গ্রোথ হ্যাকিং কী?

 

সাধারণ ভাবে গ্রোথ হ্যাকিং শব্দটিকে আমরা বুঝতে গেলে বলতে পারি, যার মাধ্যমে গ্রোথকে হ্যাক করা যায় তাকে বলে গ্রোথ হ্যাকিং।

গ্রোথ কে হ্যাক করা এ কথার অর্থ কী?

গ্রোথ কে ধরে নিন একটা সিস্টেম। একটা অভীষ্ট লক্ষ্য। প্রতিটি কোম্পানি গ্রোথ চায়, এবং এই গ্রোথকে আরও আরও বাড়াতে চায়।

গ্রোথ যদি কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টের মতো বাড়তে থাকে তাহলে একটা কোম্পানি হিউজ হয়ে উঠতে পারে।

কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট জিনিসটি খুবই মজার, এবং একটি প্রচলিত গল্পের সাহায্যে একে নিম্নরূপে ব্যাখ্যা করা যায়।

একবার এক রাজা ঠিক করলেন দাবা খেলা যিনি আবিষ্কার করেছেন তাকে পুরস্কার দিবেন।

ভদ্রলোককে রাজার সামনে আনা হলো।

রাজা বললেন, কী পুরস্কার চাও?

লোকটি দাবা বোর্ড দেখিয়ে বলল, ঐ দাবা বোর্ড এক ঘরে একটি শস্য দানা, পরের ঘরে এর দ্বিগুন, পরের ঘরে এর দ্বিগুন এভাবে দিন, তাতেই হবে মহারাজ।

রাজা তো অবাক। মাত্র শস্যদানা চায়, স্বর্ণমুদ্রা না। তিনি সাথে সাথেই রাজী হলেন ও সেরকম দিতে ব্যবস্থা করলেন।

কিন্তু দেখা গেল, প্রথম ঘরে একটা, দ্বিতীয় ঘরে দুইটা, তৃতীয় ঘরে চারটা, চতুর্থ ঘরে আটটা এভাবে দিতে দিতে দশ নাম্বার ঘরে গিয়ে হলো ৫১২ টা। ২০ নাম্বার ঘরে গিয়ে ৫.২ লাখ। মাঝামাঝি, তথা ৩২ ঘরে এসে তা দাঁড়াল ২১৪ কোটি শস্যদানা!

আর এভাবে বাড়তেই থাকলো। শেষে রাজার পুরো রাজত্বই গেল।

এই গল্প পুরো সত্য না মিথ্যা সে কথা থাক, কিন্তু গল্পের মেসেজটা হলো চক্রবৃদ্ধির ম্যাজিক।

গ্রোথ যদি এভাবে হয়, তাহলেই একটি কোম্পানি বিশাল হয়ে উঠে।

এই ধরনের গ্রোথ এর জন্য কিছু হ্যাক বা ক্রিয়েটিভ পদ্বতি ব্যবহার করাকেই বলে গ্রোথ হ্যাকিং।

ক্রিয়েটিভ পদ্বতি বলতে আমি কী বুঝাচ্ছি?

পৃথিবী এমন একটি সিস্টেম যা কোন এক থিওরিতে চলে না। কেবল ফিজিক্স দিয়ে বা কেবল প্রোগ্রামিং নলেজ দিয়ে আপনি একে বুঝতে পারবেন না। আর আপনি যেহেতু বিজনেস করছেন পৃথিবীতে ও মানুষের জন্যই তাই যতটুকু পারা যায় আপনাকে পৃথিবীটাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে মানব প্রকৃতি।

তাহলেই আপনি গ্রোথকে হ্যাক করতে পারবেন।

ক্রিয়েটিভ পদ্বতি বলতে আমি বুঝাচ্ছি বিভিন্ন জ্ঞানের ফিল্ড থেকে ইনসাইট নিয়ে অভিনব কিছু করা।

সাধারণত হ্যাকিং বলতে আমরা যা বুঝি, কম্পিউটার বা সার্ভার হ্যাকিং, এর বেশিরভাগই আসলে সোশ্যাল এঞ্জিনিয়ারিং। বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল ইনসাইট কাজে লাগিয়ে, মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয় এসব ক্ষেত্রে। ২০১৬ এর নুইক্স সার্ভে অনুযায়ী ৮৮ পার্সেন্ট ক্ষেত্রে হ্যাকাররা তাদের স্ট্র্যাটেজিতে সোশ্যাল এঞ্জিনিয়ারিং রাখে।

