মুরাদুল ইসলাম » ব্লগ » সহিংসতার ভূমিকাঃ সহিংসতা কী এবং কেন?

সহিংসতার ভূমিকাঃ সহিংসতা কী এবং কেন?

সহিংসতা 

বাইবেলের বুক অব জেনেসিসে আছে ঈশ্বর এডাম এবং ঈভরে বানাইয়া, তাদের বললেন, তোমরা ঐ গাছের ফল খাইও না, ঐদিকে যাইও না। কিন্তু কুচক্রী সর্পের প্ররোচনায় ঈভ সেই ফল খান ও এডামরে খাওয়ান। এই জ্ঞানবৃক্ষের ফল খাওয়ারে প্রথম সহিংসতা ধরা যায়, বিবিলিকাল দিক থেকে দুনিয়ারে দেখলে।

এইটা সহিংসতা কীরূপে এই প্রশ্ন এবার আসতে। এই নিছক ফল খাওয়া সহিংসতা হয় যেহেতু এটি একটা বিদ্যমান শৃঙ্খলারে বিশৃঙ্খল করছে। অথরিটির আদেশ অমান্য করছে। এবং এর ফলেই ঈশ্বর এডাম ও ঈভরে শাস্তি দেন, ইডেনের গার্ডেন থেকে বিতাড়িত করেন।

তবে একটা শৃঙ্খলারে বিশৃঙ্খল করা তখনই সহিংসতা হয় বা হতে পারে যখন বিশৃঙ্খল হবার আগ মুহুর্তের অবস্থাটি আসলেই শৃঙ্খল কিছু হয়ে থাকে? কিন্তু এমন কি হয়, কোন সময়, কোন কাল কি কখনো একশোভাগ শৃঙ্খল হতে পারে?

সহিংসতার একটা ব্যাপার হলো যখন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে সহিংস আচরণ করেন, তখন অপর ব্যক্তিটিকে তিনি আর মানুষ জ্ঞাণ করেন না, বরং একটি অবজেক্ট হিসেবে জ্ঞাণ করেন। এছাড়াও তিনি তার স্বাধীনভাবে নির্বাচণ করার ক্ষমতাকে রহিত করেন।

যেমন একজন পরিচালক যখন তার অভিনেতাকে নির্দিষ্ট কিছু করতে বলেন, তখন অভিনেতাটির আরো অনেক কিছু করার স্বাধীনতাকে তিনি হরণ করেন। যেমন, পরিচালক বললেন দাঁত বের করে হাসতে। অভিনেতা দাঁত বের করে, দাঁত না বের করে, দাঁত অল্প বের করে, অথবা কেবল হাসির আবহ ফুটিয়ে তুলে, ইত্যাদি নানাভাবে হাসতে পারতেন। এই স্বাধীনতা তার ছিল। কিন্তু পরিচালকের দাঁত বের করে হাসার নির্দেশের ফলে ঐসব স্বাধীনতা তাকে বর্জন করতে হয়েছে। পরিচালকের এই কাজ, একরকম সহিংসতা। এই ঘটনাটি আপাত দৃষ্টিতে সহিংস বলে মনে না হলে চিন্তা করুন আপনি একদিন রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন আর একটি লোক এসে পিস্তল ঠেকিয়ে বলল যা আছে দিয়ে দিন। আপনার স্বাধীনতা সে হরণ করল হুমকির মাধ্যমে। আপনি তাকে মানিব্যাগ ইত্যাদি দিলেন বা দিতে বাধ্য হলেন। এটা সহিংসতা।

সহিংসতা নিয়ে এই ধরণের চিন্তা আমি পাই আমেরিকান থিয়েটার এবং অপেরা ডিরেক্টর এন বোগার্টের অসাধারণ বই এ ডিরেক্টর প্রিপেয়ার্সে। তার সহিংসতা বিষয়ক চিন্তাটি শিল্প কেন্দ্রিক, এবং তার মতে শিল্প মানেই হচ্ছে সহিংসতা। এক ধরণের সহিংস আচরণের মাধ্যমে শিল্পী তার শিল্প তৈরী করেন, একজন চিত্রশিল্পীর ক্ষেত্রে খোলা ক্যানভাসে প্রথম তুলির আঁচড় দেয়াটাই এখানে হয়ে উঠে সহিংসতা।

