জীবন ও জগতরে বুঝার ১০৯+ আইডিয়া

জীবন ও জগতরে বুঝার ১০৯+ আইডিয়া

মু রা দু ল ই স লা ম

এই আইডিয়াগুলি লাইফ কীভাবে কাজ করে তা বুঝার জন্য। আপনারে বা আমারে এইগুলা হেল্প করবে বেটার চিন্তা করতে, ভালোভাবে কোন ঘটনারে বুঝতে বা বেটার সিদ্ধান্ত নিতে বা লাইফের স্ট্র্যাটেজিরে নির্দিষ্ট দিকে ফোকাস করতে। এইগুলির অনেক হয়ত আমি অন্যান্য লেখায় উল্লেখ করছি, অনেকগুলি করি নাই, এখানে একটি তালিকাকারে রাখা গেল যাতে বিভিন্ন সময়ে পড়ে মনে রাখা যায়, এবং আপনিও পড়তে পারেন। এবং কিছুদিন পরে পরে আমি এটি আরো আপডেট করার সুদৃঢ় আশা রাখি।

এখানে আইডিয়াগুলি কোন ক্রম অনুসারে নয় বা লাইফ, সাইকোলজি, প্রোডাক্টিভিটি, উদ্যোক্তা ইত্যাদি ভাগ ভাগ করে নয়। যদিও এভাবে দেয়া যেত। কিন্তু তা না করে একসাথেই দিলাম। কারণ সকলই জীবন ও জগত বিষয়ে।

এইসব আইডিয়া কেন দরকার এই বিষয়ে আমার চিন্তাটা হলো, লাইফ খুবই অনিশ্চিত একটা বিষয়, যেখানে র‍্যানডমনেস রাজত্ব করে। হঠাত কোন একটা ঘটনা ঘটে বৃহৎ পরিসরে (যেমন সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস ক্রাইসিস) বা ব্যক্তির লাইফের পরিসরে, যা অপ্রত্যাশিত, এবং যা অনেক কিছুই বদলে দেয়।

ফলে আমি মনে করি সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে আমরা যে বলি কোন সিদ্ধান্ত ভালো বা খারাপ তার আউটকামের উপর ভিত্তি করে, এটা ঠিক না। কারণ আউটকামের উপর অনেক র‍্যানডম ফোর্সের প্রভাব থাকতে পারে।

তাই ভালো সিদ্ধান্ত আমার হিসাবে কোন আলাদা ঘটনা না। ভালো সিদ্ধান্ত একটা সিস্টেম বা প্রসেসের ফল। হুট করে একটা ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। কিন্তু অন এভারেজে একটা ভালো সংখ্যার ভালো সিদ্ধান্তের জন্য মানুষকে একটা সিস্টেম তৈরি করতে হয়। আমি মনে করি সেই সিস্টেম হলো কন্টিনিউয়াস লার্নিং এর সিস্টেম, ইনফরমেশন হাংরির সিস্টেম, ইনফোভরের সিস্টেম। কারণ আপনার কাছে যত বেশি তথ্য থাকবে, তত বিভিন্ন দিক থেকে আপনি দেখতে পারবেন। র‍্যানডম ফোর্সময় দুনিয়ায় ততো ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আপনার হয় গাণিতিক হিসাবেই।

এটাই হলো লজিক এইসব আইডিয়ারাজিকে উপস্থাপনের।

এর কোন আইডিয়া দুনিয়ারে ব্যাখ্যা করে, কোনতা প্রোডাক্টিভিটির ইনসাইট দেয়। সবগুলা একই প্রকৃতির না। কিন্তু সবগুলাই একটা প্রকৃতি বা সিস্টেম নিয়ে, সেটা হলো মানুষের জীবন ও তার সমাজ।

১। জীবন যাপন ও বুঝা বিষয়ে কীয়ের্কেগার্ড মডেল

জীবন যাপন করতে হয় সামনে দিয়া, কিন্তু জীবনরে বুঝতে হয় পেছনে তাকাইয়া। অর্থাৎ ইতিহাস বা অতীত থেকে আপনে জীবনরে বুঝবেন। কিন্তু যাপন করবেন সেই জ্ঞান কাজে লাগাইয়া সামনের দিকে। সামনের দিকে তাকাইয়া জীবন বুঝতে গেলে বুঝা হয়ত যাবে না, কারণ ভবিষ্যত অনিশ্চিত ও অনুমান।

লিংকঃ দার্শনিক কীয়ের্কেগার্ড নিয়ে আমার ডকুফিকশন

২। ১০০ লোকের লাভ (Love) 

এটা পল গ্রাহামের লেখায় মিলে বা সেথ গোডিনের। বা আরো আগে হয়ত ছিল। এর কথা হলো, আপনারে দেখতে হবে যে ১০০ জন লোক আপনারে বা আপনি যা বানাইছেন তা লাভ করে কি না। এক মিলিয়ন লোক আপনারে কোনরকম লাইক করে এর চাইতে ১০০ জন লোক লাভ করে, এইটা বেটার।

৩। ইন্টার্নাল স্কোরকার্ড ও বাইরের স্কোরকার্ড

আপনি নিজের ভেতরের স্কোরকার্ডে জীবন যাপন করবেন না বাইরের মানুষের স্কোরকার্ডের হিসাবে জীবন যাপন করবেন তা গুরুত্বপূর্ন।

নিজের ভেতরের স্কোরকার্ড অনুযায়ী জীবন যাপন করলে আপনি আপনার লাইফ লিড করতে পারবেন। এই লাইফ আপনি একবারই পেয়েছেন। বারে বারে আর আসা হবে না ধরায়। কিন্তু এটি কঠিন রাস্তা। কারণ মানুষ ও সমাজ নানাভাবে আপনাকে প্রেশার দিবে ও নির্ধারণ করতে দিতে চাইবে আপনার পড়ালেখার বিষয়, চাকরি, পার্টনার, এমনকী পুরা লাইফ। বাইরের স্কোরকার্ডের হিসাবে চললে আপনি দিনশেষে আনহ্যাপি এবং বিলো এভারেজ একটা মানুষের লাইফ লিড করবেন।

৪। মধ্য পন্থার বিপদ

অনেক কথা হয় মধ্যপন্থা নিয়ে যে এটা ভালো। সাদা ও কালোর মাঝে একটা গ্রে জায়গা খুঁজে নেয়া। কিন্তু সব কনটেক্সটে এটা চলে না। যেমন কিছু মানুষ মনে করেন পৃথিবী সমতল। আবার আরো অনেক লোক বলেন যে এটা ভুয়া কথা। এই দুই দলের কথায় আপনি মধ্যপন্থা নিয়ে যদি বলেন মাঝে মাঝে পৃথিবী সমতল, তাহলে আপনার অবস্থান ফালতু হয়। অর্থাৎ কিছু ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করার জায়গা থাকে না ধরায়।

৫। সামগ্রিক নার্সিসিজম

যখন মানুষ তাদের নিজস্ব গ্রুপ, ধর্ম, দেশ ও সমাজের গুরুত্ব ও প্রভাবকে বাড়িয়ে দেখে ও দেখায়, এবং বিশ্বাসও করে।

৬। উইজেল ওয়ার্ডস

যেসব লেখা বা বাক্য শুনতে মনে হয় অনেক কিছু বুঝাচ্ছে, কিন্তু আসলে কিছু বুঝায় না।

৭। পিটার প্রিন্সিপল

কর্মচারীরা প্রমোশন পেতে পেতে এমন অবস্থানে পৌছাবে যে অবস্থানের সে যোগ্য না। তখন আবার সেখান থেকে তাদের ডিমোশনও করা যাবে না।

৮। স্টারজিওনের ল

সাধারণত, যেকোন কিছুর ৯০ শতাংশই ফালতু।

এই থট আপনাকে যেকোন ফিল্ডের মূল ১০% এ ফোকাস দিতে সাহায্য করতে পারে। দার্শনিক ড্যানিয়েল ড্যানেট তার ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর টুল বক্সে এই চিন্তাটিকে রেখেছেন। এ নিয়ে আগে লিখেছিলাম ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর জন্য যে সাতটি টুল আমাদের দেন ড্যানিয়েল ড্যানেট।

৯। হেডোনিক ট্রেডমিল বা সুখের অচলাবস্থা

যত ভালো ফল হবে তত আশা বেড়ে যাবে, তাই ভালো ফল দীর্ঘসময় সুখ দেয় না। কারণ ততক্ষণে আশা আরো বেড়ে গেছে।

১০। পলিয়ানা ইফেক্ট

দুঃখের স্মৃতির চাইতে সুখের স্মৃতি মনে রাখা বেশি সহজ।

১১। কলিকাল বা কেয়ামতের আলামত ধারণা

ভাবতে থাকা যে দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে দুনিয়ার। এটা হয় কারণ পলিয়ানা ইফেক্টের কারণে আমরা সুখের স্মৃতি বেশি মনে রাখি ও দুঃখ এবং স্ট্রাগলের স্মৃতি ভুলে যাই এজন্য।

১২। হেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং

কোন কিছু ট্রাই করতে না চাওয়া কারণ ব্যর্থ হলে ইগো আহত হবে এই অবচেতন ভয়।

কোন ছাত্র আছে হয়ত পড়ালেখায় ভালো এটা সে মনে করে, দেখা যায় না পড়ে পরীক্ষা দেয়। যাতে ভালো ফলাফল হলে বলতে পারে আমি না পড়ে ভালো ফলাফল করতে পারি। তাতে তার নিজের ইগো আরো বাড়ে। আর খারাপ হলে বলতে পারে, আমি তো পড়িই নি। যাতে তার ইগো সমুন্নত থাকে। এইভাবে সে নিজেরে আবদ্ধ করে রাখে। এটা তার সেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং।

মানুষ কখনো চায় না নিজের কাছে তার সম্মান ধ্বংস হয়ে যাক। এই সম্মান বাঁচানোর জন্য সে বাহ্যত নিজের ক্ষতিও করতে পারে। সেলফ হ্যান্ডিক্যাপিং নিয়ে আরো।

১৩। প্ল্যানিং ফ্যালাসি

প্ল্যান বা পরিকল্পণা করার সময় মানুষ ধরে নেয় যে সব কিছু স্মুদলি হবে। অভার অপটিমিজম বায়াসের কারণে এটি হয়।

১৪। আমি একজন সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তি

অথরিটি মানুষেরা “আমি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে” বলে যখন বক্তব্য দেন, তখন তিনি আসলে অথরিটি হিসাবেই নিজের মত প্রতিষ্ঠিত করতে দেন। সাধারণ মানুষের অভিধা আনেন মানুষের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে। ছোটদের লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল রাজনীতি বা সমাজ বিষয়ক নানা ইস্যুতে এই ফ্যালাসি প্রায়ই ব্যবহার করেন। তিনি বলেন আমি বুদ্ধিজীবী নই, বা আমি বাচ্চাদের জন্য লিখি। কিন্তু এখানে পয়েন্ট, তিনি রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে অপিনিয়ন পিসই লেখছেন, এবং মানুষকে একটা ভিউয়ে কনভিন্স করাতে চাচ্ছেন।

আরো অনেক লেখক এটা করেন। পলিটিশিয়ানরা করেন।

১৫। পলিটিক্যাল কারেক্টনেস

অনেক ব্যাখ্যা আছে, অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়। এখানে আমি ব্যবহার করব, শব্দের ব্যবহার, বাক্য বা অর্থ বা উপরিতলের অপ্রাসঙ্গিক কিছু পরিবর্তন করে মূল সমস্যার পরিবর্তন হয়েছে বলে ধরে নেয়া। বা সমস্যা নিয়ে আলোচনায় উপরিতলের ঐ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করে মূল বিষয়ের দিকে না যাওয়া।

যেমন, নারীদের অধিকার নিয়ে আলাপে একজন বললেন, এখন থেকে সরকারী ফর্মে পিতার নামের আগে মাতার নাম দিতে হবে।

১৬। জিতা নৌকার সমর্থন বা আউটকাম বায়াস

মানুষ দেখে আপনি জিতছেন কি না। কীভাবে জিতলেন তা না। ফলে ব্যাড প্রসেস অবলম্বণ করে জিতলেও কেউ মানুষের সমর্থন পায়। গুড প্রসেস অবলম্বণ করে সাকসেস না পেলে মানুষ তারে ভুয়া বলে। এইজন্যই সমাজে খারাপ জিনিস বা প্রসেস ছড়ায়।

মানুষ যদি বুঝতে পারে কেউ জিতছে বা জিতবে তাহলে তাকে সমর্থন করতে থাকে।

১৭। এপিফ্যানি মডেল

এটা আমার বানানো আরেক মডেল। আপনি একসময় বুঝতে পারবেন যে দুনিয়া এন্ড টু এন্ড করাপ্ট। মানে আপাদমস্তক ফালতু। তখন আপনার রিয়েকশন কী হবে?