 

গ্রোথ হ্যাকিং এর ক্ষেত্রেও, হিউম্যান সাইকোলজি ও সোশ্যাল সাইকোলজির জ্ঞান কাজে লাগানো অপরিহার্য।

আমার ধারনা, আমাদের এখানে অধিকাংশ বিজনেস, এবং অধিকাংশ বিজনেস রিলেটেড লোকেরা গ্রোথ হ্যাকিং কী তা বুঝেন না। তারা মূল ভিত্তি ঠিক না রেখে উপরে সাঁতার কাটতে যান। গ্রোথ হ্যাকিং এর ক্ষেত্রে হুবহু কপি করে আইডিয়া বসিয়ে দিলেই কাজ হবে না। এক প্রোডাক্টে যা কাজ করেছে তা অন্যটাতে না করতে পারে, এমনকি একই প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে একই আইডিয়া দুই ভিন্ন সময়ে কাজ না করতেও পারে।

আপনার হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং না থাকলে আপনি কীভাবে আইডিয়া জেনারেট করবেন যা দিয়ে হিউজ গ্রোথের সম্ভাবনা তৈরি হয়?

হ্যাঁ, ইনটিউশন দিয়ে, হঠাত করে, একটা দুইটা আইডিয়া বের করে ফেলতে পারেন, তাতে অনেক লাভ হবে।

কিন্তু প্রতিনিয়ত আইডিয়া আপনার আসবে না। এবং গ্রোথের যে কন্টিনিউয়াস উন্নতির কথা আমি বললাম উপরে, তা হবে না।

গ্রোথ হ্যাকিং আইডিয়া হয় সিম্পল। সিম্পল আইডিয়াটি প্রয়োগের ক্রিয়েটিভ জায়গা বের করতে হয়।

টুইটার ভেরিফায়েড ইউজার ব্যাজ দেয়, একটা নীল ঠিক মার্ক। এটা তারা দেয় সেলিব্রেটি, পলিটিশিয়ান এসব লোকদের। শুধুমাত্র তাদের এই কাজের কারণে ঐসব সেলিব্রেটি, পলিটিশিয়ান বা এরকম গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিদের মধ্যে টুইটারের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তারা এই ব্লু ঠিক মার্কের কারণে নিজের ইগো পরিতৃপ্তি অনুভব করেন ও টুইটারে টুইট করতে উদ্বুদ্ধ হোন।  আর, তারা সেখানে একটিভ থাকা মানে আরও হাজার হাজার বা লাখ লাখ লোক কেবল তাদের ফলো করার জন্য  সেখানে থাকবে। আর, একজন সেলিব্রেটির এমন ফলোয়ারময় অবস্থা টুইটারে হলে অন্য সেলিব্রেটিরাও সেখানে আকৃষ্ট হবে।

টুইটারের এই কাজটি একটি গ্রোথ হ্যাকিং।

গ্রোথ হ্যাকিং নিয়ে কথা বলতে গেলে সবাই ড্রপবক্সের উদাহরণ দিয়ে থাকেন। কারণ তারা শুরু থেকে গ্রোথ হ্যাকিং স্ট্র্যাটেজি অবলম্বন করে মার্কেটিং করেছে, এবং শূন্য থেকে বিরাট কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।

তারা কী আইডিয়া এপ্লাই করেছে?

একেবারে সিম্পল আইডিয়া।

মানুষকে দিয়ে কিছু করাতে হলে তাকে কিছু দিতে হয়।

ড্রপবক্স একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে, ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করা, ফাইল শেয়ার করা, টুইটার, ফেইসবুকে ড্রপবক্স একাউন্ট যুক্ত করা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তারা ইউজারকে উপহার হিসেবে স্পেইস দিত।

এতে ইউজাররা অন্যদের সাথে ড্রপবক্সকে শেয়ার করেছে বাড়তি স্পেইস পেতে।

ফলে, কোন অন্য মার্কেটিং ছাড়াই ড্রপবক্স ছড়িয়ে পড়েছে। এবং যেহেতু সার্ভিসটি ইউজফুল তাই অনেকে ব্যবহার করতে শুরু করেছিল। তারা বিশাল ইনভেস্টমেন্ট পেল।