শিল্পের দৃষ্টিতে দেখতে ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভালো লাগে, সেইজন্য এন বোগার্টের সহিংসতা বিষয়ক চিন্তাটি আমাকে সবচাইতে বেশী আগ্রহ উদ্দীপক মনে হয়েছে।

এছাড়াও স্লোভানিয়ান দার্শনিক, কালচারাল ক্রিটিক যখন সহিংসতাকে ভাগ করেন, এবং সাবজেক্টিভ ও অবজেক্টিভ ভায়োলেন্স নামে দুই ধরণের সহিংসতার কথা বলেন তখন সহিংসতা বিষয়ক চিন্তাটি ভিন্ন মাত্রা পায়।

আমি আমার প্রথম শুরু করা বিবিলিকাল গল্পে ফিরে যাই। এখানে ফল খাওয়ার ঘটনাটিকে সহিংসতা হিসেবে ধরেছি। কারণ বিদ্যমান শৃঙ্খলাকে সে মানেনি, বিশৃঙ্খল করেছে। অথরিটির আইন মানে নি। কিন্তু দ্রষ্টব্য এই সহিংসতার বাইরে আরেকটি লুকানো সহিংসতা শুরু থেকেই ছিল এই গল্পে। তা হলো অথরিটি কর্তৃক আরোপিত সহিংসতা। বাইবেলের ঈশ্বর যখন এডাম ও ঈভকে ফল খেতে বারণ করেন, তখন একজন ডিরেক্টরের মতই তিনি তার তৈরী দুই চরিত্রের আচরণ সীমাবদ্ধ করে দেন। এটা তার সহিংসতা। আবার এই সহিংসতাটাই মূল সিস্টেম বা ব্যবস্থাটির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মূল সিস্টেমের শৃঙ্খলা এর উপরই ভিত্তি করে তৈরী।

জিজেকের সহিংসতা বিষয়ক চিন্তাটি প্রায় এই রকম। তিনি বাহ্যিক সহিংসতাকে সাবজেক্টিভে রাখেন, আর অথরিটি সহিংসতা, যা সিস্টেমের সাথে এমনভাবে জড়িত যে আমাদের তা সহিংসতাই মনে হয় না, তাকে বলেন অবজেক্টিভ ভায়োলেন্স।

সহিংসতা কী তা আসলে বুঝা সহজ নয়। কারণ হয়ত এখনো মানুষ সহিংসতা কী তা জানে না। সহিংসতার বিভিন্ন ধরণ নিয়ে আলোচনা করা অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও সহিংসতার সংজ্ঞা দেয়া অসম্ভব।

ইচ্ছাকৃতভাবে শারিরীক শক্তি, ক্ষমতা ব্যবহার করে কারো ক্ষতি করা বা ক্ষতি করার হুমকি দেয়াকে সহিংসতা বলে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমন সংজ্ঞাও সমস্যাপূর্ণ। কারণ সহিংসতা অনেক সময় পরোক্ষভাবেও হতে পারে। যেমন, কোন একদল সেনাবাহিনী একটি জলাধার ধ্বংস করলো, এবং এর ফলে পানির অভাবে মারা গেল বহু মানুষ। সেনাবাহিনীর এই আচরণটি এখানে সহিংসতা হয়, যদি তারা হয়ত ভিন্ন কারণে জলাধারটি ধ্বংস করে ছিল। ইচ্ছাকৃতভাবে লোকদের জলাভাবে মারতে চায় নি।

কোনটা সহিংসতা আর কোনটা সহিংসতা নয় তাও আবার কালে কালে পরিবর্তীত হতে পারে। যেমন ইউরোপে আঠারো শতকের আগে প্রাণীদের উপর করা নির্যাতন সহিংসতা হিসেবে ধরা হতো না। এছাড়া মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতাকেও সহিংসতা ধরা হতো না একসময়।

মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতা হচ্ছে বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ম্যানিপুলেশন করে একজনের ক্ষতি করা। এভাবে মারাত্মক ক্ষতি করা খুব সম্ভব। এইখানে গ্যাসলাইট ফিল্মটির কথা উল্লেখ করা যায়।