আমার পরামর্শ হলো, আপনি প্রচলিত সিস্টেমেই থাকুন, নিজের বিচার বুদ্ধি ও বিদ্রোহ ভেতরে রেখে। কারণ তা না হলে, ঐ বয়েসেই বিদ্রোহ করে বসলে আপনি ছিটকে পড়তে পারেন, এবং জিনিয়াস ও খুব লাকি না হলে আর উঠতে পারবেন না। দুনিয়া কমন মানুষের সিস্টেম। আপনাকে তাদের গেইমে খেলতে হবে যতক্ষণ না আপনি নিজে গেইম নির্ধারণ ও নিয়ম বানানোর মত ক্ষমতায় না যান।

১৮। স্কিন ইন দ্য গেইম মডেল

দেখবেন যিনি উপদেশ বা পরামর্শ দিচ্ছেন তার স্কিন আছে কি না ঐ গেইমে। মানে আপনার লস হলে তার ক্ষতি হবে কি না। প্রাচীন রোমে গম্বুজ নির্মানের পরে উদ্বোধনী দিনে যিনি বানিয়েছেন সেই কারিগরকে নিচে দাঁড়াতে হত। এটা স্কিন ইন দ্য গেইম রাখার প্রচেষ্টা।

সমাজে যত ক্ষেত্রে স্কিন ইন গেইম বজায় থাকবে তত সমাজে দুর্নীতি কমবে। যেমন, রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতিদের সন্তান দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম কমার সম্ভাবনা বাড়ে। যুদ্ধের সিদ্ধান্ত যারা নেয় তারা যুদ্ধের সামনে থাকলে ও তাদের সন্তানাদির এতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে, যুদ্ধ না হবার সম্ভাবনা বাড়ে।

নাসিম তালেবের স্কিন ইন দ্য গেইম নিয়ে লেখা

১৯। ইনসেন্টিভস

টাকার বা অর্থ সম্পদ দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয়। বিস্ময়কর ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত ও আচরণ বদলাতে পারে ইনসেন্টিভস।

কোন ব্যক্তি যদি কোন কিছু না বুঝার জন্য টাকা পায়, তাহলে সব যুক্তি হাজির করলেও সে ঐ জিনিস বুঝবে না।

খুব কম মানুষ ইনসেন্টিভস দ্বারা প্রভাবিত না হতে পারেন। খুবই কম এই সংখ্যা।

২০। প্রবির মিত্র বা আনোয়ার হোসেনের গুরুত্বহীনতার সমস্যা

বাংলা ফিল্মে প্রবির মিত্র বা আনোয়াস হুসেন বাবার চরিত্রে অভিনয় করতেন। প্রায় সময় দেখা যেত তারা সৎ এবং ভিলেনের ভয় কিংবা লোভে নত হতেন না। ফলে ভিলেন তাদের খুন করত, বা জেলে ভরে দিত নানা কারসাজিতে।

এর প্রতিশোধই নিত তার সন্তান, যিনি নায়ক।

গল্পের পরম্পরায় আমরা নায়ককে যেভাবে মূল্যায়ণ করি সেরকম নায়কের বাবাকে করি না। কারণ তিনি ফাইট করতে পারেন নি। মারা গেছেন বা জেলে গেছেন।

মানুষ এরকমই। সৎ এবং নির্ভীক হলে আপনাকে মনে রাখবে তা না। শক্তিশালীও হতে হবে। গল্পের প্যাটার্ন এই শিক্ষাই দেয়।

কিন্তু সত্যিকার অর্থে নায়কের বাবাই গল্পের স্পিরিট। যিনি সাহসী, সৎ এবং ভয়হীন ছিলেন বিপদের মুখেও।

সমাজ যে এইরকম তাদের ক্রাইটেরিয়ামত না হলে হিরোরে হিরো বলে না, এই খেয়াল রাখা জরুরী।

২১। মট বা খন্দক

মধ্যযুগে দূর্গ রক্ষার জন্য এর চারপাশে খাল খনন করা হতো। যাতে শত্রুরা সহজে আক্রমণ করতে না পারে। বিজনেসের ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে, আপনার ইউনিক এডভান্টেজ কী, যা প্রতিযোগীদের থেকে আপনাকে দীর্ঘসময় এগিয়ে রাখবে। মট নিয়ে বিস্তারিত লেখা।

২২। পারেতোর নীতি

৮০ শতাংশ ফল আসে ২০ শতাংশ কারণে।

আপনার ৮০ শতাংশ সফলতার কারণ আপনার অভারল কাজের মধ্যে কোন বিষয়ে ২০ শতাংশ কাজ। ২০ ভাগ কাজ থেকেই বিজনেসের ৮০ ভাগ লাভ হয়। ২০ ভাগ লোকের কাছেই ৮০ ভাগ সম্পদ থাকবে। ২০ ভাগ জায়গাই ৮০ ভাগ সমস্যার কারণ ইত্যাদি।

ভিলফ্রেদো পারেতো একটা কৌতুহল উদ্দীপক জিনিস আবিষ্কার করেছিলেন তার বাগানে, ১৮০০ সালের শেষের দিকে। তিনি দেখেছিলেন যে তার বাগানের কিছু মটরশুটি গাছ থেকেই প্রায় ৮০ ভাগ মটরশুটি উৎপন্ন হয়।

তিনি এটি নিয়ে ভাবতে লাগলেন। গাণিতিক সমীকরণ করলেন। নিজের দেশ ইতালির হিসাব নিয়ে দেখলেন ৮০ ভাগ জমি ২০ ভাগ মানুষের দখলে। ব্রিটেনের ইনকাম ট্যাক্স বিশ্লেষণ করে দেখলেন ৩০ ভাগ মানুষ মোট আয়ের ৭০ ভাগ করে থাকেন। আরো নানা জায়গায় তিনি পরীক্ষা করেন। সব জায়গায় একই ফল পাবেন। বেশীরভাগ সম্পদ, অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে।

পারেতো’র এই নীতিতে ৮০/২০ রুল বলা হয়। এটি আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা গেছে কাজ করে। যেমন, ফুটবল বিশ্বকাপে ৭৭ টি দেশ অংশ নিয়েছে, কিন্তু ব্রাজিল, জার্মানী ও ইতালি, এই তিনটি দেশ ২০ টি টুর্নামেন্টের ১৩টিই জিতে নিয়েছে।

অর্থাৎ, খুব ছোট সংখ্যার একটা বড় ইফেক্ট থাকে সিস্টেমে।

২৩। সারভাইভরশীপ বায়াস

মানুষ সফলদেরই মনে রাখে। একই কাজ করেও যার ব্যর্থ হয়েছে তাদের ভুলে যায়। সাফল্যের অনুপ্রেরণামূলক গল্প থেকে বাঁচবেন কীভাবে এ নিয়ে লিখেছিলাম আগে।

২৪। পিগম্যালিওন ইফেক্ট

অতি আশাবাদের কারণে পারফরমেন্স ভালো হতে দেখা যায়।

২৫। গোলেম ইফেক্ট

যখন টিচার বা সুপারভাইজর আশা কম থাকে তখন অধীনস্তদের পারফরমেন্স খারাপ হয়।

২৬। নর্মাল স্টেট বা সাম্যাবস্থা

সাইকোলজিস্ট কায়নেম্যানকে একবার সেনাবাহিনীর একজন অফিসার এই সমস্যার কথা বলেছিলেন। যখন কোন সেনা খুব ভালো করে, তার প্রশংসা করলে দেখা যায় পরে তার পারফরমেন্স খারাপ হয়। আবার কোন সেনা খারাপ করলে, তারে ঝাড়ি দিলে পরে দেখা যায় তার পারফরমেন্স ভালো হয়। এর কারণ কী?

কায়নেম্যান অবজার্ভ করে দেখলেন, এবং তার ব্যাখ্যা জানালেন। যেসব সৈন্য নিয়মিত ভালো করে, তারা হঠাত খারাপ করলে ঝাড়ি খায়, এবং পরে সে তার আগের অবস্থাতেই ফিরে যায়। অর্থাৎ ভালো করতে থাকে।

আবার যেসব সৈন্য হঠাত ভালো করে ফেলে, প্রশংসা পেলেও পরে নিজের আগের অবস্থায় ফিরে যায় অর্থাৎ এভারেজ পারফরমেন্স করতে থাকে।

২৭। হিন্ডসাইট বায়াসের ভ্রান্তি

কোন কিছু ঘটার পরে মনে হয়, আমি জানতাম এটা ঘটবে।

কারণ তার তখন বিভিন্ন ক্লু চোখে পড়ে, যেগুলা সে আগে দেখেছিল, তাই ভ্রান্তভাবে তার মনে হয় যে এই ঘটনা ঘটতো এটা সে জানতো।

কিন্তু ঘটনাটি না ঘটলে ঐ দেখা ক্লু গুলি তার মনেই থাকতো না।

এজন্য কোন কিছু সাকসেসফুল হলে, বা কোন খারাপ কিছু হলে (যেমন, স্টক মার্কেট ধ্বস) মানুষ ঘটনাটি ঘটার পর কেন ঘটল তার ব্যাখ্যা হাজির করে।

২৮।  ক্লার্কের তৃতীয় সূত্র

যথেষ্ট পরিমাণ ভালো কোন প্রযুক্তিকে জাদু বা ম্যাজিক থেকে আলাদা করা যায় না।

২৯।  লাকি সারফেইস এরিয়া বা লাকি নেটওয়ার্ক

এটি জেমস রবার্টস নামে একজন ডেভলাপারের আইডিয়া, এবং একইরকম আমার আইডিয়া ছিল এই সাইট শুরু করার পর থেকে।

এটির মূল কথা হলো, আপনি যখন কোন বিষয়ে নিয়ে প্যাশনেট থাকেন, তা নিয়ে কাজ করেন, তখন আপনি কিছু লোককে আকৃষ্ট করেন। এদের নিয়ে আপনার লাকি সারফেইস এরিয়া ঘটিত হয়।

আপনি কোন বিষয়ে প্যাশনেট এবং কাজ করছেন মানে ঐ বিষয়ে আপনি এক্সপার্ট হয়ে উঠবেন।  যারা আপনার সাথে যুক্ত হয়েছে তাদের অনেকে এই ভ্যালুটি বুঝতে পারবে। তারা এটাকে বাড়াবে। হয়ত আপনি এমন লোক পাবেন যে আপনাকে হায়ার করবে কাজে বা আপনার ব্যবসায় ইনভেস্ট করবে বা অন্য যেকোন কাজে লাগবে। এছাড়া, আমি এটাকে এক্সপান্ড করে বলি যে, আপনার যে জার্নি আছে, আপনি তাতে ভ্রমণ করে পৌছাতে পারবেন কি না এটা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ দুনিয়া অনিশ্চিত এবং অস্বাভাবিক কিছু ঘটে যেতে পারে। আপনার জার্নিতে যখন আপনি কিছু লোককে পাবেন, তাদের অনেকে থাকবে প্রতিভাবান এবং এই জার্নিতে যুক্ত হবে। আপনি কোন কারণে ব্যর্থ হলেও, সে বা তাদের কেউ সফল হতে পারে। যে লক্ষ্যে আপনি যেতে চেয়েছিলেন সেখানে যেতে পারে। যাওয়ার পরে আপনি যা করতে চেয়েছিলেন তার অনেক কিছুই সে করতে পারে। এভাবে বেশি লোককে লাকি সারফেইস এরিয়ায় যুক্ত করে আপনি আপনার সফলতার সম্ভাবনাকে অনেক বাড়িয়ে দেন। যেটা হলো, আপনি সফল না হতে পারলেও, তাদের একজন সফল হলেও, সেটা একরকম আপনার সফলতাই।

৩০। ছয় লাইনে মানুষের আচরণ বা চিয়ালদিনি-৬

রেসিপ্রোকেশন – মানুষ তার সাথে ভালো করা হলে সে তা ফেরত দিবে।

কমিটমেন্ট – মানুষ কমিটমেন্ট করলে তা রাখতে চেষ্টা করে।

সোশ্যাল প্রুফ – অন্য মানুষরা কিছু করতে দেখলে তা করে। [ সোশ্যাল প্রুফ ও ভীড়ের প্রজ্ঞা নিয়ে লেখা।]

অথরিটি – অথরিটিরে মানে। অথরিটির প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত লেখা

লাইকিং – যারে লাইক করে তার দ্বারা পারসুয়েড হয় সহজে।

স্কারসিটি – স্টক সীমিত, বা কোন জিনিস নাই হয়ে যাচ্ছে মনে হলেই তার চাহিদা বাড়ে।

৩১। প্যারাডক্স অব চয়েজ

চয়েজে অপশনের আধিক্য হলে উদ্বেগ বা অশান্তি বেশী হয়।

৩২। নেটয়ার্ক ইফেক্ট

আপনার কাছে একটা মোবাইল আছে কিন্তু দুনিয়ার আর কারো কাছে নাই। তাহলে আপনার মোবাইলের কোন ভ্যালু নাই। যখন অন্যদের কাছেও মোবাইল থাকবে তখনই আপনার মোবাইলের ভ্যালু হবে, অর্থাৎ আপনি তাদের ফোন দিয়ে কথা বলতে পারবেন।

এরকম নেটওয়ার্কে যত মানুষ বাড়ে তত নেটওয়ার্কের ভ্যালু বাড়ে। এমন অবস্থারে বলে নেটওয়ার্ক ইফেক্ট।

জীবনের নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে এই ইফেক্ট কাজ করছে।

৩৩। কার্স অব নলেজ

যে বিষয়ে নিয়ে কথা বলছেন, ধরে নেয়া যে যাদের সাথে বলছেন বা যাদের উদ্দেশ্যে লেখছেন তাদের বুঝার জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড নলেজ আছে। কার্স অব নলেজ নিয়ে বিস্তারিত

৩৪। ভিও এর সূত্র

ফিনিশ সাংবাদিক ও সংসদ সদস্য ভিও এর একটা ল আছে কমিউনিকেশন নিয়া, যেটারে সহজ ভাবে বলা যায় সব কমিউনিকেশনই মিস কমিউনিকেশন।

কারণ, আমরা যেমনে কমিউনিকেট করি এখানে স্তরে স্তরে সমস্যা আছে। প্রথমত অনুভূতি। তারে ভাষায় অনুবাদ করা, ও ছাইড়া দেয়া। রিসিভার তার নিজের চিন্তা ক্ষমতা, ভাষা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তা গ্রহণ করবেন। এছাড়া আবেগ, অনুভূতি, পরিস্থিতি ইত্যাদি নানা ভ্যারিয়েবল কাজ করে। ফলে কমিউনিকেশন ইজি না।

৩৫। টেনশন এন্ড রিলিজ

এটা মিউজিক থিওরির বিগ আইডিয়া। মিউজিক আসলে টেনশন ও রিলিজের মাধ্যমে গঠিত। আপনি প্রথমে টেনশন তৈরি করেন, এরপর তা রিলিজ করেন, এভাবেই সুর হয়।

একইভাবে যেকোন পলিটিক্যাল স্পিচ, মার্কেটিং এর বিজ্ঞাপন, শেয়ার বাজার সিচুয়েশন বা সামাজিক বাস্তবতায় একটা টেনশন ও রিলিজ থাকে।

৩৬। মার্জিন অব সেইফটি

এঞ্জিনিয়ারিং এর একটি মূল কনসেপ্ট। কোন ব্রিজ এ দিনে সর্বোচ্চ ৫০০০ টন লোড পড়বে। ব্রিজ ডিজাইনের সময় ৫০০১ টন ধারণ ক্ষমতা রেখে ব্রিজ বানানো হয় না। বানানো হয় আরো বেশি ধারণ ক্ষমতা রেখে, প্রায় ১০০০০ টন। এই যে বেশী ৫০০০ টন লোড ধারণ ক্ষমতা রাখা হয়, এটি মার্জিন অব সেইফটি।