নতুন ইউজার আকৃষ্ট করতে যে গ্রোথ হ্যাক করা হয়, তাকে একিউজিশনের গ্রোথ হ্যাক ধরা হয়।

জিমেইল যখন শুরু করলো তাদের পদযাত্রা, তখন তারা একটি অসাধারণ সফল গ্রোথ হ্যাকিং আইডিয়া প্রয়োগ করেছিল, যা তার গ্রোথকে ত্বরান্বিত করে, এবং শক্তিশালী অবস্থান এনে দেয়।

জিমেইলের গ্রোথ হ্যাকটা বুঝতে ক্যাপ্টেন কুকের কাহিনীটা মনে করা যায়। কুক তার জাহাজে অনেক অনেক বছর আগে এই গ্রোথ হ্যাকের আইডিয়াটি ব্যবহার করেছিলেন।

নাবিক কুক  তখন দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় বের হতেন। সেই সময়ে স্কার্ভি ছিলো জাহাজে আতংক। নাবিকেরা এতে মারা যেত। ভয়ংকর একটা ব্যাপার ছিল যাত্রার সময় এই রোগে জাহাজে অনেক নাবিকের মৃত্যু। তাই প্রায় সবাই এই রোগের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠল। তখন ভিটামিন সি কী লোকে জানে না। বুদ্ধিমান ক্যাপ্টেন কুক ভিন্নভাবে চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখলেন ডাচ জাহাজে স্কার্ভি হয় না নাবিকদের। তখন তিনি দেখতে গেলেন ডাচ জাহাজে তারা কী এমন ভিন্নকিছু করে যার জন্য নাবিকদের স্কার্ভি হয় না।

তিনি গিয়ে ভিন্ন যে জিনিস পেলেন তা হল বাঁধাকপির আচার। বাঁধাকপিরে কেটে  ল্যাকটিক এসিডের মাধ্যমে এক ধরনের টক আচার বানানো হয় যা অনেক দিন ভালো থাকে। ডাচ জাহাজে তারা এই আচার খেত।

ক্যাপ্টেন কুক ভাবলেন হয়ত এই কারণেই এদের স্কার্ভি হয় না। এটা ছিল তার ইনসাইট। তিনি ঠিক করলেন নিজের সমুদ্র যাত্রায়ও এই বাঁধাকপির আচার নিয়ে যাবেন। কিন্তু তখনকার সময়ে ইংরাজ জাহাজের নাবিকেরা ছিল মারাত্মক, এদের হ্যান্ডেল করা সহজ ছিল না। যেকোন সময় বিদ্রোহ করে বসতে পারে। এরা আবার বাঁধাকপি দেখতে পারত না। বাঁধাকপি অভিজাত খাবার ছিল না। (যেমন ছিল আনারস।)

কুক বুঝতে পারলেন এদের স্কার্ভি প্রতিরোধে বাঁধাকপির আচার খাওয়াতে গেলে এরা তা মানবে না। উলটা অতি দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় যাওয়া হচ্ছে যাতে স্কার্ভির ভয় আছে, এটা ভেবে বিদ্রোহ করে বসবে। তাই তিনি একটু ভিন্ন পন্থায় হাঁটলেন। শ্রমিকদের স্বাভাবিক খাবার দেয়া হল আর অফিসারদের অন্য খাবারের সাথে বাঁধাকপির আচারও দেয়া হতে লাগল। শ্রমিকদের দেখিয়ে দেখিয়ে এটা করা হল। শ্রমিকেরা ভাবতে লাগল এটা নিশ্চয়ই উৎকৃষ্ট কোন খাবার।

এইরকম কয়েকদিন চলার পরে ক্যাপ্টেন কুক ঘোষনা দিলেন, তাহলে এখন থেকে সপ্তাহে একদিন শ্রমিকদেরও এই আচার দেওয়া যেতে পারে।

তখন যখন শ্রমিক নাবিকদের আচার দেয়া হলে তারা আগ্রহের সাথে গ্রহণ করলো। জাহাজের সবাই আয়োজন করে খেলো। ক্যাপ্টেন কুকের উদ্দেশ্য সফল হলো। আর তিনি স্কার্ভি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলেন।

