সে কেরিয়ারে ভালো ঠিক আছে, কিন্তু নিশ্চয়ই অসুখী 

মানুষ মনে করে দুনিয়া হচ্ছে ন্যায়। জাস্ট ওয়ার্ল্ড। এটা সব প্রধান রিলিজিয়নের কোরে আছে। কিন্তু জিনিশটা ভুল, একটা বিভ্রান্তি।

কিন্তুক, এই বিভ্রান্তি কেন মানুষ মানে বা ধরে রাখে? এর ফাংশন কী?

সাইকোলজিক্যালি এই চিন্তা মানুষরে নিরাপত্তা দেয়।

মানুষ মনে করে যেখানে “অন্যায়” হচ্ছে সেখানে নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে। এই ধারণাটা তখনই আসবে যখন আগে একজন মেনে নিবে দুনিয়া তথা ন্যাচারাল সিস্টেম ন্যায়। কিন্তু সেটা ক্যামনে? প্রাকৃতিক একটা সিস্টেম, একটা ভাসমান ক্ষুদ্র গ্রহে, সেইখানে কীসের ন্যায় বিদ্যমান, কে রাখবে বা সেইটা কীভাবে আগাবে? 

এই ন্যায় নাই।

কিন্তু এই কনসেপ্টটা দরকারী মানুষের সাইকোলজিক্যাল নিরাপত্তার জন্য।

অনেকে মনে করতে পারেন, ধর্ম বা পরকালের কারণে। সেটা নয়। আগে তো দুনিয়ায় বাস করতে হবে, পরকাল তো পরের। 

মানুষ তার চাইতে বুদ্ধিমান কাউরে দেখলে হীনম্মন্যতায় ভুগে। বা যেকোন কোয়ালিটিতে তার চাইতে ভালো কাউরে দেখলে তার সেলফ ইস্টিমে আঘাত লাগে।

তখন সে ধরে নেয়, এই লোক সুন্দর হইতে পারে ঠিক আছে, কিন্তু এর স্বভাব চরিত্র খারাপ। বা সে কৃপণ। বা তার বংশ ভালো না। বা সে গাছে চড়তে পারে না। বা সে পুঁজিবাদী ইত্যাদি। 

এই লোক ধনী ঠিক আছে, কিন্তু সে সুখী না। টাকায় সুখ কিনা যায় না

এর কেরিয়ার আমার চাইতে ভালো ঠিক আছে, কিন্তু এইখানে টাকা ছাড়া আর কী আছে? 

এসব নিয়ে যা রিসার্চ হইছে কমবেশি, তাতে দেখা যায়, এই যে ঐ লোকটারে অন্য দিকে ছোট করা কথা বলল, এই বলার পরে তাদের মুড ভালো হয়।

এইসব আর্গুমেন্ট যদি দেখেন, মনে রাখবেন এখানে আরেকটা লাইন উহ্য থাকে।

সে আমার চাইতে বুদ্ধিমান হইতে পারে, কেরিয়ারে ভালো হইতে পারে, কিন্তু সে সুখী না। “এটা বলে আমার ভালো লাগতেছে” – উহ্য লাইন।

ন্যায় পৃথিবীর ধারণা ভিত্তিতে থাকার কারণে মানুষ ভাবে, যে বেশি বুদ্ধিমান সে অন্যদিক দিয়া খারাপ হবেই। যে ধনী সে তো মাস্ট অসুখী হবে কারণ টাকা দিয়া সুখ কিনা যায় না। তার ছেলেমেয়েরা সব খারাপ হবে, কারণ টাকার পিছনে ছুটে বাপে সময় দিতে পারবে না। 

যেন গরীবদের ছেলেমেয়েরা সব মহাত্মা হয়ে যায়।

যেন দুনিয়াতে সবাই সমান পয়েন্ট নিয়া আসছে। ১০০। ওই লোক তার বেশীরভাগ টাকার পিছনে খরচ করে ফেলছে, তার বাকি আছে ৫। অতএব তার কোন বন্ধু থাকবে না, ছেলেমেয়ে ভালো হবে না, সে হবে লোনলি।

কিন্তু, এই ‘ন্যায়’ দুনিয়াতে নাই। কেউ ইভল্যুশনের কারণে প্রচুর পয়েন্ট বেশি নিয়া আসতে পারে, যদি পয়েন্টে বলি আর কি। একইভাবে কেউ অনেক কম নিয়া আসতে পারে।

আবার দেখা গেছে, মানুষ বেশি নৈতিক লোকরে আবার হিংসা করে না। তার মত হতে চায় না। ইভেন, পার্টনার হিসাবেও বেশি নৈতিক লোক পছন্দ করে না, যদিও মুখে বলে চায়। নৈতিক হবার ইচ্ছা মানুষের না থাকলেও সে বেশি বুদ্ধিমান ও বেশি সুন্দর হতে চায়।

শেষকথা, এই যে এইসব রিসার্চ যারা করে মানুষের এত টাকা খরচ করে, তারা ঠিক আছে বুদ্ধিমান, প্রফেসরি করতেছে, কিন্তু আমার চাইতে এদের ফেসবুকে ফলোয়ার কম। তাদের চাইতে আমার পাঠক বেশি।