যেকোন স্ট্রাকচারে এটা মানা হয়। লাইফের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। অনাকাঙ্খিত বিপদজনক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতিমূলক একটা মার্জিন রাখা।

৩৭। স্টিকি রুল বা ক্লিফ হ্যাংগার

কোন কিছু ভাইরাল হওয়া মানেই এটি টিকে থাকবে এমন না। দুনিয়ার ইতিহাস বলে, দীর্ঘকাল টিকে থাকতে লাগে ক্লিফ হ্যাংগার বা স্টিকিনেস। এজন্য আলিফ লায়লা বা এরাবিয়ান নাইটস দীর্ঘকাল ধরে ভাইরাল।

৩৮। মাইনোরিটি রুল

নাসিম তালেবের স্কিন ইন দ্য গেইম বইয়ে এই আইডিয়ার বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে।

কোন একটি সিস্টেম ভালো করতে লাগে খুবই অল্প সংখ্যক সৎ, সাহসী, স্কিন ইন দ্য গেইম থাকা মানুষ। কোন সিস্টেম ঠিকমত ফাংশন করতে না পারলে বুঝতে হবে ঐ সিস্টেমে এই অল্পসংখ্যক মানুষই নেই।

৩৯। কোবরা ইফেক্ট

যখন কোন প্রবলেম সমাধান করার জন্য নেয়া পদক্ষেপ প্রবলেমকে আরো গুরুতর করে। এটা প্রায়ই হয় ভুল ইনসেন্টিভস এর জন্য। কথিত আছে দিল্লীতে ব্রিটিশ আমলে কোবরা বা গোখরা সাপের উপদ্রব কমাতে অফিসাররা ঘোষনা দেন, যারা সাপের লেজ কেটে এনে দেখাতে পারবে তাদের পুরস্কার দেয়া হবে। কিন্তু দেখা যায়, অনেক মানুষ লেজ নিয়ে আসছে কিন্তু সাপের উপদ্রব কমছে না। পরে তদন্তে দেখা যায় মানুষেরা লাভের জন্য সাপ পালন শুরু করেছেন। একে ক্যাম্পবেলের লও বলা হয়।

৪০। স্ট্রিটলাইট ইফেক্ট বা বাতির নিচে খোঁজা

এটি মানুষের প্রবণতা বিষয়ক একটি আইডিয়া। অনেক পুরাতন। সুফিরা ব্যবহার করতেন। মোল্লা নাসিরুদ্দিন ব্যবহার করেছেন।

এক মাতাল লোক রাস্তার বাতির নিচে কিছু খুঁজছিল। পুলিশ এসে জিজ্ঞেস করল, কী খুঁজতেছ? লোকটি বলল, চাবি হারাইছি, তাই খুজি।

পুলিশও কিছুক্ষণ খুঁজল। এরপর জিজ্ঞেস করল, এখানেই কি চাবি হারাইছ?

লোকটি বলল, না, হারাইছি তো পার্কে।

পুলিশ বলল, তাইলে এখানে খুঁজো কেন?

লোকটি উত্তর করল, কারণ এখানেই তো আলো।

এই প্রবণতার কারনে প্রশাসন, বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষেরা ভুল জায়গায় খোঁজেন অনেক সময়, যা ভুল ব্যাখ্যা তৈরি করে।

৪১। ৫ শিম্পাঞ্জি থিওরি

জুলজির আইডিয়া। শিম্পাঞ্জির আচরণ, মুড ইত্যাদি সে যে পাঁচটা শিম্পাঞ্জির সাথে চলাফেরা করে তাদের আচরণ থেকে অনুমান করা যায়।

মানুষের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হতে পারে।

৪২। মিমেটিক থিওরি ও স্কেইপগোট মেকানিজম

ফ্রেঞ্চ-আমেরিকান থিংকার রেনে জিরার্দ এর আইডিয়া। মানুষের ডেজায়ার আসে অন্যের ডেজায়ার দেখে। অন্যেরা বাড়ি কিনছে দেখে তার বাড়ির আকাঙ্খা আসে। এভাবে সোশ্যাল প্রুফের কারণে মানুষ যা সবাই করছে তা করতে থাকে। এবং আকাঙ্খা করতে থাকে। কিন্তু সমাজে সবাই সব পায় না। ফলে সমাজে একটা অশান্তি থাকে। এই অশান্তি যখন বাড়ে, তখন এই অশান্তি নিরসন কল্পে কোন একটি সমস্যাকে মানুষ সামনে আনে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন জাতি, গোত্র, বা মানুষকে। তাকে দোষী সাব্যস্থ করে, ও স্কেইপগট মেকানিজমের মাধ্যমে তার উপর চড়াও হয়, বা হত্যা করে। এই প্রক্রিয়া অনবরত চলছে সভ্যতার শুরু থেকে। এটাই সভ্যতা ও সকল রীতি নীতি তৈরি করেছে।

জিরার্দের এই আইডিয়া প্রতিযোগিতা ও সমাজ বুঝতে ব্যবহার করা যায়। মিমেটিক থিওরি নিয়ে বিস্তারিত লেখা।

৪৩। এক্সপেরিয়েন্সিং সেলফ এবং রিমেম্বারিং সেলফ

মানুষ প্রতিদিন যা এক্সপেরিয়েন্স করে তার সব স্মৃতিতে জমা থাকে না। স্মৃতিতে জমা থাকে খুবই খারাপ এবং খুবই ভালো অর্থা পিক-এন্ড ঘটনা। এবং অনেকদিন পরে মনে করলে ঐ পিক-এন্ড ঘটনার আলোকেই মানুষ ঐ অভিজ্ঞতাটাকে দেখে।

৪৪। অডিসির আত্ম-নিয়ন্ত্রণ

সেলফ-কন্ট্রোলের একটি আইডিয়া মিলে হোমারের অডিসিতে। নায়ক অডিসি ট্রয়ের যুদ্ধে জিতে তার রাজ্য ইথাকায় ফিরছিলেন। তিনি গর্বিত হয়ে কিছু উক্তি করায় সমুদ্র দেবতা পসেইডন তাকে নানা বিপদ দিয়ে সেই যাত্রা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে তুলেন। একটা বিপদ ছিল সাইরেনদের দ্বীপের কাছে। সাইরেনেরা অর্ধেক পাখি আর অর্ধেক সুন্দরী নারী এমন। এরা মনোমুগ্ধকর সুরে গান গাইত। সেই গান শুনে জাহাজ দ্বীপের কাছে গিয়ে বিধ্বস্ত হতো।

সাইরেন এবং ওডিসি
পেইন্টিং বাই জন উইলিয়াম ওয়াটারহাউজ

অডিসি জানতে পারলেন সাইরেনদের দ্বীপ সামনে। তার ইচ্ছা তাদের গান শোনার। অডিসির চরিত্রের আরেক বৈশিষ্ট্য হলো তার কৌতুহল। অডিসি তার নাবিকদের কানে মোম ভরে রাখার নির্দেশ দিলেন। আর তাদের বললেন তাকে শক্ত করে বেঁধে রাখতে। সাইরেনেরা যখন গান গাইবে তিনি বাঁধন ছুটানোর জন্য অনুনয় করলেও তারা যেন আরো শক্ত করে বাঁধে।

এইভাবে বুদ্ধিমান অডিসি সাইরেনদের গান শুনেও নিরাপদে ফিরতে পেরেছেন, একমাত্র মানুষ যার এই সুযোগ হয়েছে সম্ভবত।

এই মিথের গল্পটি আত্ম নিয়ন্ত্রণের যে মডেলটি সামনে আনে তা হলো, নিজের ইমোশন বা আবেগকে অস্বীকার করলে হবে না। বরং একে স্বীকার করে নেয়াই এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার স্ট্র্যাটেজি বের করার প্রথম ধাপ। আর দ্বিতীয়ত, নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজেকে বাঁধন, বা নির্দিষ্ট বাঁধার পেছনে রাখতে হবে। যেমন, ফেইসবুক ব্যবহার কমানোর উপায় ফেইসবুক এপ মোবাইলে না রাখা।

৪৫। গেইন ও লস বিষয়ক বিহেভিওরাল মডেল

মানুষের সমপরিমাণ গেইন থেকে যে সুখ হয়, তার থেকে বেশি পেইন হয় একই পরিমাণ লস হলে। এটাই বিহেভিওরাল ইকোনমিক্সের শুরুর কথা।

৪৬। বিবর্তনীয় সাইকোলজি

বর্তমান মানুষের আচার আচরণ এবং ব্রেইন তৈরি হয়েছে তাদের পূর্বপুরুষের জঙ্গলের সমাজে যে ধরণের সমস্যায় পড়তো, সেগুলির সাথে মোকাবেলা করতে করতে। ফলে, সেই আলোকেই মানুষের আচরণ প্রবাহিত হয়, অবচেতনে।

বিবর্তনীয় সাইকোলজির নানা ব্যাখ্যা নিয়ে সেরা একটা বই জ্যারেড ডায়মন্ডের থার্ড শিম্পাঞ্জি, যেটি নিয়ে আমি লিখেছিলাম

৪৭। গোল, সিস্টেম, হ্যাপিনেস

বড় গোল ঠিক করে এর দিকে এগুনোর চাইতে ছোট ছোট গোল ঠিক করে সিস্টেম ঠিক করে এগুনো ভালো। এতে প্রতিটা ছোট গোল অতিক্রমের সাথে সাথে অনুপ্রেরণা আসে। হ্যাপিনেস বাড়ে।

৪৮। দা ভিঞ্চি অভিশাপ

কোন একটা দিকে একজন ভালো হলে অন্যদিকে তাকে এর জন্য মূল্য দিতে হয়। দা ভিঞ্চি রেনেসা ম্যান। বিভিন্ন দিকে তার আগ্রহ ছিল। এর জন্য মূল্য তাকে দিতে হয়েছে। সম্ভবত তার মনযোগের সমস্যা ছিল। কোন জিনিসে দীর্ঘকালীন মনযোগ দিতে পারতেন না। এই কারণে অনেক চিত্রকর্মের কাজ তিনি পেয়েও করতে পারেন নি। অর্থনৈতিক কেরিয়ারে ক্ষতিতে পড়েছেন। এবং তার ঘুম একটানা আট ঘন্টা ছিল না।

৪৯। দা ভিঞ্চি বা রেনেসা ম্যান বিভ্রান্তি

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি আজকের সময়ে জন্ম নিলে হয়ত জ্ঞানের বিভিন্ন দিকে তার যে অবদান, এগুলি রাখতে পারতেন না। কারণ বর্তমান সময়ে জ্ঞান অনেক এগিয়ে গেছে। এই অবস্থায় নতুন কিছু বের করা জটিলতর।

ফলে, এই সময়ে কেউ ভিঞ্চির মত হতে চাইলে তাকে অনেকটা হতাশ হতে হবে, যদি না তিনি সুপার জিনিয়াস হন যা খুব রেয়ার।

অনেক ফিল্ড আছে যেখানে এক্সপার্ট জেনারালিস্ট বা বিভিন্ন দিকে জানা ব্যক্তি জরুরী। যেমন, বুদ্ধিজীবীতা, ফিলোসফি, লেখক, সমাজ চিন্তক, ইনভেস্টর ইত্যাদি। আবার অনেক ফিল্ড আছে যেখানে বিশেষজ্ঞ জরুরী। যেমন, হার্ট সার্জারী করতে ঐ বিষয়ে এক্সপার্টই লাগে, জেনারাল কাউকে আমরা নেই না।

৫০।  রেগ্রেট মিনিমাইজেশন মডেল

ডিসিশন মেকিং এর সময় নিজের ভবিষ্যত সেলফ কে কল্পনা ধরা। ধরে নেয়া যে আপনার বয়স আশি বছর। ঐ বয়েসে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে ঐ জিনিস করে ফেইলার হলে আমার অনুশোচনা হবে কী, নাকি বেশি অনুশোচনা হবে ঐটি না করলে?

জেফ বেজোস যখন ইন্টারনেট বিজনেস শুরু করলেন, এটা ইন্টারনেটের শুরুর দিকের ঘটনা। পাবলিকলি শুরু অর্থাৎ হিউজ লাইফ চেঞ্জিং প্রযুক্তি হিসাবে আবির্ভূত হবার সময়কালের। কিন্তু এটা যে এমন হবে তা তো নিশ্চিত ছিল না বেশিরভাগেই।

বেজোস ইন্টারনেট বিজনেস বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভেবেছিলেন নিজেকে আশি বছরের। তারপর ভেবেছিলেন এই আশি বছরে এসে তিনি কি ঐ বিজনেস শুরু করে ব্যর্থ হলে বেশি অনুশোচনায় ভুগবেন, নাকি ইন্টারনেট নামক জিনিসটিতে অংশ না নিলে, এবং সেটি বিশাল হয়ে গেলে, তখন তার বেশি অনুশোচনা হবে?