এখানে কুক ফেইক একটা স্কারসিটি তৈরি করেছিলেন ও অন্যদের বুঝিয়েছিলেন জিনিসটা অভিজাত। ফলে নাবিকেরা এটা খেতে পএরে নিজেদের অভিজাতদের দলেরই মনে করেছিল অবচেতনে। তাই তারা আপত্তি জানায় নি।

জিমেইল যখন প্রথম শুরু করে তখন তারা একই  কাজ করে। তারা জিনিসটা ইনভাইটেশন অনলি রাখে।  একজন ইউজার ১০০ জনকে ইনভাইট করতে পারতো। জিমেইল কিছু নতুন ফিচার নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তখনকার সময়ে ইয়াহু মেইল শক্ত অবস্থানেই ছিল। এমতাবস্থায়, জিমেইলের গ্রোথ হ্যাক কাজে দিল। অভিজাত এক দলে যোগ দেবার তাড়নায় লোকেরা এতে যোগ দিল। এমনো হয়েছিল যে, ইবেতে জিমেইলের ইনভাইটেশন বিক্রি হয়েছিল।

একই  গ্রোথ হ্যাক গুগল তাদের অন্য কিছু প্রোডাক্টেও ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। কাজ করে নি। গ্রোথ হ্যাকিং এর জন্য এটা আরেকটা বেসিক কথা। আগে একবার বলা হয়েছে, তাও আবার বলি, কোন হ্যাক একবার কাজে লাগতে পারে এক প্রোডাক্টে, কোন এক নির্দিষ্ট সিচুয়েশনে। অন্যবার অন্য  প্রডাক্টের বয়া একই প্রোডাক্টের  ক্ষেত্রে কাজে নাও লাগতে পারে।

এই কারণেই গ্রোথ হ্যাকিং এর জন্য মাল্টি ডিসিপ্লিনারি থিংকিং খুবই গুরুত্বপূর্ন।

আপনি অসাধারণ গ্রোথ হ্যাক আইডিয়া পেতে পারেন কমিক এনালাইসিসের বই থেকে, পেতে পারেন উপন্যাস থেকে, গল্প থেকে, ফিল্ম থেকে বা ফিল্মের বই থেকে। যত ভিন্ন ভিন্ন ডিসিপ্লিনে আপনার দখল থাকবে, ততো বেশি ভালো আইডিয়া আপনি জেনারেট করতে পারবেন।

কিন্তু, এখানে একটি সমস্যা হলো, কোম্পানি যারা চালান, তারা  গুড আইডিয়া ও ব্যাড আইডিয়ার পার্থক্য করতে পারেন কি না। আপনি সেরা আইডিয়া দিলেও যোগ্য ব্যক্তি না হলে সেটি একজন বুঝতে পারবে না।

ম্যাকায়াভেলি তার প্রিন্সে বলেছিলেন, A prince who is not wise himself will never take good advice.

গ্রুভ নামের একটি কোম্পানি ৫ মিলিয়ন ডলার আয় করছে বছরে, একটা ইন্টারেস্টিং গ্রোথ হ্যাক ব্যবহার করে। তারা দেখল যে সাস এর জন্য সম্ভাবনা ও সীমাবদ্বতা বর্ননা করে কেইস স্টাডি জাতীয় লেখা নাই ইন্টারনেটে। তারা কেইস স্টাডি ভিত্তিক কন্টেন্ট মার্কেটিং শুরু করল। শুধুমাত্র এই হ্যাক ইউজ করে তারা তাদের গ্রোথকে দিনে দিনে নিয়ে গেল অনেক উঁচু জায়গায়।

এটা একটা সিম্পল আইডিয়া না?