গ্যাসলাইট একটি থ্রিলার ড্রামা, ১৯৪৪ সালের। ফিল্মের শুরুতে একটা খুন হয়। একজন বিখ্যাত অপেরা গায়িকা খুন হন লন্ডনে তার বাড়িতে। তিনি তার বোনের মেয়ে পলা’কে সাথে নিয়ে থাকতেন। তিনি খুন হবার পর পলা চলে যান ইতালি। সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় এক ভদ্রলোকের। পরিচয় পরবর্তী প্রেম। অতঃপর বিয়ে। বিয়ের পর স্বামীর অনুরোধে দুইজন ফিরে আসেন লন্ডনে, সেই বাড়িতে যেখানে খুনটা হইছিলেন। এই বাড়ি নিয়ে ভয় কাজ করত পলার মনে, এখানেই তিনি তার প্রিয় খালার মৃতদেহ দেখেছিলেন। কেউ যেন তাকে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।

এই বাড়িতে উঠে আসার পরে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে পলার সাথে। পলার আস্তে আস্তে মনে হতে থাকে তার মাথা ঠিক কাজ করছে না, কিন্তু সেসবের পেছনে ছিল তার স্বামীর হাত। তার স্বামী বিভিন্ন উপায়ে পলাকে বুঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল যে সে প্রায় উন্মাদ হয়ে গেছে। এই ধরণের সাইকোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশন এক ধরণের সহিংসতা।

পলার স্বামী এই সাইকোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে পলাকে প্রায় উন্মাদ করে তুলেছিল কারণ তার উদ্দেশ্য ছিল এই বাড়িতে মৃত অপেরা গায়িকার রেখে যাওয়া মূল্যবান কিছু পাথর বা অলঙ্কার বের করে নেয়া। এবং এগুলির জন্য এই ব্যক্তিই ঐ গায়িকাকে খুন করেছিল আগে।

ইতিহাসবিদ জোয়ান্না বউর্কের কথায় কী যে সহিংসতা তা সবসময়ই বিতর্কিত, সব সময়ই রাজনৈতিক।

আপনি আক্রান্তকারী না আক্রান্ত ব্যক্তি তার উপরও নির্ভর করে কোন ঘটনা সহিংসতা হিসেবে বিবেচীত হবে কি না তা।

এছাড়া সহিংসতা সব সময় ব্যক্তির উপরেই হয় এমন নয়। ব্যাক্তির সম্পত্তির উপরও হতে পারে।

পুকুরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, ফসল নষ্ট করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা এমন খবর আমরা প্রায়ই দেখা যায় পত্রিকায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহিংসতা বিষয়ক বিস্তারিত সংজ্ঞাটি নিম্নরূপঃ

 

ইচ্ছাকৃতভাবে শারিরীক শক্তি বা ক্ষমতার ব্যবহার করে হুমকি দেয়া বা কোন কাজ করা,

 

১। নিজের বিরুদ্ধে

২। অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে

৩। কোন গ্রুপ বা কম্যুনিটির বিরুদ্ধে

 

যার ফলে কোন ইনজুরি, মৃত্যু, মানসিক ক্ষতি, উন্নতিতে বাঁধা (maldevelopment), বঞ্চনা হয় বা হওয়ার তীব্র সম্ভাবনা তৈরী হয়, তাই সহিংসতা।

 

ভায়োলেন্সের সংজ্ঞা নিয়ে যেহেতু স্কলারেরা একমত না, তাই এর ব্যাপ্তী অনেক।শারিরীক ক্ষতির বাইরের ক্ষতিও বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে ভায়োলেন্সের ভেতরে এখন পড়ে। যেমন পরিবেশের ক্ষতি।

 

 

কেন মানুষ সহিংস

 

মানুষ সহিংস এই কারণে যে তাকে তার সমগোত্রীয়দের সাথে খাদ্য এবং পুনরোৎপাদনের জন্য সঙ্গী প্রাপ্তির জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। সেই যুদ্ধ নানারূপে এখনো বিদ্যমান আছে। মানুষ তার টিকে থাকার তাড়ণাতেই এই যুদ্ধে লিপ্ত হয়, এবং এর ফলেই তার মধ্যে সহিংসতার উদ্ভভ। এই কারণেই মানুষের জীনের মধ্যেই রয়েছে সহিংসতা। বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এভাবে দেখা যেতে পারে বিষয়টি।

একসময় মনে করা হতো প্রাগৈতিহাসিক কালের মানুষেরা অর্থাৎ, শিকার-সংগ্রহ সমাজের মানুষেরা সহিংস ছিল না। সহিংসতা শুরু হয়েছে কৃষিভিত্তিক সমাজ তৈরী হবার পরে। কিন্তু নৃতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে এই ধারণা এখন আর নাই। ১৯৯৬ সালে লরেন্স কেলি তার ওয়ার বিফোর সিভিলাইজেশনে যৌক্তিকভাবে দেখিয়ে দেন যে প্রাগৈতিহাসিক সমাজে সহিংসতা ছিল।

Strategies portrayed in expressions of violence: a & c) Cova Remigia (Gasulla, Castellón) (Porcar Ripollés et al. 1935); b) El Cerrao (River Martín, Teruel) (Andreu et al.1982); d) Les Dogues (Porcar 1953); e) Cañada de la Cruz (River Segura, Jaén) (Soria et al. 2012).