এভাবে ভাবায় তার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ছিল।

৫১। বেইজ রেইট

কোন ঘটনা ঘটনার একটা আনুমানিক ধারণা আপনি পেতে পারেন বিস্তৃত পরিসরে এমন ঘটনা কত ঘটে তার হিসাবে।

যেমন, কোন স্টার্ট আপ সফল হবে কি না অনুমান করতে পারেন একই ধরণের ১০ টা স্টার্টাপের মধ্যে কয়টা সফল হয়েছে তার হিসাবে।

আপনি বাজারে গেলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা, আপনার মত কতোজন বাজারে গিয়েছিলেন ও তাদের কয়জন করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন এ থেকে অনুমান করা যায়।

কোন মটিভেশনাল স্পিকারের বক্তব্য শুনে আপনি সফল হতে পারবেন কি না এর সম্ভাবনা, আপনার মত কতজন শুনেছেন ও তার কতজন সফল হয়েছেন এ থেকে ধারণাযোগ্য।

৫২। স্টোরিটেলিং এনিম্যাল

মানুষের প্রায় সকল কিছুই স্টোরি কেন্দ্রিক। স্টোরি নিয়ে বিস্তারিত এই লেখাটি।

৫৩। সেন্টার অব দ্য সার্কল বিভ্রান্তি বা স্পটলাইট ইফেক্ট

একজন ব্যক্তি নিজেকে সেন্টারে রেখে চিন্তা করে। ফলে তার কিছু কিছু জিনিস (ভালো বা খারাপ) সে ভাবে অন্য সবাই খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা হয় না। কারণ অন্য ব্যক্তিরাও নিজেদের সেন্টারে রেখে নিজেদেরটা নিয়েই ভাবছে।

ধরা যাক একজন ব্যক্তি স্কুলে থাকতে খুব মার খেয়েছিলেন শিক্ষকদের, ক্লাসের সামনে। তার এটি মনে থাকতে পারে। তিনি ভাবতে পারেন ক্লাসের অন্যেরা এটি অনেক বছর পরেও মনে রেখেছে। কিন্তু আসলে অন্যদের অনেকেরই এটা মনে থাকবে না, যাদের থাকবে তাদের ক্ষেত্রেও অত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে থাকবে না।

৫৪। মোরাল লাক

লাক বা ভাগ্যের কারণে মানুষ সম্মান, সম্পদ, প্রতিপত্তি ইত্যাদি যেমন পায়, তেমনি কেবল ভাগ্যের গুণে কেউ নৈতিক কাজ করে ফেলে। এটাকে বলে মোরাল লাক।

এসব মানুষ আসলে নৈতিক নয়, কেবলই লাকি। এদেরকে নৈতিক হিরোর মর্যাদা দিলে আসলেই যারা স্বইচ্ছায় ঝুঁকি নিয়ে নৈতিক কাজ করেছেন তাদের অবমূল্যায়ণ হয়।

৫৫। প্রযুক্তি বিষয়ে পোস্টম্যান

নীল পোস্টম্যানের প্রযুক্তি বিষয়ক কিছু আইডিয়া (লিংক)। প্রযুক্তিগত চেইঞ্জ হলো ফাউস্টিয়ান বার্গেইন। অর্থাৎ প্রযুক্তি কিছু দেয়, বিনিময়ে কিছু নেয়। নিরপেক্ষ নয়। সমাজের কোন অংশ পায়, কোন অংশ হারায়।

প্রতিটা প্রযুক্তির ভিতরে একটি বা একাধিক পাওয়ারফুল আইডিয়া থাকে।

প্রযুক্তিগত চেইঞ্জ ইকোলজিক্যাল। এক জারের পানিতে কিছু রঙের ফোটা ঢাললে আলাদাভাবে আপনি রঙ পান না, বরং তা সমস্ত জারের পানির কনার রঙই বদলে দেয়। প্রযুক্তিগত চেইঞ্জ এমন। নতুন কিছু এড করে বসে থাকে না একা। বরং সমস্ত কিছুই বদলে দেয়।

প্রযুক্তিগত ইনোভেশন একসময় মিথিক অবস্থান নেয়। প্রাকৃতিক অবস্থার মত। মানুষ মনে করে এটি এমনই ছিল, বা হবার কথা ছিল, প্রকৃতি যেমন। যা খুবই বিপদজনক। কারণ তখন মানুষ ওই প্রযুক্তির ভালো মন্দ নিয়ে আর ভাবে না।

৫৬। স্মল ও বিগ নাম্বারের নিয়ম

মানুষ খুব বড় ও খুব ছোট নাম্বারের খেলা বুঝে না (কায়নেম্যান)।

স্যাম্পল সাইজ যখন ছোট হবে তখন যে ফলাফল আসবে তা কখনো নির্ভরযোগ্য নয়। সম্ভাব্যতার নির্ভরযোগ্য ফলের জন্য স্যাম্পল সাইজ বড় হতে হয়।

আপনি একটা কয়েন এর দুই পিঠ সমান কি না দেখতে ৫ বার টস করে দেখলেন ৫ বারই হেড উঠেছে। এ থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন কয়েনটি ব্যালেন্সড না। এমন সিদ্ধান্ত ভুল হবে। কারণ ৫ বার হেড উঠা অস্বাভাবিক হলেও অসম্ভব নয়। কয়েনটি ব্যালেন্সড কি না যাচাইয়ের জন্য আপনাকে আরো অনেকবার টস করতে হবে।

এই কারণে, অধিকাংশ সোশ্যাল রিসার্চই ভুল হয়। কারণ তারা স্মল স্যাম্পল সাইজ নিয়ে পরীক্ষা করে অভারল সিদ্ধান্ত নেয়।

৫৭। তুলনামূলক

মানুষ কোন কিছু একা নিতে পারে না, তুলনা করে বুঝে। এটা কালচারাল নয়, হিউম্যান ন্যাচার। মানুষের বুঝা পরিবর্তন করে তাকে অপেক্ষাকৃত বাস্তব ভিউ দিতে হলে যে জিনিসের সাথে সে তুলনা করছে  (অর্থাৎ এংকর) পরিবর্তন করে তা করা যায়।

তুলনাভ্রান্তি নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম।

৫৮। হ্যাপিনেস

হ্যাপিনেস বুঝতে হলে এর দুইটা ভাগ বুঝতে হবে। একটা হলো জেনেটিক। আরেকটা কোন মুহুর্তে আপনি কেমন আছেন।

এই দুই মিলিয়েই অভারল হ্যাপিনেস। জেনেটিক অংশটা পরিবর্তনযোগ্য নয়।

৫৯। উঠপাখি সিন্ড্রোম বা পেইন এভয়ডিং সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল

পেইন এড়ানোর জন্য অনেক সময় বাস্তব জিনিস মানুষ দেখে না। মানুষের সাইকোলজিক্যাল বায়াস নিয়ে বিস্তারিত আইডিয়ামূলক এই লেখাটি পড়া যেতে পারে। এখানে ২৮ টি আইডিয়া আছে, যেগুলি এখানে আর উল্লেখ করলাম না।

৬০। থিংকিং ইন বেটস

এনি ডিউকের অসাধারণ বই শুরু হয়েছে এই কথাটি দিয়ে লাইফ ইজ পোকার, নট এ চেজ। কারণ লাইফে একটা ডিসিশন মেইক করতে যত ইনফরমেশন লাগে তার সব আমাদের কাছে থাকে না। এবং যেকোন মুহুর্তে লাইফ অনিশ্চিত দিকে টার্ন করতে পারে।

ফলে ডিসিশন মেকিং এর পুরা জিনিসটাই নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা কোন সিদ্ধান্ত ভালো বা মন্দ বিচার করি এর ফল দ্বারা। ফল ভালো হলে একে ভালো বলি। কিন্তু এই ভালো ফলে ঐ সিদ্ধান্ত ছাড়াও লাক এবং অন্যান্য অনুসঙ্গ জড়িত থাকতে পারে।

একটা কথা বলা হয়, ইতিহাস থেকে মানুষ শিখে না। এটা ভালো যে শিখে না। বিশেষত ডিসিশন বিষয়ে। কারণ আগের সফল মানুষের ডিসিশন কপি করতে থাকলেই কারো ডিসিশন বেটার হয় না।

তাহলে ডিসিশন মেকিং কীভাবে করতে হবে? বা বিচার কীভাবে করতে হবে?

ডিসিশন মেকিং এর জন্য নানা মডেল বা র‍্যাশনালিটিই একমাত্র জরুরী নয়, অনেক সময় ইনটিউশন বহু জরুরী। এর জন্য একটা সিস্টেম তৈরি করতে হবে পার্সোনাল। যেখানে নানা ধরণের ইনফরমেশন ও ইনসাইট আমাদের ভেতর থাকে। তখন ইনটিউশন শার্প হয়।

আর বিচারের ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্তের ফল খারাপ হলেই সেটি খারাপ এমন ভাবলে হবে না। ভাবতে হবে এর অলটারনেটিভ কী কী সিদ্ধান্ত হতে পারতো, এবং তার আলোকে এই সিদ্ধান্তটি কেমন ছিল।

মানুষের লাইফ নির্ভর করে তার ডিসিশনের কোয়ালিটি ও লাকের উপরে। তাই আলাদা ডিসিশন মেকিং এর চাইতে ডিসিশন মেকিং এর সিস্টেম তৈরিটা জরুরী। মেন্টাল মডেল বা জীবন ও দুনিয়া ব্যাখ্যার আইডিয়াগুলি সেই সিস্টেম তৈরির প্রয়াস, যাতে একজনের কাছে যেকোন অবস্থায় বেটার ডিসিশন মেকিং এর মত বিলিফ থাকে, এবং তার ইনটিউশন পাওয়ার শাণিত হয়।

৬১।  ইতিহাস কীভাবে চলে

মানুষের যে ইতিহাস তা হামাগুড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে চলে না, বরং বড় বড় লাফে আগায়।

হিস্টরি ডাজন’ট ক্রলস, ইট লিপস (নাসিম তালেব)।

কখনো কখনো দশক দশক চলে যায় কিছুই ঘটে না, আর কখনো কয়েক সপ্তাহেই কয়েক দশক ঘটে যায় (ভ্লাদিমির লেনিন)।

৬২। মৃত ও জীবীতদের সংখ্যা

পৃথিবীতে মৃতদের সংখ্যা বেশী। একজন জীবীত মানুষের বিপরীতে ১৫ জন মৃত লোক। এই মৃত মানুষদের সামগ্রিক জীবন আমরা অস্বীকার করে যাই। হয়ত পরিস্থিতি ও পরিবেশের বদল হয়েছে, কিন্তু আচরণ কমবেশী একইরকম ছিল। আমরা যা যা করছি, যেভাবে যেভাবে আমরা ডিল করছি খারাপ ও ভালো সময়, তারাও এমন করে গেছে।

৬৩। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

পৃথিবীতে মোট যে ঘটনা ঘটে, তার অতি ক্ষুদ্র অংশ ০.০০০০০০০১ ভাগ হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত ঘটনা। কিন্তু এই ক্ষুদ্র অংশের উপর নির্ভর করেই আপনি ৯০% ভাগ চিন্তা করেন পৃথিবী বিষয়ে।

৬৪। মানুষের মধ্যে ট্রাইব প্রবণতা

মানুষের মধ্যে ট্রাইব বা দলাদলির প্রবণতা প্রবল। আদিকালে মানুষ ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে থাকত। এতে সে স্বস্থি পায়।

মানুষের আধুনিক ট্রাইব হয় এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দেশ, একাডেমিক পড়ার সাবজেক্ট ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে।

অফলাইনের চাইতে অনলাইনে মানুষ দ্রুত ট্রাইব গঠন করে।

সোশ্যাল সাইন্সের পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান এটা যে, দৃশ্যত কোন কারণ ছাড়াই মানুষরে দলে ভাগ করা যায়।

মানুষ তার ট্রাইবের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলতে বা চিন্তা করতে চায় না।

৬৫। ১% রুল

অনলাইনে ১০০ জনের মধ্যে একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েট করবে, ১০ জন কমেন্ট করবে বা ইম্প্রুভমেন্টে অংশ নিবে, আর ৮৯ জন জাস্ট দেখবে।

ইউটিউব, উইকিপিডিয়া ইত্যাদি থেকে এই থাম্ব রুল তৈরি।

৬৬। গিগারেনজারের ইনসাইট

জার্মান সাইকোলজিস্ট গার্ড গিগারেনজার বলেছিলেন, মানুষেরা বোকা না। আসলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটা ব্লাইন্ড স্পট আছে রিস্ক লিটারেসি বিষয়ে। আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিশ্চিততার গণিত যেমন জ্যামিতি ত্রিকোনমিতি শেখাই। কিন্তু অনিশ্চয়তার গণিত পরিসংখ্যান শিখাই না। আমরা বায়োলজি শিখাই কিন্তু সাইকোলজি শিখাই না যা মানুষের আকাঙ্খা ও ভয় নির্মান করে। এমনকী বিশেষজ্ঞরাও তাই রিস্ক জনমানুষের সামনে ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন না।

করোনা ভাইরাসের মত প্যান্ডেমিকের কালে এই চিন্তাটি গুরুত্বপূর্ণ।

রিস্ক লিটারেসি ম্যাটার করে। কারণ লাইফে রিস্ক ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

এছাড়া এই ইনসাইট আমাদের আরো ভাবাতে পারে শিক্ষা ব্যবস্থায় আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাদ দেয়া হয় বা ভুলভাবে পড়ানো হয়।

৬৫। বেট

আবার থিংকিং ইন বেটস বইয়ের একটা আইডিয়া।

লাইফে জুয়ার চাল না দেয়াটা নিজেই কিন্তু একটা চাল। এটা আমরা বুঝি না।

যেমন ধরা যাক বিটকয়েনের দাম এখন চার হাজার। আমি বেট ধরে কিনতে পারব। আমার বেট প্রাইস ৪০ হাজার হবে ১০ বছরের মধ্যে।

এখন আমার বা অন্য কারো অপশন দুইটা। ইনভেস্ট করা ও না করা।

ফলে যারা বেট ধরছেন না, তারাও বেট ধরছেন  চাল না দিয়ে। তাদের বেটটি হলো বিটকয়েন ভুয়া, দাম কমবে।

৬৬। লিটলউডের ল

মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সময়, ইভেন্ট এবং পৃথিবীর মোট মানুষের সংখ্যা ও ঘটনার বিচারে মিরাকল ঘটার সম্ভাবনা খুবই বেশি। এবং প্রায়ই তা ঘটতে পারে।

৬৭। ডোলো’র সূত্র

বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কোন প্রাণী কোন বিশেষ বৈশিষ্ট বা জিনিস পেলে, সে এটি তৈরি হবার আগের মুহুর্তে ব্যাক করতে পারে না। কারণ যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে এটি পেয়েছে তা খুব জটিল।

ধরা যাক একটি ব্যাঙের আটালো জিহবা ছিল। পরে বিবর্তনের মাধ্যমে সাধারণ জিহবা হলো। এরপরে আবার তার আটালো জিহবার ফেরত যাবার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

এই মডেল টিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মেসি বার্সেলোনায় সেরা খেলেন। তিনি আর্জেন্টিনা টিমে খেললে ওইভাবে সেরা খেলতে পারেন না। নিয়মিত ভাবে দলবদল করে খেলতে দেখি আমরা তাকে। তাই বুঝতে পারি।

তিনি একেবারে বার্সেলোনা বাদ দিয়ে আর্জেন্টিনাতে চলে গেলে হয়ত তার পারফরমেন্স দেখে বুঝতে পারতেন, আগে বার্সেলোনাতে তার সেরা পারফরমেন্সের কারণ ছিল ঐ গ্রুপ সেটিং।