আপনি ভাবলেন গ্রোথ হ্যাকিং না জানি কী জিনিস। এর জন্য মিটিং করতে হবে। বার বার বসতে হবে। মাস্টারক্লাস করতে হবে।

এসব করা হলে, ডাইরেকশন ঠিক না থাকলে,  আলটিমেটলি সময় নষ্ট হবে, রিসোর্স নষ্ট হবে।

আর আপনি যদি ভাবেন সবাই গ্রোথ হ্যাকিং আইডিয়া জেনারেট করতে পারে, তাহলে আপনার এই চিন্তাধারা খুবই ভুল। সবাই যেমন গল্প লিখতে পারে না, তেমনি সবাই গ্রোথ হ্যাকিং আইডিয়া জেনারেট করতে পারবে না। এটা অসম্ভব, কারণ প্রতিটা কাজের জনয় দীর্ঘ সময়ের পূর্ব প্রস্তুতির দরকার হয় একজন মানুষের জন্য।

হুট করে কাউকে দায়িত্ব দিলেন সপ্তাহে ৫ টি আইডিয়া আমাকে দিতে হবে। এটা অদ্ভুত হয়। কাজ হবে না।

কিন্তু একটা কোম্পানির গ্রোথ হ্যাকিং সিস্টেমে আবার সবাইকে যুক্ত করতে হয়। যুক্ত করলে বেটার। এটা কীভাবে করবেন?

প্রথমে অল্প কয়েকজন গ্রোথ হ্যাকিং এক্সপার্ট নিয়ে টিম বানাতে হবে। এরা হবে যারা ক্রিটিক্যালি থিংকিং করতে পারে, অনেক বিষয় নিয়ে বই পড়ে, আপনার ব্যবসার ফিল্ড সম্পর্কে জ্ঞান রাখে এমন কয়েকজন মানুষ। এরা প্রতিনিয়ত রিসার্চ করবে ও প্রতিনিয়ত আইডিয়ার ব্যাপারে ভাববে।

আপনি কোম্পানির সবাইকে গ্রোথ হ্যাকিং এর ব্যাপারে শিক্ষিত করে তুলতে পারেন। তাদের আইডিয়া দিতে বলতে পারেন। গ্রোথ হ্যাকিং টিমের কাজ, অভিজ্ঞতা ও কেইস স্টাডি তাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। কিন্তু আইডিয়ার জন্য  এদের উপর ১০০ ভাগ নির্ভর করা যাবে না। কারণ তারা নিজেদের অন্যান্য কাজ নিয়েই ব্যস্ত। তারা আইডিয়া দিলে সে আইডিয়া গ্রোথ হ্যাকিং টিম বিশ্লেষণ করে দেখবে।

এরপরে গ্রোথ হ্যাকিং টিম সিলেক্টেড আইডিয়া নিয়ে বসবে ম্যানেজারিয়াল বডির একজনের সাথে। ইনি হতে পারেন চিফ অপারেটিং অফিসার। তারা একসাথে বসে ঠিক করবেন কোন কোন গ্রোথ হ্যাক এপ্লাই করা হবে, কীভাবে হবে।

হাবস্পট ১৫ হাজার ইউজারের কোম্পানি থেকে ১.৬ বিলিয়ন মার্কেটিং ভ্যালুর কোম্পানি হয়েছে, তার ফাউন্ডার ধর্মেশ শাহ এর মতে এটি হয়েছে তাদের দেয়া একটি ফ্রি টুল, ওয়েবসাইট গ্রেডারের জন্য। এই ফ্রি টুল দেয়া হাবস্পটের জন্য ছিল গ্রোথ হ্যাক আইডিয়া।

পেপাল যখন শুরু করেছিল, তখন ইউজাররা বন্ধুদের রেফার করলে উপহার হিসেবে টাকা দিত। সম্ভবত ১০ ডলার করে। এতে তাদের প্রতিদিনের ইউজার গ্রোথ ছিল ৭ থেকে ১০%। শুধু এইভাবে তারা ৬০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

এবং কোম্পানির এখন ভ্যালুয়েশন এখন ১০০ বিলিয়ন ডলার।

মিউজিক ডিস্কভার এপ শাজাম একটি গ্রোথ হ্যাক এপ্লাই করেছিল যা অফলাইনে কাজ করে। এটি তার বিশাল অবস্থায় নিয়ে যায়। শাজাম এপের কাজ হলো কোন পার্টিতে বা অন্য কোন জায়গায় আপনি কোন গান শুনলে তা মোবাইলে রেকর্ড করে শাজামে দিলে শাজাম তার ডেটাবেইজ থেকে মূল গান বের করে দিবে।

