এই বছরের গুরুত্বপূর্ণ আইডিয়া নিয়া ভাবতে বসে দুইটা আইডিয়া পাইলাম, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এইগুলার মেসেজ আমি নেক্সট ইয়ারে মাথায় রাখব।
১। অভিমন্যু যে কারণে মারা গিয়েছিলেন
শুভদ্রার পেটে যখন অভিমন্যু ছিলেন, তখন অর্জুন শুভদ্রারে বলতেছিলেন চক্রব্যূহের কথা। চক্রব্যূহে প্রবেশের নিয়ম শোনার পরে শুভদ্রা ঘুমিয়ে যান। বাকিটা শুনতে পারেন নাই। ফলে মায়ের পেট থেকে অভিমন্যু শিখে এসেছিলেন কীভাবে চক্রব্যূহে প্রবেশ করতে হয়।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এক পর্যায়ে দ্রোনাচার্য চক্রব্যূহ রচনা করেন। পাণ্ডবদের মধ্যে থেকে এই ব্যূহ ভেদ করতে পারেন এমন কেউ তখন উপস্থিত ছিলেন না অভমন্যু ছাড়া। তাই অভিমন্যু যুদ্ধে যান, ও ব্যূহে প্রবেশ করেন। সেখানে ধর্মযুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করে কুরু সেনাপতিরা তারে আক্রমণ করেন, তিনি বের হতে পারেন নি, মারা যান।
তার এই মৃত্যুর কারণ তিনি এক্সেপ রুট জানতেন না। বের হবার রাস্তা জানা ছিল না।
এস্কেপ রুট তৈরি করে রাখা একটা গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজি।
ধরা যাক, আপনার ভালো চাকরী আছে। সব ভালো চলতেছে। তাও, এস্কেপ রুট তৈরি করে রাখুন। যাতে এখানে খারাপ পরিস্থিতি হলে দ্রুত মুভ করতে পারেন।
আপনি কোন ষ্টকে ইনভেস্ট করছেন বা কোন এসেটে ইনভেস্ট করছেন। ইনভেস্টের আগে ঠিক করে রাখুন কখন কী অবস্থায়, কী হইলে আপনি কীভাবে বের হয়ে যাবেন।
অপশনালিটি হইল ফ্রিডম।
আপনার কাছে কী কী অপশন আছে।
২। নিয়ত একই বৃত্ত
ইটার্নাল রেকারেন্স।
ধরা যাক, আপনার ঘুম আসতেছে না। একা একা রাতে বারান্দায় বসে আছেন। ঝিঁঝিঁর ডাক শুনতেছেন তার বেখেয়ালে নিজের জীবন নিয়া ভাবতেছেন। তখন আপনার সামনে উদয় হইল এক দানব।
সে আপনারে বলল, যে জীবন তুমি যাপন করেছো, তা একই ভাবে, একই ধারাক্রমে, এর প্রত্যেকটা হাসি আনন্দ দুঃখ যন্ত্রণা অপমান ব্যর্থতা সাফল্য সমেত, বার বার তোমারে যাপন করে যাইতে হবে।
তখন, আপনার এই দানবরে কি মনে হবে সবচাইতে বড় এক বিভীষিকা, নাকি মনে হবে, এ এক স্বর্গীয় দেবতা, যে আপনারে দিছে মহা এক সুখবর।
এটা একটা থট এক্সপেরিমেন্ট। ফ্রেডরিখ নীতশে একবার হাঁটতে বের হইয়া বিরাট এক পিরামিড আকৃতির পাথর দেখে এইটা ভাবেন।
এর অর্থটা মারাত্মক পাওয়ারফুল।
আপনি যদি ভাবেন আপনার লাইফ, একইভাবে বার বার ঘটতে থাকবে অনন্তকাল, তাহলে আপনি প্রতিটা মুহুর্ত কীভাবে ব্যয় করবেন?
আপনি খারাপ ভাবে ব্যয় করলে, একই জিনিশ কিন্তু আবার এবং আবার, এবং আবার যাপন করে যাইতে হবে। ভালো জিনিশের ক্ষেত্রেও একই কথা।
এখান থেকেই আমর ফাতি, বা ভাগ্যরে ভালোবাসার কথা আসে।
কারণ, আপনার লাইফের অনেক অনেক কাল্পনিক সম্ভাব্যতা থাকতে পারে। কিন্তু, রিয়ালিটি একটাই, যেটা আপনে যাপন করতেছেন। এমনভাবে যাপন করেন, যাতে এর বার বার পুনরাবৃত্তি হইলেও যেন খারাপ হয় না। এই ইটার্নাল রেকারেন্সের মিনিংটা আমি ধরতে পারছিলাম প্রথম মার্ক স্পিটনাজেলের ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ইউনিভার্সার প্রিন্সিপল ডকুমেন্ট থেকে।
আরেকটা, এইটা উপরের দুইটা থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ।
৩। কয়টা সমাধান?
একবার টমাস আলভা এডিসন তার এঞ্জিনিয়াররে বলছিলেন একটা বিশেষ মেশিন ডিজাইন করতে। এঞ্জিনিয়ার ডিজাইন করে নিয়ে আসলেন। এডিসনের মনঃপুত হলো না।
তখন এঞ্জিনিয়ার বললেন, এর বাইরে আর কোনভাবে করা সম্ভব না।
এডিসন তখন কাগজগুলা হাতে নিয়া বললেন, আপনে বলতে চাইতেছেন এই ডিজাইনগুলার বাইরে আর কোনোভাবে করা সম্ভব না?
এঞ্জিনিয়ার বললেন, জি, অবশ্যই।
এই ঘটনা ঘটেছিল শনিবার বিকেলে।
সোমবার সকালে এডিসন অই এঞ্জিনিয়ারের ডেক্সে গেলেন ও স্বাভাবিক ভাবে এক ফোল্ডার কাগজ তার হাতে দিলেন, ও বললেন, এইখানে ৪৮ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ওই মেশিন ডিজাইন করা আছে।
পরে এখান থেকেই ওই যন্ত্রটি তৈরি করার এক ডিজাইন বের করা হয়।
এডিসন একবার বলছিলেন, এইটা বললে বাহুল্য হবে না যে আমি বৈদ্যতিক বাল্ব সম্পর্কিত তিন হাজার ভিন্ন তত্ত্ব বের করেছিলাম যার প্রত্যেকটি ছিল যৌক্তিক, এবং মনে হচ্ছিল ঠিক।
জেফ বেজোস লেক্স ফ্রিডম্যানের সাথে তার সাম্প্রতিক ইন্টার্ভিউতে বললেন, আমি আসলে একজন ইনোভেটর। কোন এক সমস্যা নিয়ে আমি ১০০ ব্যতিক্রমী সমাধান নিয়ে আসি। এর মধ্যে ৯৯ টা টিকে না, কিন্তু একটা হয়ত টিকে যায়, এবং সেখান থেকেই আমি কাজ করতে থাকি।
আমরা সমাধান বের করার ক্ষেত্রে একমাত্র নিখুঁত সমাধান বের করতে যাই, এই এপ্রোচ ভুল।