৬৮। হিকামের ডিকটাম

কোন জটিল সিস্টেমের কোন সমস্যার এক কারণ থাকা রেয়ার ঘটনা। একাধিক কারণ থাকে। যেমন, করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি ও বিস্তার এক জটিল সিস্টেমের সমস্যা। এর কারন কখনোই একটা হতে পারে না।

একটি ওকামের রেজরের বিপরীত। ওকামের রেজর বলে সবচাইতে সহজ ব্যাখ্যাই ঠিক। কিন্তু জটিল সিস্টেমে এটা কাজ করে না।

৬৯।  গ্যানডালফ এর ইনসাইট

জে আর আর টলকিনের উপন্যাস লর্ড অব দ্য রিংগস এর চরিত্র গ্যানডালফ বলেছিলেন, অল উই হ্যাভ টু ডিসাইড হোয়াট টু ডু উইথ দ্য টাইম গিভেন টু আস।

ফ্রডো যখন তারে বলছিল আমার কাছে যদি এই আংটি না আসতো। এসব যদি না ঘটতো আমার সাথে।

তখনই গ্যানডালফ এটা বলেন। এর অর্থ হলো, ঘটাটা তোমার হাতে নাই। তোমার হাতে কেবল এই জিনিস আছে, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার, যে টাইম তোমারে দেয়া হইছে তা দিয়া তুমি কী করবা।

৭০। ইন্টারনেট দুনিয়ার ফালতুত্বের নিয়ম

এটি আমার একটা সূত্র। ইন্টারনেটের যুগে আপনি কোন ফালতু জিনিস দেখলে মনে করবেন এর চাইতে ফালতু জিনিসও আছে বা সামনে আসছে।

ইন্টারনেটে কোন ফালতুই শেষ ফালতু নয়।

সূত্রের পেছনের লজিক হলো, ইন্টারনেট একটা নতুন জিনিস। এটি মানুষকে নিজে নিজেই প্রকাশিত হবার সুযোগ দিয়েছে। ফলে, মানুষের উইয়ার্ডনেস ও স্টুপিডিটি প্রকাশের সুযোগ এসেছে। এটা নানাভাবে নানা লোক কাজে লাগাবে। এবং নানা স্তরের নানা ধরণের মানুষ আপনার সামনে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আপনি একটা মডেল এক্স এক্স খানরে দেইখা ভাবলেন এটা মনে হয় সর্বোচ্চ ফালতু, কিন্তু কয়দিন পরেই আরেকটা দেখবেন হয়ত ওয়াজের ক্লিপ বা অন্য কিছু।

৭১। ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট

নিজের স্টুপিডিটি বুঝার জন্যও একটা বুদ্ধিমত্তার দরকার। প্রায় অল্পবুদ্ধিদের এটা থাকবে না তাই তারা কখনো বুঝবে না তারা অল্পবুদ্ধি। যে কারণে অল্পবুদ্ধিরা বুঝতে পারে না তারা অল্পবুদ্ধি নামের লেখাটি পড়তে পারেন

এই কারণে বিবর্তনবাদ থিওরি মানেই ‘বান্দর থেকে মানুষ আইছে’ বলারা কখনো বুঝতে পারবে তাদের স্টুপিডিটি।

৭২। মিডিয়ার নিউজ বিষয়ে

মিডিয়ার নিউজ সত্য নিয়ে ডিল করে না। বরং তারা সেনসেশনাল, এক্সেপশনাল, নেগেটিভ এবং কারেন্ট ইভেন্টস নিয়া কাজ করে। নিউজ কনজিউম করার সময় এই জিনিস মাথায় রাখা দরকারী।

৭৩। জানা ও বুঝা বিষয়ে ফাইনম্যান

কোন কিছুর নাম জানাটা আসলে ঐ জিনিসটা জানা বা বুঝা না, বরং মাত্র একটা শব্দ জানা, যে শব্দে মানুষ তাকে ডাকে।

৭৪। সার্কল অব কম্পিটেন্স বা সক্ষমতার সীমা

নিজের সক্ষমতার সীমা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে এবং এর ভেতরে অবস্থান করলে মানুষ ভালো করে। কিন্তু সক্ষমতার সীমার পরিধিকে ভুলভাবে বড় মনে করলে তখনই অসুবিধা।

৭৫।  এভয়েড রুইনস বা ধ্বংস এড়ানো

এটা স্ট্র্যাটেজি বিষয়ে প্রথম রুল হতে পারে। প্রথমত আপনাকে নিজেকে বা নিজের প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে হবে। এটাই স্ট্র্যাটেজির প্রধান লক্ষ্য।

আপনি যদি সারভাইবই না করতে পারেন তাহলে সফল তো হবেন না।

স্টক মার্কেটে ইনভেস্টিং থেকে শুরু থেকে ব্যবসা বা ব্যক্তিগত জীবনেও এই রুলটি কার্যকরী।

রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এই লেখাটিও দেখতে পারেন।

৭৬। এন্টি-ফ্রাজাইলিটি

শব্দটি নাসিম তালেব তার এন্টিফ্র্যাজাইল বইতে ব্যবহার করেছেন। কিছু জিনিস স্ট্রেস বা চাপ পড়লে ভেঙ্গে যায়, কিছু জিনিস ভাঙে না একটা পর্যায় পর্যন্ত। কিন্তু তৃতীয় আরেক প্রকারের জিনিস এন্টি ফ্র্যাজাইল। যারা চাপ পড়লে সেই ক্রাইসিস মোকাবেলা করে আরো শক্ত হয়ে উঠে।

যেমন মিথের হাইড্রার মাথা। একটা কাটলে কাটা জায়গায় দুইটা গজায় মাথা।

৭৭। সাপোলস্কির স্ট্রেস

আমার প্রিয় বিজ্ঞানী রবার্ট সাপোলস্কি স্ট্রেস নিয়ে, প্রাইমেট নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। তার একটা সেরা ফাইন্ডিংস হলো, মানুষের ম্যাক্সিমাম সমস্যার মূলে হলো স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা। তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট খুবই দরকারী। আপনার যেকোন সমস্যা হলে থাম্ব রুল হিসেবে প্রথমে স্ট্রেসকে দায়ি করে এটি কমানোর ওয়ে বের করে দেখুন। হয়ত দেখা যাবে আসলেই স্ট্রেস দায়ি ছিল।

৭৮। বিজনেস এনালাইসিসের ঈশপ মডেল

ওয়ারেন বাফেটের একটা লেকচার থেকে এর নাম দিয়েছি। বিজনেস এনালাইসের অনেক হিসাব আছে, অনেক স্প্রেডশিট আছে। সব হিসাব নিকাশ ইত্যাদি মিলিয়ে হলো ২০ ভাগ। আর বাকি ৮০ ভাগ হলো সিম্পল এই রুল।

ঈশপ প্রায় ৬০০ বিসিতে বলেছিলেন, হাতে থাকা এক পাখি ঝোপে থাকা দুই পাখির সমান।

বিজনেসের ক্ষেত্রে দেখতে হবে প্রথমত তার বর্তমানে বিজনেসের অবস্থা কেমন, কত মানুষ ব্যবহার করছে, লাভ কেমন তাদের, দাম বাড়ানো বা কমানোর কত পাওয়ার আছে তাদের হাতে, কত মানুষ লাগছে তাদের। দ্বিতীয়ত, ঝোপের দুই পাখি অর্থাৎ ভবিষ্যতে প্রফিটের সম্ভাবনা, তা কত নিশ্চিত? তার ওপর অন্য প্রতিযোগি বা আশপাশে আরো ঝোঁপ আছে কি না, যেখানে আসলে তিনটা পাখি মিলবে?

মাঝে মাঝে কোন বিজনেসের ক্ষেত্রে আপনি বুঝতে পারবেন না, কত পাখি আছে ঝোপে। এটা জটিল বিজনেস, আপনি বুঝেন না, পাস ইট।

৭৯।  ঘটনা এবং অ-ঘটনা

শার্লক হোমসের একটা রহস্যে হোমস ইনস্পেক্টর গ্রেগরিকে বলেছিল কুকুরের ঘটনাটি আমলে নিতে। গ্রেগরি জানাল, কিছুই হয় নি। কিন্তু হোমস বলল, না, কুকুরের ঘটনাটি কিউরিয়াস।

এবং এর থেকেই সে বের করল যে, যে খুন করেছে সে কুকুরটির পরিচিত।

কিছু জিনিসকে ঘটনা হিসেবে আমাদের স্যামনে তুলে ধরা হয়। পত্রিকা, টিভি মিডিয়া, মানুষের কথাবার্তা ও সোশ্যাল মিডিয়া তুলে ধরে। কিন্তু এর বাইরেও ঘটনা ঘটে। যেগুলিকে অঘটনা নাম দেয়া যায়। আমরা এগুলি খেয়াল করি না।

কুকুরের ঘটনাটি গ্রেগরি বা সাধারণ চোখে অ-ঘটনা। হোমসের চোখে নয়। হোমস এই অন্যদের চোখের অঘটনাকেও গুরুত্ব দিয়েছে।

এজন্য নাসিম তালেবের কথা আছে একটা, নবী হলেন তিনি যিনি অন্যে যা দেখে তা দেখেন না।

কারণ অন্যের দেখাগুলি অভার গ্লোরিফায়েড। নয়েজে পূর্ণ। ফলে যেগুলি ঘটনার বাইরে রয়ে যাওয়া ঘটনা, সেগুলিই ম্যাটার করে প্রায়ই।

৮০। জুয়ার নিয়ম

একটা গল্প এখানে শেয়ার করা যায়। জ্য লুই কালমেন্ট নামক এক নব্বই বছরের মহিলার সাথে সাতচল্লিশ বছরের উকিল আন্দ্রে-ফ্রান্সিস রাফ্রি একটা চুক্তি করলেন। রাফ্রি চুক্তি মতে জ্য’কে মাসে খুব অল্প ২৫০০ ফ্রাংক দিবেন প্রতিমাসে। বিনিময়ে জ্য মারা গেলে তার সমস্ত সম্পত্তি রাফ্রের অধিকারে যাবে।

রাফ্রে তার হিসাবে ঠিক ছিলেন। কারণ ভদ্রমহিলা ইতিমধ্যেই ফ্রান্সের গড় আয়ুর চেয়ে ১০ বছর বেশি বেঁচে গেছেন। হিসাব মতে তার মরণ আসন্ন।

কিন্তু মিস কালমেন্ট অবিশ্বাস্য খেলা দেখালেন। তিনি মারা গেলেন ১২২ বছরে। ততদিনে অনেক বছর এবং ভদ্রলোককে যে টাকা পরিশোধ করতে হয়েছিল তা মহিলার এপার্টমেন্টের দ্বিগুণ।

এই গল্পের আইডিয়াটা হলো, যতই ডেটা থাকুক, যেখানে লাকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, এমন চালে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে না। এটা এভয়েড রুইনসের স্ট্র্যাটেজি।

৮১। লাক ও সফলতা ব্যর্থতা

মানুষের সমস্যা হলো তারা জীবনে লাকের ভূমিকাকে অস্বীকার করে।

সফল হলে নিজের কৃতিত্বকে গ্লোরিফাই করে। আর ব্যর্থ হলে দূর্ভাগ্যকে অজুহাত হিসেবে আনে।

৮২।  কনসেপচুয়াল মডেল ও সিস্টেম ইমেজ

ডিজাইন থিংকিং এর সবচেয়ে বেসিক আইডিয়া। একজন ডিজাইনার একটি ফ্রিজের দরজা ডিজাইন করলেন বা এপ ডিজাইন করলেন। তার মাথায় একটা কনসেপ্ট থাকবে যে কীভাবে কীভাবে একজন ব্যবহারকারী এটা ব্যবহার করবেন।

ডিজাইনারকে তার সেই কনসেপ্টকে এমনভাবে ডিজাইনে উপস্থাপন করতে হবে যাতে ইউজারও সেই কনসেপচুয়াল মডেল বুঝতে পারেন বা কাছাকাছি যেতে পারেন। যে ডিজাইনার যত ভালোভাবে তার ডিজাইনের দ্বারা কনসেপচুয়াল মডেলটি উপস্থাপন করতে পারেন, তিনি তত ভালো ডিজাইনার বা ডিজাইনটি তত ভালো ডিজাইন। তার ডিজাইন যে ইমেজ ইউজারকে দেয় এটাকে বলে সিস্টেম ইমেজ। সিস্টেম ইমেজ ক্লিয়ার হবে যদি ডিজাইনারের কনসেপটটি ভালোভাবে উপস্থাপিত হয়। যেমন, কোন বাটনে ক্লিক করলে সাইন আপ হবে, কোথায় ইমেইল দিতে হবে ইত্যাদি।

লেখালেখি, ভিডিও কন্টেন্ট বা ছবি, বা কথাবার্তা সকলই একটা কনসেপচুয়াল মডেল উপস্থাপন করে ও দর্শক পাঠক বা শ্রোতাকে বুঝাতে চায়।

ঐ লেখা, কথা বা কন্টেন্টই অপেক্ষাকৃত ভালো যেটি ভালোভাবে তার কনসেপচুয়াল মডেলটি উপস্থাপন করে একটা ভালো সিস্টেম ইমেজ দাঁড় করাতে পারে ইউজারদের জন্য।

(বই সাজেশন, কগনিটিভ সাইন্টিস্ট ও ইউজাবিলিটি ইঞ্জিনিয়ার ডন নরম্যানের ডিজাইন অব এভ্রিডে থিংস।)

৮৩। রেড কুইন হাইপোথিসিস

এটি বলে যে প্রজাতিদের মধ্যে নিত্য প্রতিযোগিতা বিদ্যমান ছিল। এর ফলশ্রুতিতে প্রজাতিকে টিকে থাকতে নানা বৈশিষ্ট্য আয়ত্ত্ব করতে হয়েছে।

যেমন, এক পুকুরে অনেক ব্যাঙ ও অনেক পোকা আছে। ব্যাঙ পোকা খায়। কিছু পোকা সারভাইব করতে গিয়ে জিনের পরিবর্তন হেতু পিচ্ছিল শরীরের বৈশিষ্ট্য পেল। এরা পিছলে যেত। সুতরাং এরা ও এদের সন্তানাদি টিকে থাকল। এইরকম পিছলা শরীরের পোকারা বেড়ে গেল। এবার জিনের পরিবর্তন হেতু এক ব্যাঙ এর জিভ আটালো হলো। তার জিভে পোকারা আটকে যেত। এই সুবিধার জন্য এই ব্যাঙ এর সন্তানাদি বাড়তে লাগল। ফলে একসময় আটালো জিভের ব্যাঙ বেড়ে গেল।