From López-Montalvo, Esther. 2015. “Violence in Neolithic Iberia: New Readings of Levantine Rock Art.” Antiquity 89 (344). Cambridge University Press: 309–27. doi:10.15184/aqy.2014.12.

সান লোকজন তীর ধনুক নিয়ে এনগুনি লোকদের আক্রমণ ঠেকাচ্ছে। এটি কপি করেছেন প্যাট্রিসিয়া ভিনিকম্ব। কুয়াযুলু-নাতাল, সাউথ আফ্রিকার সৌজন্যে প্রাপ্ত ছবি।

 

লাঠি হাতে যুদ্ধ। প্যাট্রিসিয়া ভিনিকম্ব কপি করেছেন। কোয়াযুলু-নাতাল, সাউথ আফ্রিকার সৌজন্যে প্রাপ্ত ছবি।

 

প্রাগৈতিহাসিক কালে মানুষ সহিংস ছিল এটা ঠিক, কিন্তু পুরনো যেসব নিদর্শন পাওয়া যায় সেগুলি থেকে আসলে নিশ্চিত হবার উপায় নেই যুদ্ধে প্রাণ গেছে এদের না কোন দূর্ঘটনায়। সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় অবস্থিত সানদালজা স্পটে কৃষিবিপ্লবের আগের সময়কালে (প্রায় ১০,০০০ বিসিইতে)  ২৯ জন মানুষের অবশেষ পাওয়া গেছে যাদের খুলি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।

জেনেটিক বা বিবর্তনগত কারণের বাইরে মনে করা হয় সংস্কৃতির মাধ্যমেই সহিংসতা মাত্রা পায়।

জিরার্দিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা হলো মানুষের আকাঙ্খা অন্য মানুষের আকাঙ্খাকে অনুকরণ করে তৈরী হয়। এই অনুকরণ প্রক্রিয়ার ফলে একই ধরণের লোকদের মধ্যে একই ধরণের বস্তুর প্রতি আকাঙ্খা তৈরী হয়। ফলে তাদের মধ্যে তৈরী হয় তীব্র প্রতিযোগীতা।

এই প্রতিযোগীতার ফলে সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয়। অস্থিরতা থেকে বাঁচতে, সমাজে একতা আনতে, ঐ সমাজের লোকজন কোন এক ব্যক্তি মিথ্যা দোষের অপবাদ দিয়ে সবাই মিলে হত্যা করে।

এই হত্যার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ফিরে আসে। এবং এই ঘটনার স্মরণে ঐ মানুষের মানুষ বলিদানের প্রথা প্রবর্তন করে। বার বার সমাজে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। এভাবে একটি সহিংসতার মাধ্যমে সমাজ তৈরী হতে থাকে, এবং এভাবেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা।

আবার মার্শাল ম্যাকলুহানের কথা হলো, মানুষ সহিংসতার মাধ্যমে তার আত্মপরিচয় খুঁজে। সব ধরণের সহিংসতাই হচ্ছে মানুষের নিজের পরিচয় খোঁজা। কেউ যখন একটা দলে থাকে, তার নিজের আলাদা কোন পরিচয় থাকে না, তখন তার ভেতরে আত্মপরিচয়ের একটা সংকট তৈরী হয়। একই কথা জিরার্দের অনুকরণ তত্ত্বও বলে, যখন সমাজে মানুষদের অবস্থা হয় একইরকম তখন তাদের মধ্যে সংকটটা হয় তীব্র কারণ তাদের আকাঙ্খিত বস্তুগুলি তখন হয় একই। ম্যাকলুহানের কথা, একজন লোক তখন সহিংস আচরণ করার তাড়না অনুভব করে এটা বুঝাতে যে সে একজন কেউ, তার পরিচয় আছে।

 

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

×
গুরুত্বপূর্ণ
Scroll to Top
বই মডেলিং