বিখ্যাত লেখক মার্ক টুয়েন ৫৯ বছর বয়েসে দেউলিয়া হয়ে যান। স্টক মার্কেটে তিনি, আজকের টাকার হিশাবে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার লস করেন।
তার স্বভাবজাত ভাষায় স্টক মার্কেট সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান তিনি লিখেছিলেন, অক্টোবর, স্টক মার্কেটে স্পেকুলেট করার জন্য সবচাইতে অদ্ভুত বাজে মাস। অন্য মাসগুলা হচ্ছে, জুলাই, জানুয়ারি, সেপ্টেম্বর, এপ্রিল, নভেম্বর, মে, মার্চ, জুন, ডিসেম্বর, আগস্ট এবং ফেব্রুয়ারি।
অর্থাৎ উইটের মিশ্রণে তিনি বলতে চেয়েছেন, স্টক মার্কেটে স্পেকুলেট করা বারো মাসই ‘অদ্ভুতভাবে” বিপদজনক।
মার্ক টুয়েন বিজনেস এডভেঞ্চার পছন্দ করতেন। বিভিন্ন ব্যবসায় তিনি ইনভেস্ট করেছিলেন। নিজের প্রকাশনা ব্যবসাও শুরু করেছিলেন। যা প্রথমদিকে অনেক সফল হয়েছিল। কিন্তু দুইটা খুব সফল বইয়ের পরে ব্যর্থ হয়।
সেই সময়ে একটা নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন এক যুবক। স্বয়ংক্রিয় টাইপ সেটিং মেশিন। নাম পেইজ কম্পোজিটর। মার্ক টুয়েন একসময় তার ভাইয়ের প্রিন্টের দোকানে টাইপ সেটিং এর কাজ করতেন। তিনি টাইপ সেটিং বুঝতেন। এর প্রযুক্তি বিচার করে বুঝলেন, এটা প্রিন্টিং দুনিয়া বদলে দিবে।
ইনভেস্ট করলেন ৪ মিলিয়ন ডলার। তাও ১০ বছর ধরে ইনভেস্ট করে গেলেন।
এর মালিক মিস্টার পেইজ ছিলেন একজন পারফেকশনিস্ট। তিনি সব কিছু মনমত করে, একশভাগ নিখুঁত হিশাবে তার প্রোডাক্টকে মার্কেটে আনতে চাইলেন। এতে বেলা বয়ে গেল। ১৪ বছর পরে যখন তিনি পারফেক্ট প্রডাক্ট মার্কেটে আনতে চাইলেন, ততদিনে আরও ভালো ও কম খরচের প্রযুক্তি বের হয়ে গেছে। ফলে তার কোম্পানি ফেইল করল। সাথে সাথে মার্ক টোয়েনও।
লস উইটি টুয়েনকে স্টক মার্কেট সম্পর্কে সিনিক করে তুলেছিল হয়ত।
এই ইনভেস্টমেন্টে মার্ক টুয়েন এমন এক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেন যা খুব ভালো প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে ও ভবিষ্যৎ বদলে দেবার সম্ভাবনা রাখে। অর্থাৎ ফিউচার ভ্যালুর দিকে লক্ষ রেখে তিনি ইনভেস্ট করেন।
এই ধরণের ইনভেস্টমেন্টে এমন রিস্ক নেয়া উচিত না, যা হারালে আপনি দেউলিয়া হয়ে যাবেন। কারণ এগুলা আপসাইড বেশি থাকলেও হাইলি রিস্কি বেট। আপনাকে আগেই জানতে হবে ডাউনসাইড কী। আপনার পুরা টাকা লস হতে পারে। তাই যে পরিমাণ টাকা আপনি লস করতে পারবেন, ঐ পরিমাণ ইনভেস্ট করতে হবে।
টুয়েন সামর্থ্যের বেশি বেট করেন ওই সময়ে।
দ্বিতীয়ত, কোন এক বিষয়ে আপনি প্যাশনেট থাকতে পারেন। যেমন ইলেকট্রিক ভেহিকল, ওয়েব থ্রি, থ্রিডি প্রিন্টিং ইত্যাদি। টুয়েন লেখক হিশাবে তখনকার প্রযুক্তি টাইপসেটিং এ প্যাশনেট ছিলেন। তাই তিনি ওই ইনভেস্টমেন্টে বিগ বেট ধরেছিলেন। সফল হলে তাকে হয়ত ইনভেস্টিং জিনিয়াস বলা হত, কিন্তু তাও এই ধরণের ইনভেস্টমেন্টে দেউলিয়া হবার রিস্ক নেয়া খারাপ সিদ্ধান্ত।
কোন আইডিয়া বা প্রযুক্তি যত বৈপ্লবিক হোক না কেন, আপনি এঁর ব্যাপারে যতোই প্যাশনেট থাকুন না কেন, তার ম্যানেজমেন্ট কেমন, তার ফান্ড কেমন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। একটা বাজে ম্যানেজমেন্ট, বাজে লিডার ভালো আইডিয়া বা প্রযুক্তিকেও ব্যর্থ করতে পারে।
এছাড়া তিনি লস হতে থাকলেও ইনভেস্ট করে গেছেন। এটাও আরেক সমস্যা। এভারেজ ডাউন ভালো স্ট্র্যাটেজি নয়।
ইনভেস্টর মার্ক টুয়েনের কাছ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলি আমরা নিতে পারব কী?
টুয়েন নিজেই বলছেন, যে লোক বিলাইরে ল্যাঞ্জায় ধইরা নিতে যায় সে এমন কিছু জিনিশ শিখতে পারে, যা অন্য কিছুতে সম্ভব নয়।
অর্থাৎ, নিজে ভুল করে শেখা।
শেখার প্রথম ধাপ হইতে পারে, অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে জানা। লেখা পড়ে বা তার গল্প শুনে, নানা উপায় আছে। দ্বিতীয় ধাপ, সেই শেখাটারে এক্সপেরিয়েন্স করা।
এই দুই ধাপ সম্পন্ন হলেই শেখা যায়। ব্যতিক্রম আছে, বেটার হল, নিজের অভিজ্ঞতার আশায় বসে না থেকে, অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে সরাসরি শেখা।
মার্ক টুয়েন ছিলেন বিখ্যাত লেখক। বই প্রকাশ করে এবং লেকচার দিয়ে তিনি অনেক টাকা আয় করতেন। এছাড়া তিনি বিয়ে করেছিলেন একজন বিরাট ধনীর মেয়েকে, যা তার সবচাইতে ভালো ফাইনানশিয়াল সিদ্ধান্ত, বিয়েটাও ভালোভাবে টিকেছিল, কারণ তার বউ ছিলেন বুদ্ধিমতী।
স্ট্যান্ডার্ড ওয়েলে কাজ করা এইচ এইচ রজার নামে একজন লোক লেখকের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত দেখভাল করা শুরু করেন।
৬০ বছর বয়েসে ইংল্যান্ড ও ভারতে লেকচার দিতে বের হন টুয়েন। সেখান থেকে অনেক টাকা আসে। রজার এগুলি ইনভেস্ট করেন।
১৯১০ সালে মার্ক টুয়েন মারা যান। তখন তার প্রায় ১১ মিলিয়ন ডলার ছিল।