এখানে পয়েন্ট দুইটা। এক, ব্যাঙ ও পোকা দুই প্রজাতিই নতুন বৈশিষ্ট্য পেয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের মধ্যেকার প্রতিযোগিতার জন্য। অবশ্য এর জন্য দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ সময় লেগেছে।

দুই, দিন শেষে পুকুরে ব্যাঙ ও পোকাদের সংখ্যার ভারসাম্য একই রয়েছে, যেমন আগে ছিল।

এই হাইপোথিসিস একটা ব্যাখ্যা দেয় কীভাবে প্রজাতির বিবর্তনের ফলে নানা বৈশিষ্ট্য আসলো।

এর প্রয়োগ জিপলিটিক্সে, স্ট্র্যাটেজিতে, কনফ্লিক্ট ইত্যাদির বাস্তবতা বুঝতে প্রযোজ্য হতে পারে। এছাড়া বিজনেস বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এডাপটেশন, নিত্য লার্নিং এর গুরুত্ব বুঝাতে ব্যবহৃত হবে।

৮৪। সোশ্যাল ব্রেইন হাইপোথিসিস

নৃতাত্বিক ডানবার এই হাইপোথিসিস দেন। তার ব্যাখ্যা ছিল পরিবেশের সাথে মোকাবেলার জন্য নয়, বরং সামাজিক প্রানী হিসেবে সমাজ ও অন্য মানুষদের সাথে প্রতিযোগিতায় (ধোকা, ধান্দাবাজী, উদারতা, রেসিপ্রোকেশন ইত্যাদি অনেক) টিকে থাকতেই মানুষের ব্রেইন ডেভলাপ করেছে।

৮৫। মার্শহেইমারের অফেনসিভ রিয়ালিজম মডেল

আমেরিকান স্কলার জন জে মার্শহেইমারের একটি মডেল আছে ভূ-রাজনীতির জন্য। এটি মতে, প্রতিটা রাষ্ট্র টিকে থাকতে চায়, নিরাপত্তা চায় এবং এর জন্য তারা অতি ক্ষমতাধর হয়ে উঠতে চায়। বিভিন্ন রাষ্ট্র একে অন্যের সাথে সাময়িক ভাবে সহযোগিতামূলক হতে পারে কিন্তু ভেতর থেকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে হয় না।  তারা সকল সময় চায় প্রতিযোগীকে দমন করে নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব বাড়াতে।

মার্শহেইমারের মডেলটির ৫ টি এজামশন আছে, এবং আমি আরো একটি যোগ করেছি এখানে। এগুলি হলোঃ

১। আন্তর্জাতিক সিস্টেমে নৈরাজ্য বিদ্যমান। রাষ্ট্রদের উপরে কোন ক্ষমতাধর কেউ নেই।

২। প্রত্যেক রাষ্ট্রের কমবেশী মিলিটারী পাওয়ার আছে।

৩। এক রাষ্ট্র কখনো আরেক রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে না। (এজন্য গেইম থিওরি ম্যাটার করে।)

৪। রাষ্ট্র টিকে থাকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।

৫। রাষ্ট্র হলো র‍্যাশনাল একটর (যৌক্তিকভাবে কাজ করে) যা নিজের স্বার্থই দেখে।

আমার যোগ করা

৬। রাষ্ট্রের চালকেরা বা নীতি নির্ধারকেরা টিকে থাকার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ করতে গিয়ে মানবিক সাইকোলজিক্যাল দূর্বলতাগুলি কাটিয়ে উঠতে পারেন না।

ভূ-রাজনীতির বিভিন্ন ঘটনা, পলিসি বুঝার জন্য এটি কাজে লাগতে পারে।

৮৬। কালচারাল ম্যাটেরিয়ালিজম

সমাজ একটা সিস্টেম। সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা ( প্রযুক্তি, কাজের ধরণ বিশেষত খাদ্য উৎপাদন কেন্দ্রিক) এবং রিপ্রোডাকশনের ব্যবস্থা ( জনসংখ্যা, বৃদ্ধির হার) এবং ঐ জায়গার পরিবেশের অবস্থা – এই তিন জিনিসের ইন্টারেকশনের ফলে ঐ এলাকার কালচার, প্রথা, বিশ্বাস গড়ে উঠে এবং সমাজের টিকে থাকার উপর প্রভাব বিস্তার করে।

যেমন, ভারতে গরু দেবতা, তারা খায় না এর একটা খাদ্য উৎপাদনকেন্দ্রিক কালচারাল কারণ আছে। গরু খেলে তাদের চাষবাসে অসুবিধা হতো। একই জিনিস মধ্যপ্রাচ্যের বিবিলিকাল ইসলাম বা ইহুদি ধর্মে শুকর খাওয়া নিষিদ্ধ হবার পেছনে আছে।

নৃতাত্ত্বিক মারভিন হ্যারিস এই থিওরির প্রবক্তা।

৮৭। লর্ড একটনের ডিকটাম

ক্ষমতা দূষিত করে, এবং সর্বময় ক্ষমতা দূষিত করে আপাদমস্তক ভাবে।

ন্যাপলস থেকে একটা চিঠিতে লর্ড একটন এই লাইন লিখেছিলেন। এটি ক্ষমতা ও মানুষের সম্পর্ককে যথাযথভাবে প্রকাশ করে।

ক্ষমতা মানুষকে দূষিত করে। আর সেই ক্ষমতা যখন সর্বময় হয়, অর্থাৎ একচ্ছত্র হয় তখন সেই মানুষ বা সংস্থা সীমা পরিসীমা ছাড়া দূষিত হয়। এটা মানুষের ইতিহাসে বার বার দেখা গেছে।

৮৮। ফরি-রেমন্ডের হাইপোথিসিস

মানুষ কেন লেফটি বা বাহাতি হয়, এবং এর সুবিধা কী এ নিয়ে কাজ করেছিলেন ফরি ও রেমন্ড নামের দুজন ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানী। তারা এই হাইপোথিসিস দেন যে, আগেকার দিনে বেশি সহিংসতা হতো ও সম্মুখ যুদ্ধ হতো। সেসময় বাহাতিরা সুবিধা পেত ফাইটে।

তারা তাদের এই সিদ্ধান্তে আসেন বক্সিং এবং অন্যান্য অনেক ডাইনামিক খেলায় (যেমন ক্রিকেট, রেস্লিং, টেনিস, বেইজবল ইত্যাদি) বাহাতিদের প্রাপ্ত সুবিধা বিচার করে।

এই ক্রিয়েটিভ ও মজার হাইপোথিসিসটি আমাদের কোন জিনিস ন্যাচারাল সিলেকশনে চলে আসছে, বা দীর্ঘদিন চলে আসছে কিন্তু দৃশ্যত অযৌক্তিক মনে হয় – এমন হলে এর পেছনের কারন নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করতে পারে।

৮৯।  সেকন্ড অর্ডার থিংকিং

কোন জিনিসের ফল কী বা কেমন হবে তা কয়েক স্টেপ এগিয়ে গিয়ে চিন্তা করা। ইমিডিয়েট ফলকেই একমাত্র গুরুত্ব না দেয়া। এ নিয়ে এই গল্পটি পড়া দরকার

৯০। ভয়েজলেসদের অস্তিত্ব

মামারো অশি নামক জাপানি ফিল্মমেকার বলেছিলেন, পাখির কান্নায় আমরা ব্যথিত হই, মাছের মৃত্যুতে হই না। যাদের ভয়েজ আছে তারা ভাগ্যবান।

এই থট-টি মনে রাখলে আমরা হয়ত ভয়েজহীন যারা আছে, তাদেরো দেখতে পারব।

৯১। ডি কনস্ট্রাকশন

দার্শনিক জ্যাক দেরিদার একটি জটিল কনসেপ্ট। তিনি এর কোন সংজ্ঞা দিয়ে যান নি। আমিও দিতে পারব না। আমি জাস্ট একটা প্রসেস বলব, যেটা হলো সমাজের বা চিন্তার বিদ্যমান কনস্ট্রাকশনকে দেখার। সমাজের, চিন্তার কন্সট্রাকশনের বাইরে আছে কারা সেতা দেখার। এবং বাইরে যারা আছে তাদের কনস্ট্রাকশনে নিয়ে আসতে বিদ্যমান কনস্ট্রাকশনকে উলটে পালটে দেয়া। এবং এটা বার বার চলতে থাকবে।

৯২। সাংক কস্ট ইফেক্ট

সাংক কস্ট ইফেক্টকে বাংলায় পয়সা উসল করা নামে বুঝানো যায়। অর্থাৎ, আপনি ইনভেস্ট করে ফেলেছেন টাকা, এখন ভালো না লাগলেও গিলতে হচ্ছে বা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাওয়ার প্রবণতা।

টিকেট কিনেছেন, কিন্তু ঐদিন ঝড় বৃষ্টি। যেতে কষ্ট বেশি, গিয়ে সিনেমা দেখার বিনোদনের চাইতে। তাও যেতে চাইলেন। কারণ ইনভেস্ট করে ফেলেছেন টাকা।

এটা বড় পরিসরে ব্যবসায় হয়। স্টক মার্কেটে হয়। জুয়ায় হয়। সম্পর্কে হয়।

৯৩। ফ্রেইরির নিরপেক্ষতা আলাপ

পাওলো ফ্রেইরি বলেছিলেন, ক্ষমতাবান ও ক্ষমতাহীনের দ্বন্দ্বে হাত গুটিয়ে থাকা মানে নিরপেক্ষ থাকা না, বরং ক্ষমতাবানের পক্ষই নেয়া।

ফ্রেইরি’র পেডাগোজি অব অপ্রেসড নিয়ে লিখেছিলাম

৯৪। সততা ও ন্যায়পরায়ণতা

সততাকে নিজে সৎ থাকা, সদা সত্য কথা বলা ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ করা যায়। অন্যদিকে ন্যায়পরায়ণতা হলো অসততা বা অন্যায় দেখলে এর বিপক্ষে দাঁড়ানো। ন্যায়পরায়ণতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও বেশি দরকারী।

৯৫। স্ট্যাটাস গেইম বা সিগনালিং থিওরি

বিবর্তনীয় সাইকোলজিতে মানুষের অনেক কাজকে (ক্রিয়েটিভ কাজ, লোক দেখানো বিলাসীতা, বিপদজনক স্টান্ট ইত্যাদি) বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণের সিগনালিং হিসেবে দেখা যায়। যা রিপ্রোডাকশনে কাজে লাগে।

সেই অবচেতন সাইকোলজি থেকে মানুষের স্ট্যাটাস ধারণা ও স্ট্যাটাস গেইম এর উৎপত্তি। স্ট্যাটাস বলতে সামাজিক স্তরবিণ্যাসে নিজের অবস্থান বিষয়ক কাল্পনিক ধারণা। দুনিয়ার সকল সমাজই স্ট্যাটাস দ্বারা চালিত।

স্ট্যাটাস গেইম হলো নিজের স্ট্যাটাস বৃদ্ধির চেষ্টা করা এবং এর জন্য অন্যদের ছোট করে যাওয়া। কারণ এটি জিরো সাম গেইম। মানে, স্তর বিণ্যাসে সবাই একই স্তরে থাকলে তো বিশেষত্ব থাকে না, ফলে অনেকদের নিচে রাখতে হয়। তাই স্ট্যাটাস গেইমারদের নিয়ত অন্যদের ছোট করে নিচে ফেলতে হয়।

খেয়াল করলে দেখবেন এরা লাইফে সাকার, বা এদের অর্জন কম। ফলশ্রুতিতে একটা অর্জনের দিকেই তারা মনোনিবেশ করে। তা হলো অন্যদের ছোট করে বড় হওয়ার ফিল পাওয়া।

ইউনিভার্সিটির লেকচারার, অধ্যাপক, বা কবি সাহিত্যিক এমন সামাজিক স্ট্যাটাসপূর্ণ জায়গা থেকে স্ট্যাটাস গেইম বেশি দেখা যায়।

৯৬। জুয়ার নিয়ম আবার

ইলন মাস্কের থেকে একটা জুয়ার নিয়ম শেখা যায়। ২০০৮ সালে তার ব্যাংক একাউন্টে ৩০ মিলিয়ন ডলারের মত ছিল। আর তার মতে, তার সামনে ছিল তার জন্য সবচাইতে কঠিন সিদ্ধান্ত। তার দুইটা বিজনেস, এই দুইটার একটাতে সব টাকা ইনভেস্ট করলে হয়ত তা টিকে যাবে। কিন্তু অর্ধেক অর্ধেক করে দুইটাতে টাকা ইনভেস্ট করলে হিসাব মতে দুইটাই মারা যাবে।

মাস্ক তখন ভাবলো, এবং পরে লজিক্যাল হিসাব বাদ দিয়ে সে টাকা দু’ভাগ করে দুইটাতেই ইনভেস্ট করলো। তার কথা ছিল আপনে আপনার রক্ত ঘাম ও শ্রম দিয়ে যা বানান তা সন্তানের মত, ও আপনি চাইবেন না তা মারা যাক।

এবং সৌভাগ্যজনক ভাবে তার দুইটা বিজনেসই সারভাইভ করেছে ও সফল হয়েছে।

এই আউটকাম সফল তাই তার সিদ্ধান্ত ভালো ছিল এটা এখানে শেখার পয়েন্ট না।

পয়েন্ট হলো, মাস্ক লজিকের বাইরে গিয়ে তার ভেতরের কথা শুনেছিল, এবং একজায়গায় সব বাজি না ধরে দুই জায়গায় ধরেছিল।

সম্ভবত, এটা রিস্ক ম্যানেজমেন্টের বেটার স্ট্র্যাটেজি।

৯৭। মূলনীতি ভিত্তিক চিন্তা

কোন কিছুর একেবারে মূল বা ফাউন্ডেশনাল জিনিস থেকে ভাবার চেষ্টা করা।

এলন মাস্কের কথায়, “আমি কোন জিনিস পদার্থবিদ্যার ফ্রেইমওয়ার্কে ভাবতে পছন্দ করি। পদার্থ বিজ্ঞান তুলনা দিয়ে বুঝার চাইতে মূলনীতি দিয়ে বুঝতে চায়। তাই আমি বললাম, ঠিক আছে, দেখা যাক রকেট বানাতে কী কী লাগে। এরোস্পেস গ্রেডের এলুমিনিয়াম শংকর, কিছু টাইটেনিয়াম, কপার, কার্বন ফাইবার। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করলাম, এই জিনিসগুলির দাম কতো সাধারণ পণ্য বাজারে? দেখা গেল একটা সাধারণ রকেটের মূল বস্তুগুলির দাম মূল রকেটের দামের মাত্র দুই শতাংশ।”

