃ আপনি কি বলবেন কেন আপনি উনাকে পছন্দ করেন না? উনি কি ঠুনকো?

 

নাইপলঃ হ্যা, খুবই তুচ্ছ। আমার উপর তার লেখা কিছুই করে না।  আমাকে কিছুই বলে না। এটা যেমন মান মৃত্যু সম্পর্কে বলছেন ওরকম কিছু নয়, যার এক নিজস্ব এক পথ আছে বিষয়টা নিয়ে ডিল করার।

 

আই সিঃ বর্তমানে লিখছেন এমন কারো লেখার প্রতি কি আপনি আগ্রহী?

 

নাইপলঃ আমার মনে হয় শুরু থেকেই এটা আপনার প্রশ্নের মূল পয়েন্ট, একজন পাঠক হতে হলে সমসাময়িক লেখকদের লেখার সাথে থাকতে হয়। আমি আপনাকে আগেই বলেছি, আমি পড়ি সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে আমার জ্ঞান বাড়াতে।  আমি একটার পর একটা উপন্যাস পড়ে আমার সময় নষ্ট করব না কেবল বলার জন্য যে, আমি এইসব উপন্যাস পড়েছি। আমি যা বলছি তা নিয়ে আপনি কি মনে করেন? আপনি কি মনে করেন আমি একজন নগন্য লোক?

 

আই সিঃ অবশ্যই না। আমি আপনার লেখালেখি নিয়ে প্রশ্ন করতে চাই। আপনার এক বইতে এক চরিত্র আছে, যার এক ক্ষমতা আছে অন্য লোকের দোষ দেখতে পাওয়ার। আপনি কি মনে করেন এটা একজন লেখকের জন্য উপকারী হতে পারে?

 

নাইপলঃ ওখানে আমি আমার খুব ছোটকালের কথাই বলছিলাম, একেবারে বাচ্চা থেকেই। আমি অন্য লোকের দোষ দেখতে পেতাম। অনেক অনেক ছোটকাল থেকে। আমি জানি না এটা ভালো না খারাপ। এটা সহজাত ভাবেই আমার মধ্যে এসেছিল।

 

পুরো সাক্ষাৎকারঃ V.S. Naipaul on the Arab Spring, Authors He Loathes, and the Books He will Never Write