শাজাম তার ইউজারদের অনুপ্রাণিত করলো, মোবাইল স্পিকারের সামনে নিয়ে রেকর্ড করতে।

এতে কোন পার্টিতে বা অন্য কোন জায়গায় দেখা গেল কিছু লোক হঠাত মোবাইল উঁচিয়ে ধরেছে।

মানুষের আগ্রহ হলো জানার, আসলে কী হচ্ছে।

এভাবে ওয়ার্ড অব মাউথ মার্কেটিং এর একটা লুপ তৈরি হলো। এভাবেই শাজামের কথা ছড়িয়ে পড়লো।

আমাদের দেশের একটা গ্রোথ হ্যাকের কথা মনে করা যায়। এরোমেটিক সাবান একবার মার্কেটিং করেছিল নিজেদের ১০০% হালাল সাবান বলে। এটি তাদের করে তুলেছিল জনপ্রিয়।

গ্রোথ হ্যাকিং আইডিয়া অবলম্বন করে যেমন মার্কেটিং করা যায়, তেমনি নিজেদের প্রোডাক্ট সম্ভাবনাও বের করা যায়। অনেক সময় দেখা যায় নির্মাতারা যে জিনিস যে কাজের জনয় তৈরি করেছিলেন, ভোক্তারা তা অন্য কাজে ব্যবহার করছে। এটা নতুন সম্ভাবনা হয়, এই নতুন দিকে তখন বিজনেস চলে যায়। বিশ্বের সফল স্টার্টাপদের অধিকাংশের জীবনচক্রেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে।  একটা মজার উদাহরণ দেয়া যায় আমাদের পরিচিত সমাজ বাস্তবতা থেকে। কসকো সাবান ছিল প্রসাধনী সাবান, কিন্তু এখন ব্যবহার হয় সাধারণ রেস্টুরেন্টে হাত ধোঁয়ার কাজে। কারণ এই সাবান সহজে গলে না।

গ্রোথ হ্যাকিং এর সাথে গ্রোথ মাইন্ডসেট জড়িত। আপনার কোম্পানির কর্মীদের গ্রোথ মাইন্ডসেট হতে হবে। কর্মীদের গ্রোথ মাইন্ডসেট হলে তারা নিত্য নতুন জিনিস শিখতে আগ্রহী হবে এবং আরও শক্তিশালী রিসোর্সে পরিণত হবে। লং রানে এটাই আপনার কোম্পানির গ্রোথ বৃদ্ধি করবে।

সাধারণত দুই ধরনের মাইন্ডসেটের লোক দেখা যায়।

এক ধরনের লোক প্রতিটি কনভারসেশনকে দেখে নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা হিসেবে। যেন সবার সাথেই তাদের প্রতিযোগিতা। সব জায়গায় নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। ভেতরের হীনম্মন্যতার বোধ থেকে এটি তৈরি হয়। এ ধরনের লোকদের মাইন্ডসেট হলো বদ্ধ মাইন্ডসেট। এদের নিয়ে আপনি গ্রোথ হ্যাকিং করতে গেলে কাজ হবে না।

গ্রোথ মাইন্ডসেটের বৈশিষ্ট্য হলো,

তারা শেখার জন্য  আগ্রহী থাকে। তাদের কিউরিওসিটি বেশি।

তারা এটা জানে যে সবাই সব কিছু জানতে পারে না। ফলে কিছু না জানলে সেটি লজ্জার কিছু নয়। বরং সুযোগ থাকলে তা শিখে নেবার চেষ্টা করাই ভালো।

তারা ভালো লিসেনার।

কোম্পানির গ্রোথ হ্যাকিং এগিয়ে নিতে কর্মীদের গ্রোথ মাইন্ডসেট তৈরিতে উৎসাহ দিতে হবে।

লেখা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ‘গ্রোথ হ্যাকিং” জারগণ ব্যবহার না করেও আপনি গ্রোথ হ্যাকিং করা শুরু করতে পারেন আপনার কোম্পানিতে। আমি এই সাইটে ব্যবসায় গল্পের ব্যবহার নিয়ে লিখেছি। এই ব্যবসায় গল্প ব্যবহার করা গ্রোথ হ্যাকিং হয়।

 

ছবিঃ আমার না। যারা বানাইছেন ক্রেডিট তাদের।