আরো বিস্তারিত মিলবে এই লেখায় – মূলনীতি ভিত্তিক চিন্তা

৯৮। প্রিন্সিপল-এজেন্ট প্রবলেম

অর্থনীতিতে আলোচিত এক বিখ্যাত সমস্যা। কোন কোম্পানিতে যিনি মালিক তিনি তার কোম্পানি ও কাজকে একভাবে দেখবেন। যিনি বা যারা কর্মী তারা অন্যভাবে দেখবেন।

এজেন্টরা বেশি হলে কাজের কোয়ালিটি খারাপ হবে। ফলে বিগ কোম্পানি, যেখানে এজেন্টের আধিক্য সেখানে বুরোক্রেসি থাকে, কারণ এখানেই এজেন্টের স্বার্থ। ফলত সার্ভিসের মান খারাপ হয়। অন্যদিকে যেখানে ছোট ফার্মে মালিকের সরাসরি ইনভলবমেন্ট থাকে, সেখানে সেবার মান ভালো হয়।

লাইফের সব ক্ষেত্রে এই আইডিয়াটি দিয়ে ভাবা যায়। ধরা যাক মাতা পিটার সাথে কোন সন্তানের সম্পর্ক। সন্তান নিজেরে এই সম্পর্কে এজেন্ট ভাবলে তিনি মনে মনে আশা করবেন যেন মা বাপ তার জন্য অনেক কিছু করেন। না করলে মন খারাপ করবেন। তিনি নিজে এগিয়ে গিয়ে কিছু করতে চাইবেন না। তার নিজের মা বাবার প্রতি কর্তব্যগুলিকে অহেতুক বোঝা ভাববেন, যেহেতু সম্পর্কে তিনি নিজেকে মালিক বা প্রিন্সিপল হিসেবে দেখছেন না নিজেকে। আর প্রিন্সিপল হিসেবে দেখলে তিনি নিজে দায়িত্ব নিবেন।

৯৯। রাইটিং ইজ এ থিংকিং প্রসেস

লেখা একটা থিংকিং প্রসেস। চিন্তার টুল। লেখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। বই সিক্রেট লাইফ অব প্রোনাউনস, সাইকোলজিস্ট জেমস প্যানেবেকার

বেশিরভাগ মানুষ মনে করে তারা লেখতে পারে না। কারণ তারা হাই লিটারেচারের লেখার সাথে কি নিজেদের লেখার তুলনা করেন? হাই লিটারেচারকে ধরতে পারেন পিকাসোর আর্টের মত। একজন পিকাসোর মত আঁকতে পারেন না, তার মানে এই না যে কাগজে নিজের ইচ্ছামত ছবি তিনি আঁকতে পারবেন না।

অধিকাংশ মানুষ চ্যাট করতে পারেন। সেই চ্যাটের মেসেজ অপরপক্ষ বুঝতে পারে। তার মানে তারা লেখায় যোগাযোগ করতে সক্ষম।

কিন্তু লেখতে তারা পারেন না, কারণ তারা লেখার সময় ভাবেন আরো সিরিয়াস হয়ে লেখতে হবে, এবং ভাবেন যে তারা আসলে পারেন না লেখতে। এই ভাবনাই তাদের লেখা থেকে দূরে রাখে।

১০০। বাশো’র নীতি

এটার নাম দিয়েছি বাশো’র নীতি।

জাপানের এদো পিরিয়ডের সবচাইতে জনপ্রিয় কবি ছিলেন মাতসুও বাশো।

তিনি বলেছিলেন একবার, ওয়াইজদের পদচিহ্ন অনুসরন করতে যাইও না, বরং তারা যা খুঁজতেছিলেন তা খুঁজো।

ওয়াইজদের পথ ব্লাইন্ডলি অনুসরণ করলে আপনার কোন উপলব্ধি আসবে না। আসবে যখন আপনি বুঝতে চেষ্টা করবেন তারা কী খুঁজতেছিলেন, এবং তা আপনিও খুঁজতে যাবেন।

১০১।  ক্রাইসিস

ক্রাইসিসের মধ্য দিয়েই মানুষের গ্রোথ হয়।

যেখানে সব কিছু ঠিকঠাক চলে সেখানে গ্রোথ নেই।

বিজ্ঞানীরা বায়োস্ফিয়ার ২ প্রজেক্ট শুরু করলে দেখলেন গাছগুলি বয়প্রাপ্ত হবার আগেই পড়ে যাচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা পেলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছ বাতাসের চাপ পায়, এবং সেই চাপ ট্যাকল দিতে তাদের মধ্যে স্ট্রেস উড তৈরি হয়। যেগুলি পরবর্তীতে বড় গাছের ভার বহন করে। কিন্তু বায়োস্ফিয়ার ২ এর পরিবেশে ঐ বাতাসের চাপ না থাকায় স্ট্রেস উড গ্রো করছে না। তাই পড়ে যাচ্ছে গাছ।

যখন কোন পেইনের সিচুয়েশনে কেউ পড়েন, তার উচিত এর প্রতি কিউরিয়াস হওয়া, কারণ এখানেই কোথাও লুকিয়ে আছে অনেক কিছু, যা সামনের দিনগুলিতে এগিয়ে রাখবে যদি তিনি শিখতে পারেন।

১০২। তুলনার নিয়ম

মানুষ সব কিছু তুলনা করে দেখে। এই তুলনা করে দেখা মানুষের হ্যাপিনেস নষ্টও করে। আপনি নিজের লাইফের সাথে অন্যের লাইফের সাকসেস, সম্পর্ক ইত্যাদি ইত্যাদি তুলনা করেন, এতে আনহ্যাপি হবার জায়গা থাকে।

বিশেষত, এই নিরন্তর শো অফের যুগে। মানুষ কেন এত নিজেরে সুখী দেখায় সোশ্যাল মিডিয়ায়? নদীর পাড়ে বইসা আছে, হাওয়ায় হাওয়ায়? এটা তার সাবকনশাস তুলনা, এবং আপনেও আবার এটা দেইখা তুলনা করেন তার সাথে।

যেহেতু মানুষের ব্রেইন তুলনা করতে করতেই পরিণত হইছে, তাই এটা থেকে বের হওয়া যাবে না। ফলে আপনি এরে একটা “সিস্টেমে” ফেলে দিতে পারেন।

তুলনা করবেন ছোট ছোট বিষয়ে, নিজের একইরকম বিষয়গুলার উন্নতি করতে। যেমন, অমুক এরকম বই পড়ে, এভাবে পড়ে, আর আমি ঐভাবে পড়ি; কোনটা বেটার। অমুকের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, এবং টেকনিকগুলা ছিল এটা, আমার এটা, কোনটা আসলে কাজ করবে। অমুকের এক্সারসাইজগুলা এমন, আমার এমন, কোনটা বেটার।

কিন্তু কখনোই বড় লেভেলে তুলনা করবেন না। যেমন উনার নেট অর্থ এতো আমার এতো। উনি কেরিয়ারে এমনে এমনে লাফাইয়া গেছেন, আমি পারি নাই। ইত্যাদি। এইসব তুলনায় ইম্প্রুভমেন্টের জায়গা থাকে না। বরং এগুলি আনহ্যাপিন ও স্যাড করে তোলে ব্যক্তিকে।

১০৩। লটারী মডেল

ধরা যাক, আমি ১০০০ টাকা দিয়ে একটা লটারি টিকেট কিনলাম। এতে ১ কোটি টাকা পেলাম।

আমি এসে আপনাকে বললাম, কীভাবে আমি ১০০০ টাকা জোগার করেছি। কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিভাবে ঐ জায়গায় গেছি। কিভাবে কিনেছি। আমার লটারির টিকেটের নাম্বার কত।

এইসব জিনিস আমি আপনাকে বললাম।

আপনি ঠিকঠাক অনুসরণ করলেও খুবই হাই চান্স যে আপনি লটারী জিতবেন না।

এই কারণে, যেকোন সফলের উপদেশকে নিজস্ব বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে নিতে হবে।

১০৪। গার্বেজ ইন গার্বেজ আউট

আপনি গার্বেজ খাইতে থাকলে গার্বেজই তৈরি করবেন।

১০৫। ইন্টারনেটে ফিল্টার বাবল

ইন্টারনেটকে ভাবুন একটি সমুদ্র।

আপনি আছেন তিনটা লেয়ারের ফিল্টারকৃত একটা জায়গায়। এটা হতে পারে কুয়ার মত ক্ষুদ্র।

প্রথম ফিল্টার, আপনার বন্ধুবান্ধবদের নিউজফিড ও ব্রাউজার সেটিংস। আপনার বন্ধুবান্ধব আপনি বানান নিজের মতের সাথে মিল রেখেই। ফলত, এই নিউজফিডগুলা আপনারই ভিউ প্রতিফলিত করে কম বেশি।এরপর ব্রাউজারের বুকমার্ক। ব্রাউজার আপনার ব্রাউজিং হ্যাবিট ট্র্যাক করে কিছু জিনিস দেখায়।

দ্বিতীয় ফিল্টার, ভাইরাল নির্বাচকেরা। এরা অনলাইন নিউজ আউটলেট থেকে শুরু করে ফেইসবুকের বেশি ফলোয়ারযুক্ত সেলিব্রেটি এবং ইন্ডিভিজুয়ালরা। এরা কোন ইস্যুতে নিউজ পাইলে তাতে পোস্ট দেন। এই পোস্ট দেয়ার মূল উদ্দেশ্য “প্রতিক্রিয়া” অর্থাৎ লাইক কমেন্ট শেয়ার। ফলত, যদিও ভালো ভাবে ধরলে ধরা যায়, তারা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন অথেনটিক তথ্য দিতে তথাপি তারা তা পারেন না বেশিরভাগ সময়েই। এর কারণ প্রতিক্রিয়ার প্রতি বায়াস, দুই- সবার এই বুদ্ধি, ও স্কিল নাই অথেনটিক তথ্য দেবার। এবং সবার নিউজ সিলেকশনও উৎকৃষ্ট হবে না। এই ফিল্টার প্রথম ফিল্টারের সাথে যুক্ত হয়ে স্ট্রং একটা বাবল তৈরি করে। কারণ আমরা যেসব “ভাইরাল নির্বাচকবৃন্দকে” পাই, এগুলি আমাদের বন্ধুদের মাধ্যমেই।

তৃতীয় ফিল্টার, (যেটি নিয়ে আগে লিখেছিলাম)  সার্চ এঞ্জিন সোশ্যালের (গুগল, ইউটিউব, টুইটার)  এলগোরিদম। এগুলি আপনার অবস্থান, পছন্দ, ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে আপনাকে কন্টেন্ট সাজেশন দেয়, এবং সার্চ রেজাল্ট দেয়।

এই তিন ফিল্টারের তৈরি বাবলে আপনি আপনার ধ্যান ধারণাতেই আটকে থাকেন। ফলে কূপমণ্ডূকতা বাড়ে। সাথে বাড়ে কনফিডেন্স। কারণ আপনি অনেক কিছু পড়ছেন! আর কূপমণ্ডুকতার সাথে কনফিডেন্স মেশালে আপনি পান ভয়ানক এক গর্দভ!

এই জিনিস থেকে বের হবার প্রথম ধাপ,  এই তিন ফিল্টারের যে স্ট্রং বাবল আছে তা সচেতনভাবে বুঝা।  দ্বিতীয়ত বই, এবং এই লেখা বা এই সাইটের মত সাইটগুলির লেখা পড়া। যেগুলি পড়তে টাইম লাগে, কিন্তু কাজের। আপনাকে বাবল থেকে বের হবার পথ এরা দেখায়। বের হওয়া বলতে নিজের বাবল নিজেই তৈরি করা। 

১০৬। মিডিয়াম ইজ দ্য মেসেজ

মিডিয়া থিওরিস্ট মার্শাল ম্যাকলুহানের একটি কথা সিম্পলি এভাবে বলা যায়। কোন মিডিয়াম বা মাধ্যমে মেসেজটি দেয়া হচ্ছে, তার উপর মেসেজটির চরিত্র নির্ভর করে।

প্রিন্টের টেক্সট, ওয়েবের টেক্সট(এই লেখা যেখানে আমি লিংক দ্বারা অন্য অনেক লেখা যুক্ত করতে পেরেছি), ভিডিওর কন্টেন্ট, গ্রাফিক্যাল পোস্টারের কন্টেন্ট এক না। একই মেসেজ চার জায়গায় দেয়া হলে, মিডিয়ামের ভিন্নতা হেতু চার ধরণের মিনিংও তৈরি করতে পারে।

এই আইডিয়া কেবল মেসেজ নয়, মেসেজ বুঝতে মিডিয়ামটি কী তার উপরও চিন্তা সম্প্রসারিত করতে বলে। খুবই ইফেক্টিভ।

১০৭। বিয়িং স্মার্ট ও বিয়িং রাইট

ঠিক তথা কোন অবস্থানে রাইট হবার চাইতে স্মার্ট তথা বুদ্ধিমান হওয়া বেটার।

কারণ স্মার্ট হওয়া একটা সিস্টেম ও প্রসেস, যা আপনাকে একই ধরণের ও ভিন্ন ধরণের নানা সমস্যায় ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হেল্প করবে। অন্যদিকে এক জিনিসে রাইট হওয়া মানে, আপনি আরো সিচুয়েশনে রাইট হতে পারবেন এমন নয়।

মানুষ ভুলভাবে রাইট হবার দিকে মনযোগ দেয়। কিন্তু স্মার্ট ওয়ে হলো স্মার্ট হবার দিকে মনযোগ দেয়া।

১০৮। জিরো সাম বায়াস

মানুষ সাধারণত বেশিরভাগ সিচুয়েশনকে দেখে “এখানে একজনের লাভ হবে আরেকজনের ক্ষতি হবে” এই মডেলে।

একে বলে জিরো সাম বায়াস।

কিন্তু লাইফের সব সিচুয়েশন জিরো সাম না।

যেমন এই লেখা পড়ে আপনার লাভ হচ্ছে। লেখে আমার সময় যাচ্ছে, শ্রম যাচ্ছে ঠিক আছে। কিন্তু আমার আনন্দ হচ্ছে। মানুষ বেশি পড়লে বেশি হবে, পরিচিতি হবে। ফলে আমারো লাভ হচ্ছে। এখানে আমাদের কারো লস হচ্ছে না। আপনি এটির লিংক ফেইসবুকে শেয়ার করলেও কারো লস হবে না।

এইরকম অনেক সিচুয়েশন আছে, যেগুলি বিষয়ে আপনার স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া আসে একে জিরো সাম ভেবে। কিন্তু ভাবলে দেখবেন এগুলি প্লাস সাম বা উইন উইন।

১০৯। জুয়াড়ির বিভ্রান্তি

আপনি ছক্কার ঘুটি মারলেন চারবার, চারবারই ছয় উঠলো। এতে পঞ্চমবারে ছয় উঠার সম্ভাব্যতা প্রথমবার ঘুটি মারার সময় যা ছিল (১/৬) এর চেয়ে কমে না। একই থাকে। কারণ প্রতিটা র‍্যানডম ঘটনা স্বাধীন।

১১০। নেট পজিটিভ- দাঁড়িপাল্লার হিসাব

আমার মনে হয়, একটা হিসাব কল্পনা করা যায়। একজন ব্যক্তির বয়স আশি বছর। তিনি মারা গেছেন। দাঁড়িপাল্লায় তার গুনা ও নেকি বসাইয়া দেখা গেল তিনি নেকি করছেন বিশ গ্রাম, আর গুনা করছেন দুই কেজি।

গুনা ও নেকিগুলা যেহেতু একই তীব্রতার না, তাই কাটাকাটি কইরা পাওয়া গেল তার ঝুলিতে ৫ গ্রাম গুনা।

অর্থাৎ, লাইফের হিসাবে তুনি গুনাগার বান্দা।

এই সিম্পল চিন্তা মানুষের ভেতরে আছে। মানুষ ভাবে এইভাবেই তার হিসাব হবে।

এটা যদি কেউ মাথায় রাখে, এবং দাঁড়িপাল্লার হিসাবে নিজের নেকিরে বাড়াইতে চায় তাইলে তার জন্য সবচাইতে ভালো পন্থা হলো আমি মনে করি, যখনই সুযোগ পায় তখনই ভালো করা। মানুষের উপকার করা।

কারণ, এখন আমি জানি আমার এই ক্ষমতা আছে, মুড আছে, সময় আছে আরেকজনের একটা উপকার করার। কাল এটা না থাকতে পারে। কাল আমি একটা ট্রাবলে পড়ে যেতে পারি, হয়ত সেখানে একটা খারাপ কাজও করতে হতে পারে।

তাই, অলওয়েজ উচিত অন্যের ভালো করার তালে থাকা।

এটা ওই ধার্মিক গুনা নেকি বা পরকালে মেওয়া লাভের আশায় না। জাস্ট মানুষ হিসাবে আমার লাইফে তো ভালো জিনিসের আধিক্য এইটা আমি চাই। আপনেও চান। কেউ তো চায় না যে তার লাইফ একটা খারাপিতে ভরা লাইফ হোক, যেটা জেলাসি, মানুষের ক্ষতি করা, অকৃতজ্ঞতা ও মূর্খতায় পূর্ণ।

তাই, লং রানে আমি ভালো’র আধিক্য যদি চাই, তাহলে যখনই আমার সুযোগ আছে অন্যের উপকার করার, তখনই তা করা উচিত।

এইভাবে কেউ ভাবলে তিনি দেখতে পারবেন, তিনি চাইলে অনেক ভালোই করতে পারেন।

বাট, তিনি করতেছেন না। কারণ আমরা বড় ভালোর আশায় থাকি। বড় হাসপাতাল দিব। মানুষ বাহবা দিবে, অনেক লোক চিকিৎসা নিবে। ভালো এটা। কিন্তু দূরের মামলা।

এখনই হয়ত আমি একজনের হেল্প করতে পারি তার জব সার্চে, তারে রেফার করে দিয়ে, তারে জানতে হেল্প করে ইত্যাদি নানা ভাবে। লাইফ ইজ অলওয়েজ নাও, এখনই, এটা আমি জানি, আপনিও জানেন, বাট মনে থাকে না।

১১২। অপরচুনিটি কস্ট

এই লেখা পড়ছেন আপনি, তার মানে একই সময়ে আরেকটি কাজ করতে পারছেন না। আমরা যা কিছু করি প্রায় সবই এইরকম। একটা করলে আরেকটা না করতে হয়। তাই করার সময় হিসাব রাখা জরুরী, অপশনগুলার মধ্যে কোনটা আমার জন্য বেটার।

১১৩। বাইক শেড ইফেক্ট

কোন একটি প্রজেক্টে বা টপিকে মানুষেরা সবচাইতে ফালতু জিনিসগুলা নিয়ে আলোচনায় সময় ব্যয় করবে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি এড়িয়ে গিয়ে।

ম্যানেজমেন্ট ও সমাজের আলোচনা বুঝার ক্ষেত্রে দরকারি মডেল।

১১৪। প্রতিভা, জিনিয়াস ও সমাজ

সোসাইটির সিস্টেম হচ্ছে, এট বেস্ট, প্রতিভারে নারচার করার। কিন্তু জিনিয়াসরে কালটিভেট করা সোসাইটির সিস্টেম না। 

প্রতিভা টার্গেটে ঠিকমত হিট করতে পারবে ভালভাবে ট্রেইন হলে। আর জিনিয়াস এমন টার্গেটই বের করে যা অন্যরা দেখতে পায় না। 

এই দুইটা হচ্ছে দুই ধরণের জিনিশ। 

সোসাইটি প্রথমটা একরকম বুঝে। দ্বিতীয়টা বুঝে না। কারণ দ্বিতীয়টা প্রেডিক্ট করা যায় না।

১১৫। গলের সূত্র

সাধারণত কোন সিস্টেম সিম্পল হিসেবে শুরু হয়। এটি তখন একটা সমস্যা সমাধান করে। পরে সমস্যার আরও নানাদিক বের হয়, সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বদলে যায়, আর উক্ত সিস্টেম জটিল হয়ে পড়ে। তাই, যখন দেখেন কোন জটিল সিস্টেম কাজ করছে, তাহলে ভেবে নিবেন না এটা জটিল হিসেবেই শুরু হয়েছিল। এবং যখন কোন সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন সিস্টেমের কথা ভাববেন, তখন সিম্পল হিসেবেই ভাবুন।

১১৬। তাপগতিবিদ্যার ২য়  সূত্র

দুনিয়া বিশৃঙ্খল হতে চায়। 

১১৭। লাইফ ইজ  লং গ্যামা।

এর অর্থ হইল, লাইফের গ্রোথ হয় নন লিনিয়ার ওয়েতে। গ্যামা মানে ভলাটিলিটি, ক্যাওস। অন এভারেজ, লাইফ ভলাটিলিটি, ভ্যারিয়াবিলিটি, ক্যাওস থেকে বেনিফিটেড হয়। যদিও, ইন্ডিভিজুয়াল ব্যক্তির ক্ষতি হতে পারে।

যেমন, কোভিড ক্রাইসিসের ফলে এভারেজ লাইফের (তথা মানবজাতি) বেটার হবে, যদিও এতে অনেক ইন্ডিভিজুয়ালের ক্ষতি হয়েছে, হচ্ছে।

ইমপ্লিকেশন, সব সময় লিনিয়ার ইনপুটের ফল লিনিয়ার হবে, এমন ভাবলে ভুল। এটা হয় না। এবং গ্রোথের জন্য এটা রাইট ওয়ে না। বরং, লিনিয়ার ইনপুটের ফল যেখানে এক্সপোনেনশিয়াল হয়, সেই জায়গাই ব্যবধান গড়ে দেয়।

১১৮। জোনাহ কমপ্লেক্স

বাইবেলে নবী জোনাহরে ঈশ্বর বললেন, যাও নিনেভেহ তে গিয়া আমার বানী প্রচার করো।  

কিন্তু জোনাহ এতে ভয় পাইলেন। তিনি কিভাবে এত বড় দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি পালাইতে চেষ্টা করলেন। দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে তিমি মাছের পেটে রইলেন। এরপর একসময় সেই বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়ে নিনেভেহতে গেলেন।  

জোনাহ যেমন তার দায়িত্ব এড়াইতে চাইছিলেন, তার সর্বোচ্চ পটেনশিয়ালে যাইতে ভয় পাইছিলেন, তেমনি এটা মানুষের ক্ষেত্রেও হয়।   সাইকোলজিস্ট আব্রাহাম মসলো এই টার্ম পপুলার করছেন, জোনাহ কমপ্লেক্স।

যেখানে মানুষ তার সর্বোচ্চ পটেনশিয়াল, গ্রেটনেসরে ভয় পায়, তাই তার প্রতিভার ব্যবহার করে না, নিজের ডেস্টিনিরে এড়াইতে চায়, নিজের সফলতারে ভয় পায়। ফলে সেলফ একচুয়ালাইজেশন তার বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।

১১৯। চিপলা ম্যাট্রিক্স

ইতালিয়ান ইকোনমিক হিস্টরিয়ান চিপলা এই ম্যাট্রিক্সটি আনেন, একে বলে চিপোলা ম্যাট্রিক্স।

স্টুপিড

 তিনি দেখান (১৯৭৬) যে, স্টুপিড মানুষেরা হচ্ছে দুনিয়ার জন্য সবচাইতে ক্ষতিকর। বাম দিকের কোনায় দেখেন।  

  • বুদ্ধিমান লোক – তার নিজের লাভ করে + অন্যের লাভ করে  
  • খারাপ লোক বা ডাকাত ধরা যাক – নিজের লাভ করে কিন্তু অন্যের ক্ষতি করে  
  • দূর্বল বা হেল্পলেস মানুষ – নিজের ক্ষতি করে কিন্তু অন্যের লাভ হয় এতে  
  • আর স্টুপিডেরা – নিজের ক্ষতি করে, অন্যেরও ক্ষতি করে  

তিনি স্টুপিডিটির পাঁচ মৌলিক সূত্র দেন।  

১। চারপাশে স্টুপিড মানুষের সংখ্যাকে মানুষ সবসময় ও অবশ্যম্ভাবী ভাবে আন্ডার এস্টিমেট করে। অর্থাৎ মনে করে তারা কম আছে, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।  

২। কোন মানুষের পেশা, শিক্ষা দীক্ষা বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও তার স্টুপিড হবার সম্ভাবনা স্বাধীন। অর্থাৎ, সে কি করে, বা কেমন এটা দ্বারা স্টুপিড হবার সম্ভাবনা প্রভাবিত নয়। (এই কারণে আমরা যেকোন পেশা ও শিক্ষার স্টুপিড লোক দেখোতে পারি।)  

৩। একজন স্টুপিড অন্য কোন ব্যক্তি বা গ্রুপের ক্ষতি করে নিজের কোন লাভ না করে, ইভেন নিজের লস করে।  

৪। যারা স্টুপিড না তারা সব সময় স্টুপিডদের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাকে আন্ডার এস্টিমেট করে। যারা স্টুপিড না তারা ভুলে যায় যে, যেকোন সময়ে যেকোন জায়গায় ও যেকোন পরিস্থিতিতে কোন স্টুপিডের সাথে ইন্টারেকশন বা সামাজিকতা কস্টলি মিস্টেক বা ক্ষতিকর ভুল ডেকে আনে।  

৫। স্টুপিড মানুষেরা মানুষের মধ্যে সবচাইতে বিপদজনক।  

এই পাঁচ সূত্র আমি মনে রাখার চেষ্টা করি। স্টুপিডের বাংলায় মূর্খ লেখি, কিন্তু এই জায়গায় স্টুপিডই লেখলাম যাতে কেউ অশিক্ষিত অর্থে মূর্খ না বুঝেন। মূর্খ বলতে স্টুপিডই বুঝাই।

১২০। উন্নতি বা প্রগ্রেসের দিক খেয়াল করুন

ভবিষ্যতে কী হবে আমরা জানি না। কারণ নানা ভ্যারিয়েবল কাজ করে।

কিন্তু উন্নতির দিক বা গতিপথ খেয়াল করে আন্দাজ করা যেতে পারে ভবিষ্যতে কী হতে পারে।

নিচের ছবিটি দেখুন,

কম্পিউটার যত উন্নত হয়েছে তত ছোট হয়েছে আকারে এবং মানুষের কাছাকাছি এসেছে।

এই গতিপথ খেয়াল করলে, ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেইসের পক্ষে আন্দাজ শক্ত হয়।

১২১। মাটির নিচের তেল

মাটির নিচে তেল গ্যাস আছে, এটা জানলে আপনার কোন লাভ নেই যদি আপনি সেগুলি তুলতে/রিফাইন করতে, ব্যবহার করতে না পারেন। একইভাবে জ্ঞান, তথ্য বই বা কোন লেখায় আছে, জানলে লাভ নেই, যদি না আপনার ব্রেইন তা উপলব্ধি করতে পারে, কাজে লাগাতে পারে। লেখা হচ্ছে মাধ্যম, জ্ঞানের ভ্যালু লেখকের ব্রেইন থেকে পাঠকের ব্রেইনে। নাভালের কাছ থেকে পাওয়া আরেকটা আইডিয়া।

১২২। অতি বিশাল সংখ্যার নীতি

অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে দেখলে মনে রাখবেন, স্যাম্পল সাইজ বড় হলে যেকোন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে।

যেমন, একজন মানুষ ন্যাংটা হয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাবে, এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি এক মিলিয়নে একবার হয়, তাহলে মনে হয় যে, এটি ঘটা প্রায় অসম্ভব।

কিন্তু ঢাকার জনসংখ্যা ৮.৯ মিলিয়ন, সেই হিশাবে ঢাকাতেই দিনে ৮ বার এই ঘটনা ঘটতে পারে।

আপডেট হবে…

করোনা ভাইরাসের এই সময়ে দরকার না হলে ঘরে থাকুন। সোশ্যাল গ্যাদারিং এড়িয়ে চলুন। মাস্ক পরিধান করুন। অন্যদেরও এটি করতে উৎসাহিত করুন।